রেমো ফার্নান্ডেজ ছবি: নিজস্ব চিত্র
গোয়ায় তখন উত্তেজনার পারদ চড়তে চড়তে প্রায় তুঙ্গে। কলকাতার হতাশ হওয়ার কথা, তবু উৎসাহ কমেনি। গোয়ায় ক্ষমতার আসনে বদল আসছে না কেন, তা নিয়ে চর্চা জমজমাট। আর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সে সব কোলাহলের থেকে দূরে, জয়পুরে আড্ডায় বসে যেন খানিক হতাশার সুর গোয়ার ভূমিপুত্র পপ গায়ক রেমো ফার্নান্ডেজের কণ্ঠে। বললেন, ‘‘যে দলই আসুক ক্ষমতায়, গোয়ার কথা কেউ ভাবে না।’’
এমনিতে বছরের অনেকটা সময় পর্তুগালে কাটান আজকাল রেমো। কিন্তু অতিমারির এই দু’বছর অধিকাংশ সময়ে গোয়াতেই ছিলেন। আত্মজীবনী লিখেছেন ঘরে বন্দি থাকা এই লকডাউনের কালে। গোয়ায় বড় হয়ে ওঠার গল্প, গোয়ার সংস্কৃতির কথা রয়েছে অনেকটা জুড়ে। সেই গোয়াই যে তাঁকে সুর দিয়েছে, সঙ্গীত দিয়েছে, পাতায় পাতায় বলেছেন রেমো।
অতিমারির এই সময়ে নতুন করে গোয়ার আরও কাছাকাছিও যেন চলে এসেছেন রেমো। তাই নির্বাচন নিয়ে না ভাবতে চাইলেও এড়াতে পারেন না উৎসাহ। আর তার পরেই ঘিরে ধরে হতাশা। মনে হয়, কোনও দলই যেন গোয়ার উন্নতি নিয়ে চিন্তিত নয়!
কিন্তু গোয়ার কথা ভাবা মানে কী? গোয়ার মানুষের জীবনের কি কোনও উন্নতি হয়নি? জানতে চাইলে ফিরে ফিরে আসে গোয়ার মানুষের আনন্দপ্রিয় জীবনবোধের কথা। প্রাণশক্তির কথা। মিলেমিশে থাকার কথা। রাজনীতি বলে ওঠা হয় না।
গোয়ার রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে প্রতি বছর হয়তো এত উত্তেজনা থাকে না বাঙালির। কিন্তু এ বছরটা আলাদা। বঙ্গের ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মান রাখছে কি না গোয়ার জনতা, তা ঘিরে প্রশ্ন তো ছিলই। বঙ্গের জনতার মন জয় করা গোয়ার তারকা কতটা ‘দিদি’র রাজনীতি নিয়ে উৎসাহী, তাও জানার ইচ্ছা তাই বাড়ে। তবু ১৫তম ‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’-এ নিজের বই নিয়ে আলোচনা করতে এসে কলকাতার সাংবাদিকের কাছে বিরক্তি ঢাকতে পারলেন না। তাঁর বক্তব্য, গোয়ায় যে-ই আসুক না কেন, সেখানকার মানুষের ভাল হওয়ার মতো কোনও সুযোগ দেখছেন না। তাই আজকাল রেমোর আর রাজনীতি নিয়ে কথাই বলতে ভাল লাগে না বলেও জানালেন।
কী করলে মনে হত যে তাঁর গোয়ার মানুষের কথা ভাবা হচ্ছে? এত ক্ষণে প্রশ্নের উত্তরের কাছে পৌঁছলেন গায়ক। রেমো বললেন, ‘‘গোয়ার অনেক মানুষই চান সেখানে ‘স্পেশ্যাল স্টেটাস’ বা বিশেষ অধিকার ঘোষণা করা হোক। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দল সে উদ্যোগ নেয় না। আর সেই ফাঁকে বাইরের মানুষ এসে গোয়ায় জমি কিনছেন। বাইরের অনেকে ব্যবসা করছেন।’’ রেমোর বক্তব্য, বহিরাগতদের ব্যবসা যত বাড়ছে, ততই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গোয়ায় সংস্কৃতি। নির্বাচনের পর নির্বাচন হয়, কোনও দলই গোয়ার সংস্কৃতি রক্ষার কথা আদতে ভাবে না বলেই মত রেমোর।
আর সে কারণেই কি অমন বহুমুখী সংস্কৃতির গোয়ায় বার বার ক্ষমতায় আসছে অতি ডান ভাবনা?
এ বার হতাশা ছাপিয়ে এল সতর্কতার সুর। এ সব কথা বলবেন না রেমো। ‘বিশেষ’ কোনও একটি দল নিয়ে আলোচনা করবেন না তিনি। এত ক্ষণের রাজনীতি চর্চার শেষে অতঃপর বলে বসলেন, ‘‘আমি রাজনীতি নিয়ে কথা বলি না। শুধু আমার সঙ্গীত আর বই নিয়েই কথা বলি বরং!’’
জয়পুরের সাহিত্য উৎসবের শেষে পর্তুগাল নয়, নতুন সরকারের গোয়ায় ফিরে যাবেন রেমো। আপাতত আরও কিছু দিন গোয়াতেই কাটাবেন। সেখানেই করবেন পরের কাজের পরিকল্পনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy