Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Tea

‘চায়ে’ পে চর্চা

বাঙালির দিনযাপনের সঙ্গী চা। এই অভ্যেস কি স্বাস্থ্যকর? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ঊর্মি নাথ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৪:৪৯
Share: Save:

এ দেশের অধিকাংশের সকাল শুরু হয় চায়ে চুমুক দিয়ে। ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা দরকার হয়। ঘরোয়া আড্ডা, অফিসের মিটিং চা ছাড়া ভাবাই যায় না। বাড়িতে অতিথি হোক বা পররাষ্ট্র নেতার আপ্যায়নে, চা পরিবেশন করা আমাদের ঐতিহ্য, সৌহার্দ্যের চিহ্ন। কিন্তু এত কিছুর পরেও প্রশ্ন, চা খাওয়া কতটা স্বাস্থ্যকর?

পানীয় হিসেবে চা ভাল না খারাপ? এককথায় এর উত্তর দেওয়া মুশকিল। দুধ, লিকার, ভেষজ চা, আইস টি, গ্রিন টি... হরেক রকমের চা খাওয়ার চল রয়েছে। চায়ে ট্যানিন থাকে, এই বস্তুটি যেমন এনার্জি দেয় তেমন নেশাও তৈরি করে। ‘‘চা থেকে শরীরের ক্ষতি হবে, না লাভ হবে, তা এককথায় বলা যায় না। এটা ব্যক্তিবিশেষে নির্ভর করে। কোনও জিনিসই বেশি খাওয়া ভাল নয়,’’ বললেন ডা. অরুণাংশু তালুকদার। একই মত পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরীর। তাঁর কথায়, ‘‘চায়ের সে ভাবে কোনও নিউট্রিশনাল বেনিফিট নেই। বরং কোন সময়ে চা পান করা হচ্ছে সেটা জরুরি। কারণ সেটা স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলে।’’

—প্রতীকী চিত্র।

চা পানের উপযুক্ত সময়

ঘুম থেকে উঠে অনেকেই খালি পেটে চা পান করেন। তা না করে সঙ্গে দুটো বিস্কিট নিন। আর চা হতে হবে দুধহীন লিকার। চিনি ছাড়া হলে আরও ভাল। কারণ খালি পেটে দুধের জন্য অনেক সময়ে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। দুধ চা খেতে হবে ভরা পেটে। অনেকেরই অভ্যাস প্রাতরাশের টেবিলে খাবারের সঙ্গে চায়ে চুমুক দেওয়া। ‘‘ব্রেকফাস্ট টেবিলে চা খাওয়ার অভ্যেস ঠিক নয়। চায়ের মধ্যে অক্সালেট, ক্যাফেন-সহ বেশ কিছু অ্যান্টি নিউট্রিশনাল প্রপার্টি থাকে, যেটা খাবার থেকে আয়রন ও মাল্টিনিউট্রিশন গ্রহণে বাধা তৈরি করে। তাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে নয়, প্রাতরাশ করার অন্তত আধ থেকে এক ঘণ্টা পরে চা খান,’’ পরামর্শ কোয়েলের। শুধু প্রাতরাশ নয়, ভারী খাবার খাওয়ার অন্তত আধঘণ্টা পরে চা পানের পরামর্শ চিকিৎসকদের।

—প্রতীকী চিত্র।

চা যখন উপকারী

চা-কফিতে ক্যাফেন থাকে। অতিরিক্ত ক্যাফেন শরীরের পক্ষে ভাল নয়। তবে একজন সুস্থ ব্যক্তি দিনে দু’-তিন কাপ চা পান করতেই পারেন। পরিমিত আহারের মতো পরিমিত চা পান শরীরের উপকার করে! গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দুধ-চিনি ছাড়া লিকার চা শরীরের রক্তচাপ ঠিক রাখতে, কার্ডিয়োভাসকুলার হেলথ, পরিপাক ক্রিয়া ঠিক রাখতে সহায়ক। কিছু ক্ষেত্রে ক্লান্তি ও উদ্বেগ কমাতে এবং কাজে মনোনিবেশ করতেও সাহায্য করে। সর্দি-কাশিতে আরাম দেয় আদা, লবঙ্গ, তুলসীপাতা দিয়ে তৈরি চা। অনেকেই প্যাকেটজাত ভেষজ চা বা আইস টি পান করেন, সেটা ভাল নয়। এগুলিতে প্রিজ়ারভেটিভস থাকে, ফলে উপকারের বদলে অপকারই হয়। বরং চায়ে গন্ধরাজ লেবুর রস, মধু, তুলসীপাতা ও বরফ মিশিয়ে বাড়িতেই তৈরি করে নিন আইস চা। অনেকে ঘুম কাটাতে চা পান করেন। আবার দেখা গিয়েছে রাতের খাবারের পরে ক্যামোমাইল চা পান করলে ভাল ঘুম হয়। তবে সারা দিন অনেক বার চা খেলেন আর ঘুমের জন্য ক্যামোমাইল চা খেলেন, এতে কিন্তু বিশেষ কাজ হবে না।

কখন হতে পারে সমস্যা

অনেকেই রাত জেগে পড়াশোনা বা কাজের জন্য ঘুম কাটাতে বারেবারে চা খান। এতে ঘুম হয়তো কেটে যায় ঠিকই, কিন্তু ঘনঘন চা পান করার ফলে খিদে মরে যায়। ‘‘ক্রনিক গ্যাস্ট্রাইটিস, মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে চা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। কারণ চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাফেন গ্যাস্ট্রাইটিস বা মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। যাঁদের পেটের সমস্যা আছে, হাইপার অ্যাসিডিটি আছে, তাঁরা দুধ চা এড়িয়ে চলুন। একদম খালি পেটে চা খাওয়াও বাজে অভ্যেস,’’ বললেন ডা. তালুকদার। অনেক মহিলার অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন হরমোন নির্গত হয়, তাঁদের ব্ল্যাক টি খেতে বারণ করা হয়। কারণ এতে বেশি ক্যাফেন থাকে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে ঘনঘন চা পান করতে নিষেধ করেন চিকিৎসকেরা।

পাতা চা ভাল, না গুঁড়ো চা— এ নিয়েও তর্ক চলে। দুটোর মধ্যে বিশেষ তফাত নেই। তবে এই প্রতিযোগিতায় পাতা চা এগিয়ে থাকবে। দুধ-চিনি ছাড়া চায়েই কিন্তু আসল স্বাদ লুকিয়ে থাকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Tea Health care
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy