Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

বীজের পুষ্টিতেই তুষ্টি

রোজকার খাবারে অল্প করে হলেও তিসি, তিল, শিয়া বা সূর্যমুখীর বীজ রাখলে ভাল থাকে শরীর ফ্ল্যাক্স, শিয়া, বেসিল, পাম্পকিন, সানফ্লাওয়ার... এডিবল সিডসের তালিকাও কম নয়। দেখে নেওয়া যাক কোন বীজ কেন উপকারী। সে সব বীজ খাবেনই বা কী ভাবে?

শিয়া সিড

শিয়া সিড

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

শরীর ফিট রাখার জন্য যেমন নিয়মিত ব্যায়াম, শারীরিক কসরত জরুরি, তেমনই দরকার ঠিক খাওয়াদাওয়া। দুইয়ে মিলে ফিট থাকার কাজটা সহজ হয়। খাবারে বীজ রাখার চল নতুন নয়। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা ইদানীং বাড়ছে। এমন অনেক বীজ রয়েছে, যা নানা ভাবে খাবারের সঙ্গে যোগ করা যায়। এতে শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ে না, শরীরের জন্যও উপকারী। ফ্ল্যাক্স, শিয়া, বেসিল, পাম্পকিন, সানফ্লাওয়ার... এডিবল সিডসের তালিকাও কম নয়। দেখে নেওয়া যাক কোন বীজ কেন উপকারী। সে সব বীজ খাবেনই বা কী ভাবে?

ফ্ল্যাক্স সিড: তিসি বা ফ্ল্যাক্স সিড ভাল মানের ফ্যাট, অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, প্রোটিন ও ফাইবারে ভরপুর। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্ট ভাল রাখে ফ্ল্যাক্স। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে তিসি। একটা সময়ে অনেক খাবারই রান্না করা হত তিসির তেলে। ফ্ল্যাক্স সিড খেতে গেলে বীজ শুকনো খোলায় ভেজে নেওয়া জরুরি। অনেকে রোস্ট করার পরে গুঁড়িয়ে নেন তিসি। আটা-ময়দা মাখার সময়ে ফ্ল্যাক্স গুঁড়ো অল্প পরিমাণে মিশিয়ে রুটি তৈরি করতে পারেন।

শিয়া সিড: ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ়, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর শিয়া সিড শুধু হৃদ্‌রোগের আশঙ্কাই কমায় না। পাশাপাশি হাড়ও ভাল রাখে। রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়। কোনও ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন থাকলে, সেটিও কমাতে সাহায্য করে। মেটাবলিক রেট ভাল রাখে শিয়া সিড। ওভার নাইট ওট্‌স কিংবা স্মুদিতে ভিজিয়েও খেতে পারেন, আবার পুডিং, মাফিনেও দিতে পারেন এই বীজ।

পাম্পকিন সিড: কুমড়োর বীজে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, আয়রন, জ়িঙ্ক, কপার ইত্যাদি। নিয়মিত পাম্পকিন সিড খেলে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড ভাল থাকে। বিশেষ কিছু ধরনের ক্যানসারেরও আশঙ্কা কমায় এই বীজ। আবার অনিদ্রার হাত থেকেও মুক্তি দেয় কুমড়ো বীজ। শুকনো খোলায় ভেজে স্যালাডের টপিংয়ে, শরবতের উপরে ছড়িয়ে খেতে পারেন পাম্পকিন সিড। আবার এক বাটি ফল কেটে তার মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে পারেন রোস্টেড পাম্পকিন সিড।

সানফ্লাওয়ার সিড: সানফ্লাওয়ার সিড পরিচিত সূর্যমুখীর বীজ নামেও। অল্প পরিমাণে এই বীজ খেলে সহজেই পেট ভরা থাকে। কিছু ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে এই বীজ। এ ছাড়াও হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে, রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে সমতা আনতে সাহায্য করে। ভাল মানের প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন বি ওয়ান এবং ই, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, কপার থাকে সূর্যমুখীর বীজে। শুকনো খোলায় ভেজে এই জাতীয় বীজ স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যায়। আবার চাইলে স্যালাড কিংবা সতে করা আনাজের সঙ্গেও খেতে পারেন।

বেসিল সিড: ছোট ছোট কালো রঙের দেখতে এই বেসিল সিড জলে ভিজিয়ে রাখলে ফুলে যায়, তার গায়ে সাদা পরত পড়ে। বেসিল সিডও নানা গুণে ভরপুর। ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে বেসিল সিডের জুড়ি মেলা ভার। পাশাপাশি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, কোষ্ঠকাঠিন্যের কষ্ট কমানো, অ্যাসিডিটি থেকেও মুক্তি দেয় বেসিল সিড।

সেসমি বা তিল: সাদা তিলে থাকে ক্যালশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট জাতীয় উপাদান। লিভারকে যে কোনও রকম ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম তিল। হজম বাড়াতে, দাঁত ও হাড়ের দেখভাল করতেও তিলের জুড়ি মেলা ভার। তিলের বীজ রোস্ট করে স্যালাডের সঙ্গে খেতে পারেন। এ ছাড়াও তিলের তেল একই রকম ভাবে স্বাস্থ্যরক্ষায় সহায়ক। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তিল তেল কয়েক ফোঁটাই যথেষ্ট।

ফেনেল বা মৌরি: মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে মৌরির সুনাম রয়েছেই। ক্যাম্পফেরল ও কোয়ারসেটিন জাতীয় ভাল মানের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায় মৌরির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। নিউরোলজিক্যাল ডিজ়িজ় বা স্নায়ুরোগ সারাতে, সংক্রমণ কমাতেও সহায়ক মৌরি। এতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, কপার, জ়িঙ্ক, সেলেনিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ়, পটাশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল। পেটও ঠান্ডা রাখে মৌরি। রান্নায় মৌরি ফোড়ন দিতে পারেন। সারা রাত জলে মৌরি ভিজিয়ে রেখে পরদিন তা ছেঁকে খেতে পারেন। মৌরি ভেজানো জল শরীর সুস্থ রাখে। তবে ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে রোজ মৌরি ভেজানো জল খাওয়া ঠিক নয়।

গ্রেপ সিড: প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায় গ্রেপ সিডকে অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল, অ্যান্টি-অ্যালার্জিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে ধরা হয়। যে কোনও জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে গ্রেপ সিড। রাতে দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখা, দাঁতের ক্ষয় রোধ করা, আর্থ্রাইটিস ও আলসার জাতীয় রোগকে সারানোর মতো কাজে সাহায্য করে থাকে এই বীজ। শরবতের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন গ্রেপ সিড।

সব ধরনের বীজ নিজের প্রয়োজন মতো খেতে পারেন। তবে ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে নেওয়াই শ্রেয়। প্রত্যেকটি বীজ আলাদা করে না খেয়ে একসঙ্গে গ্রানোলা তৈরি করে রাখতে পারেন। ওট্‌সের সঙ্গে সব রকমের বীজ মিশিয়ে, অর্গ্যানিক ব্রাউন সুগার কিংবা মধু দিয়ে টস করে নিতে পারেন। আবার জারে ভরে রেখে রোজ দু’চামচ করেও খেতে পারেন। এতে বীজ খাওয়া হবে, পেট ভরবে, আবার শরীরও পাবে সমস্ত পুষ্টিগুণ।

অন্য বিষয়গুলি:

Health Fitness Diet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy