Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Health

ডায়াবিটিসকে হারিয়ে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে কোয়েল-ঋত্বিকারা

দিনে চার বার ইনসুলিন নিতে হবে। মাসে পাঁচ থেকে ছ’হাজার টাকা খরচ। কোথা থেকে আসবে এত টাকা? মেয়েটা বাঁচবে তো!

টাইপ-১ ডায়েবেটিস রোগী দীপ্তি চক্রবর্তী এবং ঋত্বিকা সাহা এখন স্বাভাবিক জীবনে।–নিজস্ব চিত্র।

টাইপ-১ ডায়েবেটিস রোগী দীপ্তি চক্রবর্তী এবং ঋত্বিকা সাহা এখন স্বাভাবিক জীবনে।–নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:৪২
Share: Save:

তখন কতই বা বয়স কোয়েলের। সবে পাঁচ বছর। স্কুলে ভর্তি হওয়ার কিছু দিন পরেই শান্ত স্বভাবের এই ছোট্ট মেয়েটির জীবনে হঠাৎ করে যেন অন্ধকার নেমে আসে। কখন যে তার শরীরের টাইপ-১ ডায়াবিটিস হানা দিয়েছে বুঝে উঠতে পারেনি সে। মাঝেমধ্যেই শরীর খারাপ হত। ডাক্তারের কাছে যখন শুনলেন মেয়ের টাইপ-১ ডায়াবিটিস হয়েছে, কথা হারিয়ে গিয়েছিল বাবা-মায়ের। আঁতকে উঠেছিলেন তাঁরা।

এ আবার কী অসুখ? দিনে চার বার ইনসুলিন নিতে হবে। মাসে পাঁচ থেকে ছ’হাজার টাকা খরচ। কোথা থেকে আসবে এত টাকা? মেয়েটা বাঁচবে তো!

দুর্গাপুরের বাসিন্দা কোয়েলের বাবা একটি আলমারি কারখানায় কাজ করেন। মা গৃহবধূ। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সেই সময় এক চিকিৎসকের মাধ্যমে ‘ডায়াবেটিস অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ইউ’-এর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তার পরেই বদলে যায় কোয়েলের জীবন। ডায়াবিটিসকে হারিয়ে এখন আর পাঁচটা শিশুর মতোই বড় হচ্ছে কোয়েল। স্কুলেও যাচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ এবং খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ইনসুলিন নিয়ে খেলাধুলো করতেও তার সমস্যা হয় না।

কোয়েলের মতোই ঋত্বিকা রায়ের জীবনেও নেমে এসেছিল আঁধার। ঋত্বিকা বাসন্তিদেবী কলেজে পড়েন। কিন্তু, ১৩ বছর আগে ঋত্বিকাও ভাবতে পারেনি কলেজের দিনটি এক দিন তাঁর জীবনেও আসবে।

কলেজে পড়া বরাবরই লক্ষ্য ছিল তাঁর। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল টাইপ-১ ডায়াবিটিস। আগে ইসুলিনের মাধ্যমে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রিত হত। এখন ঋত্বিকার শরীরে একটি ‘ইনসুলিন পাম্প’ লাগানো রয়েছে (এটি একটি বিশেষ যন্ত্র)। ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে ইনসুলিন দিতে হয় না। প্রয়োজন অনুযায়ী ওই যন্ত্রের মাধ্যমে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ানো বা কমানো যায়। আধুনিক এই চিকিৎসার ফলে জীবনে কোনও বাধাই, তার কাছে বাধা নয়। এখন ঋত্বিকাও অন্যদের সচেতন করার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

দেখুন ভিডিয়ো

ডায়াবিটিসের মতো রোগ একেবারে নির্মূল করা যায় না ঠিকই, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক জীবন রাখা যায়। ডাক্তারদের মত, অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা থেকে টাইপ-১ ডায়াবিটিস হয়। রোগীকে সুস্থ রাখার জন্য ইনসুলিনই নেওয়া একমাত্র উপায়। খুব কম মানুষই টাইপ-১ ডায়াবিটিসের সমস্যায় ভোগেন। এর তুলনায় বেশি সংখ্যক মানুষের টাইপ-২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হন। অনেক সময় জিনঘটিত কারণে অথবা বাবা-মায়ের ডায়াবিটিস থাকলে সন্তানের তা হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই।

তবে ভারতে ডায়াবেটিস নিয়ে এখন সচেতনতার অভাবের জন্য রোগভোগে জর্জরিত হয়ে পড়ছেন মানুষজন। ‘ডায়াবেটিস অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ইউ’-এর সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ মজুমদার বলেন, “আইডিএফ-এর পরিসংখ্যান দেখলে চমকে উঠতে হয়। টাইপ-১ ডায়াবিটিসে আমেরিকা প্রথম। ভারত দ্বিতীয়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আবার চিন প্রথম, ভারত দ্বিতীয়। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবের জন্যেই এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে সবাইকে পিছনে ফেলে প্রথমও হয়ে উঠবে ভারত।” তিনি আরও বলেন, “আইডিএফ-এর পরিসংখ্যানে বিশ্ব প্রতি সেকেন্ডে এক জনের ডায়াবিটিস ধরা পড়ছে। ছয় সেকেন্ডে আবার এক জনের মৃত্যু হচ্ছে।”

তবে ডায়াবেটিস হলে ভয়ের কোনও কারণ নেই বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক তথা ওই সংগঠনের সভাপতি দেবাশিস বসু। তিনি বলেন, “সঠিক চিকিৎসা এবং একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই ডায়াবিটিসকে হারানো সম্ভব।”

ইনসুলিন পাম্প লাগানো হচ্ছে এক খুদে ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে।–নিজস্ব চিত্র।

যেমন দীপ্তি চক্রবর্তী ৮৬ বছর বয়সেও ডায়াবিটিসকে হারিয়ে স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন। এক সময় প্রায় হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। ১০ বছর আগে টাইপ-১ ডায়াবিটিস ধরা পড়ায় ইনসুলিন পাম্প ব্যবহার করেন চিকিৎসকেরা। এখন অনেকটাই সুস্থ তিনি। দীপ্তিদেবী এখন এই বয়সেও নাতির সঙ্গে হেঁচেচলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

আরও পড়ুন: শহরে শিশুদের মধ্যে বাড়ছে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা

সম্প্রতি ডায়াবিটিস নিয়ে বাইপাসের ধারে একটি পাঁচতারা হোটেলে সচেতনতা প্রচারেও এসেছিলেন তিনি। তাঁর মতো অনেকেই। তাঁদের দেখে এখন অনেকেই আশার আলো দেখছেন। ডায়াবিটিস মানেই জীবন শেষ নয়। নতুন করে বাঁচার লড়াই। এই অনুষ্ঠানে ডায়াবিটিসে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশিষ্টজনেরাও।

আরও পড়ুন: ডায়াবিটিস হচ্ছে কি আপনার? বুঝে যান এ সব উপায়ে

চিকিৎসকদের পরামর্শ: করোলা, উচ্ছে, মেথি শাক, পাট শাক, নিম পাতা, পালং শাক, ছাতু, ওটস, আপেল, গাজর, বিনস— এই ধরনের খাবার ডায়েটে থাকলে ভাল। ভাজা ও মিষ্টি জাতীয় খাবার, কোল্ড ড্রিঙ্ক যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। ডায়েটের পাশাপাশি অবশ্যই দরকার সঠিক এক্সারসাইজ। প্রতি দিন ৩০ মিনিট করে জোরে হাঁটা দরকার। তবে ডায়েট করতে হবে চিকিৎসকদের পরামর্শেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy