Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Corona virus

জ্বর মানেই করোনা আতঙ্ক? বাড়িতে এই সব মেডিক্যাল কিট না রাখলে বিপদ

জ্বর এলেও মনের দিক থেকে খানিকটা নিশ্চিন্ত হতে পারবেন বাড়িতে যদি বিশেষ কয়েকটা যন্ত্র রেখে দিতে পারেন। বুঝতে পারবেন শরীরে আদৌ কি সমস্যা।

জ্বরে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে মেনে চলুন চিকিৎসকের পরামর্শ। ফাইল ছবি।

জ্বরে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে মেনে চলুন চিকিৎসকের পরামর্শ। ফাইল ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ১৪:০০
Share: Save:

বর্ষাকাল। তায় করোনা আবহ। গায়ে সামান্য জ্বর এলেও তাই চিন্তায় পড়তে হচ্ছে। একটা অদ্ভুত অস্থিরতাও কাজ করছে। কিন্তু জ্বর, গা হাত পা ব্যথা মানেই তো আর করোনা নয়। তবে সামান্য তাপমাত্রা বেশি হলেও এই সময় বাড়িতে থাকতেই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। জ্বর এলেও মনের দিক থেকে খানিকটা নিশ্চিন্ত হতে পারবেন বাড়িতে যদি বিশেষ কয়েকটা যন্ত্র রেখে দিতে পারেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে এই মেডিকেল কিট থাকলেই চিন্তা অনেকটা লাঘব হবে।

মেডিসিনের চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, প্যারাসিটামল তো সবাই রাখছেন বাড়িতে। থার্মোমিটারও বাড়িতেই থাকে। কিন্তু এই মুহূর্তে পালস অক্সিমিটার বাড়িতে থাকলে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। জনস্বাস্থ্য রোগ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী এবং মেডিসিনের চিকিৎসক কল্লোল সেনগুপ্তও জোর দিয়েছেন এই বিষয়টিতেই।

সুবর্ণবাবু জানান, এ সময় থার্মোমিটার অবশ্যই রাখতে হবে বাড়িতে। ডিজিটাল থার্মোমিটার কিংবা মার্কারি থার্মোমিটার রাখলেই চলবে। পরিবারের ক্ষেত্রে ‘নো টাচ’ থার্মোমিটারের প্রয়োজন নেই।

আরও পড়ুন: ধূমপানে বাড়ছে করোনার ঝুঁকি, আশঙ্কা ক্লাস্টার সংক্রমণের, এড়াতে কী করবেন?​

আর কী রাখা যেতে পারে মেডিকেল কিটে?

ডায়াবিটিস রোগীদের ক্ষেত্রে গ্লুকোমিটার বাড়িতেই থাকে সাধারণত। সে ক্ষেত্রে ওই যন্ত্রে আঙুল চাপলেই এক ফোঁটা রক্তের মাধ্যমেই শর্করার পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হবে। করোনা আবহে কো মর্বিড ফ্যাক্টরের উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ডায়াবিটিস রোগীদের ক্ষেত্রে তাই বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে। সকালে উঠে কিছু না খেয়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ মাপা, খাওয়ার দু’ঘণ্টা পরে সেই পরিমাণ মাপা এবং র‌্যানডম পরীক্ষা এই তিনটিই করা হয়। র‌্যানডম পরীক্ষার ক্ষেত্রে (সারা দিনে যে কোনও সময়) ১৪০ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটারের বেশি মান উঠলে সতর্ক থাকতে বলেন সুবর্ণবাবু।

আরও পড়ুন: ফ্রিজ থেকে কি করোনা ছড়ায়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, জেনে নিন

হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেন স্যাচুরেশন পরীক্ষা করে দেখার কথা উল্লেখ করেন তিনি। জ্বর হলে পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেনের পরিমাণ দেখে নেওয়ার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছেন সুকুমার মুখোপাধ্যায় এবং কল্লোল সেনগুপ্তও। তাঁরা তিন জনই জানিয়েছেন, অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মান যন্ত্রের ৯৫-৯৪ শতাংশের কম দেখালেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ৯০ শতাংশের কম মান হলে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলেন সুকুমারবাবু।

আরও পড়ুন: কোন মাস্ক পরবেন? ক’দিন পরবেন? কী ভাবে ব্যবহার করবেন?

অক্সিজেন সিলিন্ডার কি রাখা প্রয়োজন?

কল্লোল বাবু বলেন, ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ থাকলে বা যাঁরা নেবুলাইজার ব্যবহার করেন এবং ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে। সুকুমারবাবু এবং কল্লোলবাবু দুই চিকিৎসকেরই পরামর্শ, বাড়িতে বয়স্ক মানুষ এবং এই জাতীয় রোগে ভুগছেন এমন কেউ থাকলে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার। তবে এই রোগীদের সামান্য সমস্যা হলেও এ সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই বলেছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: রেমডেসি‌ভির থেকে ফ্ল্যাভিপিরাভির…করোনা চিকিৎসায় দিশা দেখাচ্ছে এ সব ওষুধ

সুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার কোনও মানে নেই, বলছেন কল্লোলবাবু। তবে সুস্থ মানুষ কিন্তু সামান্য জ্বর এসেছে, গাঁটে ব্যথা আছে— এ রকম উপসর্গ নিয়ে অনেক রোগীই আসছেন তাঁর কাছে। সে ক্ষেত্রে তিনিও পালস অক্সিমিটার বাড়িতে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা এবং পালস রেট দেখা সম্ভব এর মাধ্যমে।

পালস অক্সিমিটার থাকলে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ও পালস দেখতে পারবেন। ফাইল ছবি।

অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে কত?

৯০ থেকে ১০০-এর মধ্যে সাধারণত থাকে। সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণত এটি ৯৫ শতাংশ। পালস রেট প্রতি মিনিটে বিট ৬০ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকলে চিন্তার কোনও কারণ নেই। কিন্তু জ্বর রয়েছে এবং পালস রেট এর থেকে কম বা বেশি। সে ক্ষেত্রে পালস অক্সিমিটারে মান যদি নির্দিষ্ট মানের কম বা বেশি হয়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন কল্লোলবাবু।

আরও পড়ুন: যক্ষ্মার টিকায় কি জব্দ হতে পারে করোনা? কী বলছেন বিজ্ঞানী ও ডাক্তাররা?

রক্তচাপের বিষয়ে থাকতে হবে সতর্ক

রক্তচাপ নির্ণয়ের জন্য বাড়িতে ব্লাড প্রেসার মনিটরিং যন্ত্র রাখা যেতে পারে বলে জানান কল্লোলবাবু। তিনি বলেন, “রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। চেনা স্ফিগমোম্যানোমিটার অনেকের বাড়িতেই থাকে। কিন্তু বর্তমানে ইলেকট্রনিক ব্লাড প্রেশার মনিটরিং যন্ত্র পাওয়া যায়। তার মাধ্যমেও রক্ত চাপ দেখে নেওয়া সম্ভব।”

রক্তচাপ মনিটরিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে, জানান চিকিৎসকরা। ছবি: শাটারস্টক

সুবর্ণবাবু বলেন, “জ্বর হলেই যে করোনা, তা তো নয়। রক্ত পরীক্ষা করে তবেই বোঝা সম্ভব যে জ্বর কেন এসেছে। জ্বর হয়েছে, গা হাত পায়ে ব্যথাও আছে, সে সময় বাড়িতেই একটি পরীক্ষা করে নেওয়া যায়। ডেঙ্গি কি না তা বোঝা যায় টুরনিকেট টেস্টের মাধ্যমে। প্রেশার মাপার সময় হাতে কাফ বাঁধা হয়, পাম্প করে চাপ দেওয়া হয়। পাম্প ফুলতে থাকে। তখন হাতটি বাঁধা অবস্থায় মিনিট পাঁচ অন্তত রেখে দিতে হবে। বাঁধা অংশের উপরে রক্ত বিন্দু জমাট বাঁধতে দেখা যায় সেই সময়। যদি প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ২০টির বেশি স্পট বা বিন্দু দেখা যায়, তখন বোঝা যাবে হেমারেজের প্রবণতা রয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার যথেষ্ট চিন্তার। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে দ্রুত।”

আরও পড়ুন: মানসিক চাপ কমাতে মদ্যপান? বাড়ছে কোভিডের ঝুঁকি

জ্বর ১০০-এর উপরে গেলেই চিকিৎসককে ফোন করে প্যারাসিটামল খাওয়া এবং জ্বরের কারণে ঘামের মাধ্যমে জল বেরিয়ে যায় শরীর থেকে, সে ক্ষেত্রে ওআরএস এবং বেশি করে জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy