করোনাভাইরাসের জেরে এখন স্কুল-কলেজ বন্ধ। ছুটি থাকবে সম্ভবত এপ্রিল মাসের মাঝ অবধি। কচিকাঁচাদের যেমন আনন্দ, তেমনই অভিভাবকেরাও হয়তো খানিক চিন্তায়। পড়াশোনা স্থগিত থাকলেও অনেকেরই স্কুল খুললেই পরীক্ষা। স্কুল বন্ধের পাশাপাশি অনেকে সংক্রমণ হওয়ার ভয়ে বাড়ির প্রাইভেট টিউটরদেরও ছুটি দিয়েছেন। মা-বাবারা নিজেরা হয়তো সন্তানের পড়াশোনা দেখবেন, কিন্তু তাতেও চিন্তা থেকেই যায়। কারণ সব বিষয়ে অভিভাবকের দখল না-ও থাকতে পারে। সেই বিষয়ে সন্তানের পিছিয়ে পড়ার ভয়। কিন্তু স্কুল বন্ধ বলে কি পড়াশোনাও বন্ধ থাকবে? বরং এই বেলা হাতিয়ার করুন প্রযুক্তিকে।
কেন প্রযুক্তি?
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপে এখন অনেক শিশুই অভ্যস্ত। ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক আবহে এই সমস্ত গ্যাজেট, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে তারা। অনেকেরই অবসর কাটে অনলাইন গেমিং, চ্যাটিংয়েও। তাই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পড়াশোনাও শেখাতে পারেন। আসলে বিজ্ঞান যেমন ক্ষেত্রবিশেষে অভিশাপ, তেমনই আবার অনেক ক্ষেত্রে আশীর্বাদও। শিশু-কিশোররা এই ধরনের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট নিয়ে সময় কাটাতে ভালবাসে। ফলে যে সময়টা সে অনলাইনে খেলতে বা চ্যাট করতে চাইছে, সেই সময়ে তার পছন্দের মাধ্যম দিয়েই পড়াশোনা করাতে পারেন। অ্যাপের মাধ্যমে পড়াশোনা করা কিন্তু এখন স্মার্ট ওয়ে। অ্যাপের ইন্টারফেস, ব্যবহার করার টেকনিক... সব কিছুই মনোগ্রাহী হওয়ায় তা নজর কাড়ে পড়ুয়াদেরও। ফলে সন্তান অবসরেও পড়াশোনা করতে পারে, মনোযোগী হতে পারে।
কী ভাবে শিখবেন
অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস... সব ক্ষেত্রেই এমন অনেক ধরনের অ্যাপ আছে, যার মাধ্যমে শেখা যায় অঙ্ক, ইংরেজি, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভাষা, সোশ্যাল স্টাডিজ় ইত্যাদি সব কিছুই। আবার হায়ার স্টাডিজ়ের জন্য ইকোনমিক্স, ফিজ়িক্স, কেমিস্ট্রি ইত্যাদি বিষয়ের উপরেও গবেষণালব্ধ তথ্যবহুল অ্যাপও পেয়ে যাবেন। এই সব অ্যাপে প্রথমে নিজের শ্রেণি এবং কোন বিষয়ে পড়তে চান, তা নির্বাচন করতে হয়। ভিডিয়ো, অডিয়ো... প্রায় সমস্ত রকম উপায়েই শেখানো হয় নানা বিষয়। রয়েছে নিয়মিত অনুশীলন, এমনকি পরীক্ষা নেওয়ার উপায়ও। ফলে অ্যাপের মাধ্যমে সন্তান যে শুধু শিখবে, তা নয়। সন্তানের কত দূর শেখা হল, তা-ও যাচাই করে দেখা যাবে অ্যাপের মাধ্যমে।
কোন কোন প্রযুক্তি?
নানা ধরনের এডুকেশনাল অ্যাপ এখন ডাউনলোড করা যায়। সেই সমস্ত অ্যাপই যে টাকা দিয়ে কিনতে হয়, এমন নয়। বেশ কিছু প্রাথমিক লেভেল থেকে প্রায় বিনামূল্যেই শেখা যায়। তবে আরও গভীরে গিয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে টাকা দিয়েই এগোতে হবে। ফোনের অ্যাপ ডাউনলোডে গিয়ে এমন অনেক অ্যাপই পেয়ে যাবেন। রিভিউ দেখে সেখান থেকেই ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এ ছাড়াও আছে ভাষা শেখার মতো অনেক অ্যাপও। শুধু পড়াশোনা নয়, চাইলে অ্যাপের মাধ্যমে শেখা যায় অনেক কিছুই। কার্টুন-পোর্ট্রেট আঁকা, অরিগ্যামি, ক্রাফ্ট ও ক্লে মডেলিং, ডায়াগ্রাম তৈরি... সব ধরনের জিনিসই শেখা যায়। তার জন্য নানা ধরনের অ্যাপ রয়েছে। চাইলেই ডাউনলোড করে নেওয়া যায় পছন্দ মতো। তবে ইন্টারনেট কানেকশন থাকা জরুরি।
তবু থাক নিয়ন্ত্রণ
এর সঙ্গেই প্রশ্ন ওঠে, অ্যাপ থেকে পড়াশোনা বা নানা কিছু শিখলেও তার কি নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি? অবশ্যই। দিনে কতক্ষণ বই পড়বে, কতক্ষণ অ্যাপে পড়াশোনা চলবে, তা ঠিক করে দিতে হবে অভিভাবকদেরই। কারণ, এ দেশে পড়াশোনা এখনও পুরোপুরি প্রযুক্তিভিত্তিক হয়ে ওঠেনি। ফলে অ্যাপ লার্নিং করতে গিয়ে যেন বই-খাতাকে অবহেলা করা না হয়ে যায়। এ ছাড়া সারাক্ষণ স্ক্রিনের সামনে বসে থাকলে চোখ, নার্ভ, মস্তিষ্কেরও সমস্যা হতে পারে। ফলে পড়াশোনা দুই মাধ্যমেই চলুক মিলিয়ে মিশিয়ে।
অভিভাবককে সচেতন হতে হবে এ ব্যাপারে। অ্যাপ ইনস্টল করে সরাসরি তা সন্তানের হাতে তুলে না দিয়ে নিজের হাতে রাখুন। প্রয়োজনে অ্যাপ নিজে ব্যবহার করে সন্তানের গাইড হয়ে ওঠার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। এতে পড়াশোনাও চলবে ঠিক ভাবে। আবার সন্তানও অ্যাপনির্ভর হয়ে পড়বে না।
ছুটির আনন্দ তখনই পাওয়া যায়, যখন পড়াশোনাও তার একটা অঙ্গ। সারা দিন খেলাধুলো করলে একটা সময়ের পরে তাতেও বিরক্তি জন্মায়, বোরডম কাজ করে। ফলে ছুটি যেমন চলছে চলুক, পাশাপাশি হাত ধরা থাক নিয়মিত পড়াশোনা এবং অনুশীলনেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy