মডেল: শ্রীলগ্না বন্দ্যোপাধ্যায়, রাইমা গুপ্ত
বাচ্চাদের কিছু শেখানো খুব সহজ কথা নয়। ‘তুমি এটা করো’ বা ‘ওটা কোরো না’ বলে তাদের দিয়ে কিছু করানো যায় না। বরং খেলার ছলে শেখালে অনায়াসেই তাদের অনেক কিছু শেখানো যায়। এমন অনেক খেলা আছে, যা থেকে আপনার সন্তান শিখতেও পারবে অনেক কিছু। তবে বয়স অনুযায়ী বদলাবে খেলার ধরনও। দু’ থেকে তিন বছর বয়সি বাচ্চাদের যেমন খেলা, পাঁচ থেকে সাত বছরের বাচ্চাদের খেলার ধরন আবার অন্য রকম হবে।
২ থেকে ৫ বছরের জন্য
এই বয়সটা বাচ্চাদের ভিত তৈরি করার সময়। ফলে এমন কাজে ওদের আগ্রহী করে তুলতে হবে, যাতে পরবর্তী সময়ে পড়াশোনা সহজ হয়।
ব্লক গেম্স: বিল্ডিং ব্লক দিতে পারেন খেলার জন্য। এতে একটির সঙ্গে আর একটি ব্লক জুড়ে পিলার, টাওয়ার, বাড়ি ইত্যাদি নতুন জিনিস বানাতে শিখবে। ছোট বাচ্চারা ভাল করে পেন, পেনসিল ধরতে পারে না। কারণ তাদের হাতে ধরার গ্রিপ তৈরি হয় না। এই ধরনের খেলায় হাতের গ্রিপ তৈরি হবে। এক জায়গায় বসতেও শিখবে।
কাউন্টিং: পুঁতি লাগানো বা মালা গাঁথার মতো কিছু হাতে ধরিয়ে গুনে গুনে গেঁথে ফেলতে বলুন। এতে গুনতেও শিখবে। আবার হাতের গ্রিপও তৈরি হবে। তবে খুব ছোট পুঁতি না দিয়ে একটু বড় পুঁতি দিন। নিজের সামনে বসে মালা গাঁথান। কারণ অনেক বাচ্চারই ছোট জিনিস মুখে পুরে দেওয়ার প্রবণতা থাকে।
রং করি আনন্দে: ছোট বাচ্চাদের রঙের প্রতি বেশ আকর্ষণ থাকে। তাই ছবি এঁকে ওদের রং দিয়ে ভরাট করতে বলুন। এতে অনেক জিনিস ওরা শিখবে। প্রথমত পাতার রং সবুজ, ঠোঁটের রং লাল বা চুলের রং কালো— রঙের এই প্রাথমিক ভাগগুলো চিনতে-জানতে শিখবে। আর ভরাট করার খেলায় প্রথমে ছবির বাইরে রং বেরিয়ে গেলেও তাকে উৎসাহ দিন ধরে আঁকার। এতে সীমার মধ্যেও থাকতে শিখবে। নিয়ন্ত্রণ বোধ তৈরি হবে। অনেক বাচ্চারই দেওয়ালে রং করার প্রবণতা থাকে। সে ক্ষেত্রে তাকে বোঝান, দেওয়ালে রং করা ঠিক নয়।
৬ থেকে ১০ বছরের ক্ষেত্রে
এই বয়স বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের সময়। ফলে এমন খেলায় ওদের ব্যস্ত রাখুন, যাতে মাথা খাটাতে হয়।
ম্যাপ পয়েন্টিং: ছুটির দিন সকালে একটা গ্লোব বা ম্যাপ নিয়ে বসে পড়তে পারেন সন্তানের সঙ্গে। এক একটি দেশের নাম তাকে খুঁজে বার করতে বলুন। আর সেটা কোন মহাদেশে, সেটাও দেখাতে বলুন। এর থেকে সহজেই ভূগোলে তার দক্ষতা বাড়বে। সন্তানের পর্যবেক্ষণ শক্তিও বাড়বে।
ওয়র্ড গেম: এই খেলায় অনেক অ্যালফাবেট থাকে। এগুলো পরপর সাজিয়ে শব্দ বানাতে হয়। এই শব্দ তৈরির খেলাও কিন্তু বাচ্চাদের ওয়র্ড লিমিট বাড়াতে সাহায্য করে। তাই সময় পেলেই স্ক্র্যাবল নিয়ে বসে যেতে পারেন তাদের সঙ্গে। আবার অনেক গেম থাকে, যেখানে হয়তো পাঁচটা অক্ষর দেওয়া থাকল। এই পাঁচটা অক্ষর দিয়ে সে সর্বাধিক কতগুলো শব্দ বানাতে পারছে, সেটাই খেলা।
মেমরি গেম: ছোটবেলায় অনেকেই হয়তো এ রকম খেলা খেলেছেন। হয়তো কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন, হাতের কাছে কিছুই নেই করার মতো। মুখে মুখে এই মেমরি গেম খেলতে পারেন আপনার সন্তানের সঙ্গে। আপনি একটি নাম বলবেন। তার সঙ্গে জুড়ে সে একটি নাম বলবে। আবার আপনি তার পরে জুড়ে তিনটি নাম একসঙ্গে বলবেন। এই গেম সন্তানের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে খুবই সহায়ক।
শপিং: ছুটির দিনে বা উইকেন্ডের সন্ধে কাটাতে অনেকেই হয়তো শপিং মলে ঘুরে বেড়ান। সেই সময়টাও কাজে লাগাতে পারেন সন্তানের মগজাস্ত্রে শান দিতে। ওকে বলুন, বিভিন্ন দোকানে ক’টা অজানা জিনিস সে দেখতে পেল, খুঁজে বার করতে। এ বার সে আপনাকে সেটা বললে আপনি তাকে সেই জিনিসটা কী, তা বিস্তারিত বুঝিয়ে দিন। আর নিজেও না জানলে সেই দোকানে গিয়ে সেটা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। এতে সন্তানের আই কিউ বাড়বে।
গল্প পড়া: সন্তানকে একটা বই ধরিয়ে পড়তে বললে সে কতটা পড়বে তাতে সন্দেহ আছে। বরং সেই গল্পের বইয়ের একটা ইন্টারেস্টিং জায়গা আপনি তাকে পড়ে শোনান। সন্তানের আগ্রহ তৈরি হলে বইটা বন্ধ করে রেখে দিন। সে যদি গল্পটা আরও জানতে চায়, তখন তাকে নিজেকেই বাকি গল্পটা পড়ে নিতে বলুন। দেখবেন সে পড়ে ফেলবে। আবার গল্পের বইয়ের মাঝখান থেকে কয়েকটা প্রশ্ন করে বলতে পারেন, তার উত্তরগুলো বই থেকে খুঁজে বার করতে। এতে বইটাও পড়া হয়ে যাবে আর ওর সময়ও কেটে যাবে।
অঙ্কের ধাঁধায়: অঙ্কের ধাঁধা তৈরি করে সন্তানকে বলুন সেই ধাঁধার উত্তর দিতে। এতে ওর যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ সহজ ও অনেক পোক্ত হবে। মেন্টাল ম্যাথের বই কিনে দিতে পারেন তাকে। অন্য দিকে দোকান-বাজারে বিলে টাকা মেটানোর সময়ে সন্তানের হাতে টাকা দিন। ওকেই বলুন, হিসেব করে টাকা ফেরত আনতে। এতে কিন্তু ওর দায়িত্বও বাড়বে। আবার হিসেব করতেও শিখবে।
এই ধরনের খেলার অনেক সুবিধেও আছে। একে তো সন্তান বুঝতেই পারবে না যে, সে খেলার ছলেই কত কিছু শিখে নিচ্ছে। ফলে পড়াশোনার চেয়ে এই ধরনের খেলায় সহজেই তাকে আগ্রহী করে তোলা যাবে। তার মনোযোগও বাড়বে। দিনরাত বইয়ে মুখ গুঁজে থাকলে কিন্তু সন্তানের মানসিক ভাবে পিছিয়ে পড়ারও সম্ভাবনা থাকতে পারে। তার চেয়ে পড়াশোনার মাঝে এই ধরনের খেলা কিন্তু আপনার সন্তানের মগজাস্ত্রে শান দেবে।
ছবি: অমিত দাস মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত; লোকেশন: ভর্দে ভিস্তা ক্লাব, চকগড়িয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy