প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এখনও চলছে লকডাউনের পরিস্থিতি। কোথাও কিছু নিয়ম শিথিল হয়েছে, আবার কোথাও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে এগোচ্ছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ রয়েছে সব জায়গাতেই। তার মাঝেই ভ্রমণপ্রেমীরা বেরিয়ে পড়ছেন বাড়ি থেকে। একঘেয়েমি কাটাতে তাঁরা কিছু দিনের জন্য পা়ড়ি দিচ্ছেন অন্যত্র। কিন্তু এত বাধা-নিষেধের মধ্যে বেড়াতে যাওয়া কি আদৌ সম্ভব? কোন জিনিসগুলো মাথায় রাখতে হবে যাওয়ার আগে। যাঁরা বেড়াতে গিয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতাই বা কেমন? খোঁজ নিল ‘আনন্দবাজার অনলাইন’।
কোন্নগরের ছেলে অর্ণব। পেশায় সাহিত্যিক। প্রথম উপন্যাস ‘অন দ্য রোড টু ট্যারাস্কন’ শেষ করার পর দ্বিতীয় উপন্যাস নিয়ে হিমসিম খাচ্ছিলেন। বাড়িতে কিছুতেই মন বসছিল না। তাই লকডাউনের মাঝেই হঠাৎ ঠিক করলেন কেরলের ওয়ানা়ড় যাবেন। সেখানকার বর্ষা উপভোগ করতে করতে লেখা শুরু করবেন নতুন উদ্যমে। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। নেট ঘেঁটে দেখলেন, দূরপাল্লার ট্রেন বা বিমান দুই-ই খোলা। কোথাও যাওয়া নিয়ে কোনও বিধিনিষেধ নেই। শুধু এক এক রাজ্যের এক এক রকম নিময়। সেগুলো পরিষ্কার ভাবে জানা থাকলে, বেরিয়ে পড়াই যায়।
‘‘কোন্নগর থেকে বাড়ির গাড়িতে কলকাতা বিমানবন্দর পৌঁছে গেলাম। রাস্তার বিমান সফরের প্রমাণ দেখালে কোনও গাড়ি আটকায় না। বিমানবন্দরে সিক্যিওরিটি চেকে আমি একা ছিলাম। এখান থেকে দিল্লি বিমানে গিয়েছিলাম। ফাঁকাই ছিল বেশ। দিল্লি থেকে কেরল। ওয়ানাড়ে এক চা বাগানের মধ্যে হোস্টেলের খোঁজ পেয়েছিলাম নেটে। সেখানে থাকার ব্যবস্থা করি। তাঁরাই আমায় ফোনে সাহায্য করেন। কোন সময় গেলে বিমানবন্দর থেকে সহজে গন্তব্যে পৌঁছনো যাবে, সেটা জানিয়ে দিয়েছিলেন। গাড়ি পাঠিয়ে দেন বিমানবন্দরে। রাস্তার পুলিশকে হোস্টেলের কাগজপত্র দেখাতে তাঁরা ছেড়ে দেন,’’ বললেন অর্ণব।
কেরলে কোভিড-বিধির কড়াকড়ি আরও বেশি। ওখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কি পস্তাতে হয়েছে? ‘‘একদমই না। এখানকার নিয়মগুলো সব বিমান পরিষেবার বা সরকারি ওয়েবসাইটে পরিষ্কার লেখা ছিল। সেই অনুযায়ী আরটি-পিসিআর টেস্ট করিয়ে বাকি সব নথি সঙ্গে নিয়ে তবেই এসেছি। হোস্টেলের চারপাশে চা বাগান। বিশাল এলাকা। এত সুন্দর যে বাইরে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন পড়েনি। দু’সপ্তাহ থেকে আগামী ২০ জুন বাড়ি ফিরব ঠিক করেছি,’’ খোশমেজাজে উত্তর দিলেন অর্ণব।
অর্ণবের হাওয়াবদলে খুব একটা ঝামেলা হয়নি। কারণ তিনি খুব একটা ঘোরাঘুরি করেননি। কিন্তু যাঁরা বেড়ানোর অভিপ্রায়ে বেরিয়েছেন, তাঁদের কতটা ঝক্কি হল?
মুম্বইয়ের মেয়ে নেহা। মার্চ মাসে তামিলনাড়ু যাওয়ার সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। কিন্তু নিজেই কোভিড আক্রান্ত হয়ে পড়ায় সেই যাত্রা বানচাল হয়ে যায়। তারপর চাকরি বদলের মাঝে হঠাৎ দু’সপ্তাহের ছুটি পান তিনি। কিন্তু মহারাষ্ট্রে সেই সময় করোনার বাড়বাড়ন্ত। মেঘালয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তা হল না। কোভিডের দু’টিকা না নেওয়া থাকলে সেখানে যাওয়া নিষেধ। উত্তর ভারতে যাওয়া সাহস পাননি কারণ মেয়ে হয়ে একা সফর করা কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে দ্বিধা ছিল নেহার মনে। অনেক ভাবনাচিন্তা করে তিনি ঠিক করেন কেরল বেড়াতে যাবেন। জীবনের প্রথম একলা সফর— তাও করোনার মধ্যে। অভিজ্ঞতা কেমন?
নেহা জানালেন প্রথম দিকে তিনি সত্যিই সাহস পাচ্ছিলেন না। কিন্তু কেরলে যেখানে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন, সেখানকার স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে তিনি ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন। তাঁরা যখন জানান, সফর করা সম্ভব, সেই মতো পাড়ি দিয়েছিলেন নেহা। ‘‘আলেপ্পি, ওয়ানাড় এবং আরও কিছু জায়গা ঘুরলাম। কোথাও কোনও অসুবিধা হয়নি। বেশির ভাগ জায়গায় হস্টেলে ছিলাম। আমার মতো বহু মানুষ সেখানে গিয়েছেন। কেউ ছুটি কাটাতে, কেউ এমনি হাওয়াবদল করতে। হয়তো সেখানে থেকে কাজ করছেন বেশ কয়েক সপ্তাহ। ব্যাকওয়াটার দেখলাম সরকারি ফেরি করে। গা়ড়ি ভা়ড়া পেতেও সমস্যা হয়নি। প্রচুর বিদেশি পর্যটকের সঙ্গে আলাপ হল। চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, উটি— নানা জায়গা থেকে লোকে এসেছেন লকডাউন কাটাতে,’’ বললেন নেহা।
জরুরি কাগজপত্র সঙ্গে থাকলে যাতায়াত করতে কোনও রকম সমস্যা হচ্ছে না, অর্ণবের মতো মত নেহারও। তবে তিনি জানালেন, কিছু জায়গায় জনপরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় আলাদা গা়ড়ি ভাড়া করতে হয়েছিল। তাতে খরচ বেড়েছে। অ্যালেপ্পি থেকে ওয়ানাড় যাওয়ার পথে তাঁর দেখা হয়ে গিয়েছিল আরও এক দল পর্যটকের সঙ্গে। কিন্তু এক গাড়িতে বেশিজন সফর করার নিয়ম এখনও নেই কেরলে। তাই রাতের অন্ধকারে সাবধানে যাতায়াত করতে হয়েছিল তাঁদের। ‘‘টুকটাক কিছু সমস্যা ছিল। কিন্তু নিয়ম মেনে চললে অসুবিধা হওয়ার কথা না। আমরা যে ধরনের হস্টেলে থেকেছি, সেখানে একটা বায়ো-বুদবুদ মেনে চলা হচ্ছিল। মানে একবার চত্বরের মধ্যে ঢুকলে আর বেরোনো যাবে না। কিন্তু তার ভিতরেও অনেক কিছু দেখার রয়েছে। জঙ্গল, উপত্যকা। ভিতরে মাস্ক পরার ঝামেলাও নেই। আমি দিব্যি ঘুরলাম,’’ বললেন নেহা।
নেহা-অর্ণবের মতো আরও অনেকেই এই ভাবে সাহস করে বেরিয়ে পড়ছেন। অতিমারির একঘেয়েমি কাটাতে অন্যত্র ঘুরে আসছেন তাঁরা। তবে তার জন্য চাই খুঁটিনাটি পরিকল্পনা এবং যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy