বিশ্বে প্রথম এমন ইঞ্জেকশন আনতে চলেছে ভারত। ছবি: শাটারস্টক।
নির্বীজকরণ সম্ভব হবে, তবে লাগবে না কোনও ছুরি-কাঁচি। এ বার সার্জারির মাধ্যমে পুরুষের নির্বীজকরণের বিকল্প এক ইনজেকশনের সন্ধান পেলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা অসীম হবে বলেই তাঁরা আশাবাদী।
একটা সময় ছিল যখন মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মনিয়ন্ত্রণের দায় বর্তাত শুধুমাত্র নারীর উপর। সময় পাল্টানোর সঙ্গে বদলেছে জীবন দেখার দৃষ্টিভঙ্গিও। সেই বদলের হাত ধরেই কন্ডোম, পিল ঢুকে পড়েছিল নিম্নবিত্তের বিছানাতেও। ভ্যাসেকটমিও বেশ পরিচিত হয়ে উঠছিল সমাজের নানা স্তরেই। এ বার সেই ঝক্কিও কমিয়ে দিতে এক ইনজেকশনের খোঁজ দিলেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর গবেষকরা। তাঁদের পরীক্ষিত এই ইনজেকশনটি বাজারীকরণ থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে। ইতিমধ্যেই ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-র শিলমোহরের অপেক্ষায় রয়েছে এই ইনজেকশন।
আইসিএমআর-এর গবেষক আর এস শর্মা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ইনজেকশনটি বাজারে আনার জন্য দিন গুনছি আমরা। ইতিমধ্যেই তিনটি ধাপে এর নানা পরীক্ষা সারা হয়েছে। তিনটি ট্রায়ালও দেওয়া হয়েছে। ৩০৩ জন পুরুষের উপর এই ইনজেকশন প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে, ৯৭.৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই ফলাফল আমাদের অনুকূলে এসেছে। বাজারীকরণ হলে এটিই হবে পুরুষদের জন্য তৈরি বিশ্বের প্রথম কন্ট্রাসেপটিভ ইনজেকশন।’’
আরও পড়ুন: ডায়েট করেও কমছে না মেদ? এ সব বিষয়ে সতর্ক থাকলেই ফল মিলবে হাতেনাতে
প্রতীকী চিত্র। ভ্যাসেকটমির সার্জারি এড়ানো যাবে এই ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে। ছবি: শাটারস্টক।
ভারত সমেত নানা দেশেই এই বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে। আমেরিকার স্বাস্থ্যবিষয়ক এক ওয়েবসাইটে সম্প্রতি এই বিষয়ে সেই দেশের গবেষণা নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ২০১৬ সালে আমেরিকা এই বিষয়ে অনেকটা এগিয়ে গেলেও তাদের তৈরি ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় তা বাজারীকরণ সম্ভব হয়নি।
এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিকটি নিয়েই ভারতীয় বিজ্ঞানীরা সচেতন ছিলেন। অধ্যাপক আর এস শর্মা বলেন, ‘‘১৯৭০ সালে আইআইটি-র অধ্যাপক এস কে গুহ একটি পলিমারের সন্ধান দেন। সেই পলিমার নিয়েই ১৯৮৪ সাল থেকে গবেষণা চালাচ্ছে আইসিএমআর। বার বার পরীক্ষা, ইঁদুরের উপর প্রয়োগ, মানুষের উপর প্রয়োগ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সব দিক নজরে রেখেই এই গবেষণা আমরা চালিয়েছি।’’
আরও পড়ুন: শীতের শুরুতেই দূরে সরান সাইনাসাইটিস, রোগের লক্ষণ কী, সুস্থ থাকবেন কোন উপায়ে?
ভারত সরকারের প্রাক্তন পরিবারকল্যাণ সম্পাদক এ আর নন্দ বলেন, ‘‘সরকারের উচিত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এই বিষয়গুলি নিয়ে আরও বেশি করে প্রচারে জোর দেওয়া। মানুষের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ানো। পুরুষরাও যে গর্ভনিরোধনে এগিয়ে আসতেই পারেন, তাতে কোনও অসুবিধা নেই— এই প্রচার এখনও প্রয়োজন। তবেই এই ইনজেকশনের গুরুত্ব মানুষ বুঝবেন।’’
কী ভাবে প্রয়োগ হবে এই ইনজেকশন?
এই ইনজেকশন প্রয়োগ সার্জারির চেয়ে অনেক সহজ ও কম কষ্টসাধ্য। লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া করে এই পলিমারটি টেস্টিক্যালসের কাছে শুক্রাণু বহনকারী টিউবে প্রয়োগ করা হবে। শুক্রাণু নির্গমনকে বাধা দেবে এই ইনজেকশন। এক বার গ্রহণ করলে প্রায় ১৩ বছর পর্যন্ত কার্যকরী থাকবে এটি।
কন্ডোম, পিল সমেত নানা গর্ভনিরোধকের চেয়ে এই ইনজেকশনের ক্ষমতা অনেক বেশি ও তা বহুল ভাবে জনপ্রিয় হবে বলেই আশা বিজ্ঞানীদের।
(তথ্য সহায়তা: মনীষা মুখোপাধ্যায়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy