‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা’— বনলতা সেনের ঘন কালো চুলকে কার্যত বাঙালির ধ্রুবপদে পরিণত করেছেন জীবনানন্দ দাশ। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই চুলে রং করতে বা ‘হাইলাইট’ করে চুলের ধরনে বদল আনতে পছন্দ করেন। তবে এ সবের মাঝে চুলে মাঝে-মধ্যে ফুটে উঠতে দেখা যায় এক ধরনের লালচে ভাব। কখনও তা হালকা, কখনও তা বেশ গাঢ়। আমরা এই লাল ভাবকে প্রায়ই উপেক্ষা করি। কিন্তু চুলের এই লাল ভাবের মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে অনেক সমস্যা।
কেন লালচে ভাব?
• রূপবিশেষজ্ঞ ব্রিজেট জোনস জানাচ্ছেন, ত্বকের মতো, আমাদের চুলেও মেলানিন থাকে। এর প্রভাবেই চুলের রং কালো হয়। চুলের রঙের জন্য মূলত দু’ধরনের মেলানিন থাকে, ইউমেলানিন এবং ফিওমেলানিন। যাঁদের চুলে ইউমেলানিনের পরিমাণ বেশি হয়, তাঁদের চুলের রং বেশি কালো। আর যাঁদের চুলে ফিওমেলানিন বেশি, তাঁদের চুলের রং একটু লালচে ধরনের। তাই অনেকের জন্ম থেকেই লালচে চুল দেখা যায়।
• আবার চুলে যখন মেলানিন কম থাকে, তখন তাতে সাদা ভাব ফুটে ওঠে। কম বয়সেও চুল ‘পেকে’ যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কখনও আবার তাতে দেখা যায় লালচে আভা। শরীরে হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন হলেও চুলের রঙে প্রভাব পড়ে। তখনও দেখা যায় লাল ভাব। এ ছাড়াও, কাজের সূত্রে, বা ঘোরাঘুরির জন্য দিনের বেশির ভাগ সময় যাঁরা বাইরে কাটান, তাঁদের মধ্যেও চুল লালচে হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চুলগুলিকে ‘সান ব্লিচড’ করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে চুলে মাঝেমাঝে মেটে রংও দেখা যায়। আমাদের আবহাওয়ায় লালচে ভাব ধরার সম্ভাবনাই হয় বেশি।
• কখনও আবার কিছু এলাকার খর-জলের প্রভাবে চুলের মেলানিন উৎপাদন কমে যেতে পারে। সঙ্গে বাড়তে থাকে রুক্ষতা। চুল দুর্বলও হয়ে যায়। তখনও চুল লাল দেখায়।
• এমন অনেক শ্যাম্পু বা প্রসাধন-সামগ্রী আমরা ব্যবহার করি, যা চুলকে রুক্ষ করতে পারে। খুব বেশি ব্লো ড্রাই করলেও চুলে রুক্ষ ভাব বাড়ে। এটিও লালচে চুলের কারণ।
ইঙ্গিত যায় চেনা
মেলানিন বেশি থাকলে চুলের স্বাস্থ্য ভাল হয়। রংও হয় গাঢ়। কিন্তু খাদ্যাভ্যাস হোক বা জীবনধারা, আমাদের অভ্যাসেই ক্ষয়ে যেতে থাকে মেলানিন। এর কারণে চুল ঝরে যায়। চুলের ডগা ফেটে যেতে পারে। চুলের রং হালকা হয়ে তা ধূসর বা লালচে রঙের দেখায়। বাইরে থেকে তা জৌলুসহীন দেখাতে পারে। যদি এ ধরনের সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
কী করা যায়
• হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
• শ্যাম্পু বাছার সময়ে চুলের ধরন বোঝা জরুরি। শ্যাম্পুতে সালফেট, পারঅক্সাইড, প্যারাবেন যাতে বেশি না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
• চুল মজবুত করতে পাতে বেশি করে থাকুক প্রোটিন জাতীয় খাবার।
• ত্বকের মতোই চুলে ‘ইউভি প্রোটেকশন’ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে বাইরে অনেকক্ষণ থাকলেও প্রভাব পড়বে না চুলে।
• খাওয়ার অভ্যাস বদলের সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু সাপ্লিমেন্টও ব্যবহার করা যেতে পারে।
• খর জলকে নরম করতে ‘সফটনার’ ব্যবহার করা যেতে পারে।
রং করালে সাবধান
চুলে নিত্যনতুন রং করতে প্রায় আমরা সকলেই ভালবাসি। কিন্তু রং করানোর আগে আমাদের বিবেচনা করা উচিত, কোথায়, কখন রং করাচ্ছি ও তার পরে কী ভাবে যত্ন নিচ্ছি। ব্রিজেট জানাচ্ছেন, রং করানোর আগে ও পরে নানা কথা মাথায় রাখতে হয়। পোস্ট কালারিং কেয়ার করালে পরবর্তী সময়ে চুলের ক্ষতি কম হয়। রং করানোর ছ’মাসের মধ্যে এক বার অন্তত নিজের স্টাইলিস্টের পরামর্শ নিলে তাঁরাই যত্ন নেওয়ার জন্য কী করা প্রয়োজন, তা বুঝিয়ে দেবেন।
বাড়িতেই যত্ন
কিছু নিয়ম মেনে চললে বাড়িতেই পার্লারের মতো চুলের যত্ন নেওয়া যেতে পারে।
• রুক্ষ চুলে শ্যাম্পু করার আগে ভাল ভাবে তেল দেওয়া যায়।
• শ্যাম্পু করার সময়ে এক বারই শ্যাম্পু করা দরকার। কারণ, দু’-তিন বার তা করা হলে চুল রুক্ষ হয়ে যায়।
• ভিজে চুলে কন্ডিশনার দিলে, তা চুল থেকে পড়তে থাকা জলের সঙ্গে ধুয়ে যায়। তাই কন্ডিশনার লাগানোর আগে তোয়ালে দিয়ে চুল একটু শুকিয়ে নেওয়া ভাল।
• কন্ডিশনার চুলে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পরা যায়। এ ভাবে পাঁচ-সাত মিনিট রাখার পরে তা ধুয়ে নিতে হবে।
• তোয়ালে দিয়ে চুল শুকিয়ে নিতে পারলে সবচেয়ে ভাল। ব্লো ড্রাই ব্যবহার করতে হলে, আগে তোয়ালে দিয়ে চুল কিছুটা শুকিয়ে নিন। তার পরে প্রায় আট সেন্টিমিটার দূরে ড্রায়ারটি রেখে চুল শুকিয়ে নিন। অবশেষে সিরাম ব্যবহার করলে, চুল থাকবে ঝলমলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy