শরীরের কোথাও কেটে গেলে বা ছড়ে গেলে, কিছু ক্ষণ পরে কাটা জায়গার রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ক্ষত গভীর হলে একটানা রক্তপাত হয় বটে, তবে তা-ও কিছু সময়ে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এমনও হয় যে, রক্ত পড়া বন্ধই হচ্ছে না। শরীরের ভিতরেও রক্তক্ষরণ চলতে থাকে, যা প্রাণসংশয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে। আবার অস্থিসন্ধি বা মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তক্ষরণ হওয়া মানে তা আরও বিপজ্জনক। আচমকা স্ট্রোক হতে পারে বা রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন। এমন রোগকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে হিমোফিলিয়া, যাকে বিরল রোগের পর্যায়েই ফেলা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই রক্ত জমাট না বাঁধার অসুখ মহিলাদের চেয়ে পুরুষদেরই বেশি হয়। কেন হয়, সে নিয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন গবেষকেরা।
হিমোফিলিয়া কেমন অসুখ?
শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য কিছু প্রোটিন থাকে। যদি সেই সব প্রোটিনের ঘাটতি হয়, তখন রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। ফলে সামান্য আঘাতেও রক্ত পড়া বন্ধ হয় না। কেবল শরীরের বাইরে নয়, শরীরের ভিতরেও নানা অঙ্গে এই রক্তক্ষরণ চলতে থাকে যা ‘মাল্টিঅর্গ্যান ফেলিয়োর’-এর দিকে নিয়ে যায় রোগীকে। একে বলে ‘রেড ব্লাড ডিজ়অর্ডার’।
আরও পড়ুন:
রক্ত জমাট বাঁধার জন্য ১ থেকে ১২ ফ্যাক্টর প্রোটিন থাকে, যার মধ্যে ‘ফ্যাক্টর ৮’ ও ‘ফ্যাক্টর ৯’ প্রোটিনের ঘাটতি হলে তখন হিমোফিলিয়া হয়। গবেষকেরা বলেন, এই প্রোটিনগুলি যে জিনে থাকে সেই জিনে মিউটেশন বা রাসায়নিক বদল হলে এমন অসুখ হয়।
কেন পুরুষরাই বেশি ভোগেন হিমোফিলিয়ায়?
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, হিমোফিলিয়ার কারণ মূলত জিনবাহিত। যে ত্রুটিযুক্ত জিনের কারণে হিমোফিলিয়া হয়, সেটি থাকে এক্স ক্রোমোজ়োমে। পুরুষের শরীরে একটি এক্স ও একটি ওয়াই ক্রোমোজ়োম থাকে। আর মহিলাদের থাকে দু’টি এক্স ক্রোমোজ়োম। যেহেতু ত্রুটিযুক্ত জিন এক্স ক্রোমোজ়োমে থাকে, তাই পুরুষদের শরীরে বংশগত ভাবে এই জিনটি আসে। আর একবার এক্স ক্রোমোজ়োমে জিনের মিউটেশন শুরু হয়ে গেলে, তা চলতেই থাকে। ফলে রোগের ঝুঁকি বাড়ে। মহিলাদের ক্ষেত্রে উল্টোটাই হয়। কারণ মহিলাদের একটি এক্স ক্রোমোজ়োমে ত্রুটিপূর্ণ জিন থাকলে, অন্যটি তার মিউটেশনে বাধা দেয়। ফলে রোগের লক্ষণ দেখা দিলেও, তা সব ক্ষেত্রে তীব্র হয় না। ঝুঁকিও কম থাকে।
গবেষকেরা বলছেন, হিমোফিলিয়া রোগের বাহক পুরুষ নয়, বরং মহিলারাই হন। জন্মের সময়ে মায়ের শরীর থেকে ত্রুটিপূর্ণ জিন সন্তানের মধ্যে আসতে পারে। তবে উপযুক্ত চিকিৎসায় রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।