বাংলা সংস্কৃতিতে সোনার গুরুত্ব অপরিসীম
যেখানে দেখিবে ছাই
উড়াইয়া দেখো তাই
পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন
বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্যটি ভীষণভাবে প্রচলিত। এই অমূল্য রতনটি হল সোনা। শুধুমাত্র ভারতেই নয়, সারা বিশ্বে সোনা সর্বাধিক মূল্যবান ধাতু। গহনা তৈরি থেকে শুরু করে, বিনিয়োগের মুলধন হিসেবে, সর্বক্ষেত্রেই সোনার মাহাত্ম্য রয়েছে প্রচুর। সোনার ঔজ্জ্বল্য, ঠিকরে বের হওয়া চমক সব মানুষের মন ভুলিয়ে দেয়। সোনা নিয়ে কথা বলতে গেলে ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে হবে। ৪০,০০০ অব্দের পূর্বে পাওয়া প্রত্ন প্রস্তরযুগের এই ধাতুটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল বলে মনে করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধাতুটির গুরুত্ব, মূল্য সমস্তকিছুই বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এটি ‘অমূল্যই’ বটে।
শুধুমাত্র মূল্যবান ধাতুই নয়, সোনার বিশেষভাবে গুরুত্ব রয়েছে বাঙালি সংস্কৃতিতেও। বলা বাহুল্য, যে কোনও বাঙালি অনুষ্ঠানেই সোনাকে শুভ বলে মনে করা হয়। বিয়ে হোক বা দেবী বন্দনা, অন্নপ্রাশন হোক বা জন্মদিন, বাংলা ও বাঙালির অনুষ্ঠানে সোনার মাহাত্ম্য অনস্বীকার্য।
শুরু হয়ে গিয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব শারোদৎসব। সারা বছর ধরে বাঙালি পুজোর এই চারদিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। কেনাকাটি তো চলেই, কিন্তু সোনার উপরে কিছুটা হলেও জোর দেওয়া হয়। মনে করা হয়, দেবীপক্ষের সূচনার সঙ্গে সঙ্গে সোনা কেনা হলে পরিবারের মঙ্গল করবে। শুধু নিজের জন্য বা পরিবারের সদস্যদের জন্যই নয়, সোনা কেনা হয় স্বয়ং মা দুর্গার জন্যও। প্রতি বছর নতুন নতুন সোনার আভূষণ তো বনেদি বাড়ির পুজোয় আবশ্যিক। বাদ যায়না বারোয়ারি পুজোগুলিও। সোনার মাথার মুকুট থেকে গলার চেন, হস্তবন্ধনী, কোমপ বন্ধনী নাকের নোলক এমনকী সোনার অস্ত্রও - বহু মানুষ দেবী মূর্তিকে অর্পন করেন। সেই সঙ্গে বাদ যায়না নিজের সাজও। অষ্টমীর অঞ্জলি হোক কিংবা নবমীর ম্যাডক্স স্কোয়ারে আড্ডা, সোনা যেন বাঙালির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিকভাবে যুক্ত থাকে। বিশেষ করে পুজোর সময়ে তো বটেই।
তবে সোনা কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়, তা হল হলমার্ক। হলমার্ক হল সোনার বিশুদ্ধতার মানদন্ড। বাজারে যে সমস্ত সোনা পাওয়া যায়, তার শুদ্ধতার মাত্রা নির্ধারণ করতেই হলমার্কের ব্যবহার করা হয়। যা সম্পূর্ণ সোনার বাজারে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ভারত সরকার, হলমার্কিং স্কিম পরিচালনা করার জন্য একটি এজেন্সি - হিসাবে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (BIS)কে চিহ্নিত করেছে। এই স্কিমের অধীনে, BIS সোনার ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স মঞ্জুর করে এবং শংসায়িত গহনা ব্যবসায়ীরা তাদের গহনাগুলিকে BIS-এর অনুমোদিত যে কোনও অ্যাসেয়িং এবং হলমার্কিং কেন্দ্র থেকে হলমার্ক করাতে পারে।
BIS হলমার্ক নিশ্চিত করে যে কোনও সোনার গহনা যদি কেউ কেনেন, বিশেষভাবে সেক্ষেত্রে সোনার সঙ্গে অন্য ধাতুর মিশ্রণের পরিমাণটি জানা যায়। তাই, কোনও ব্যক্তি এই নিশ্চয়তা পায় যে ১৪, ১৮ এবং ২২ ক্যারেটের সোনার অলংকারে ঠিক অত পরিমাণ ক্যারেটই উপলব্ধ রয়েছে।
পুজোর আগে সোনা কিনলে কী ভাবে হলমার্ক যুক্ত সোনার গহনা শনাক্ত করবেন -
১। ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (BIS)-এর লোগো আদতে বুঝিয়ে দেয় যে হলমার্কিং এবং অ্যাসেয়িংয়ের প্রক্রিয়াটি ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডসের মানক অনুযায়ী হয়েছে।
২। ভারতবর্ষে, কেবলমাত্র ৩টি গ্রেডে হলমার্কিং করা হয় যথা ২২, ১৮ এবং ১৪ ক্যারেট। সেই অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের সোনাকে শংসায়িত করা হয় ২২কে৯১৬ হিসেবে। আপনি যে সোনাটি কিনছেন সেখানে সোনার বিশুদ্ধতার স্তর দেখার জন্য এই প্রতীকটি অবশ্যই দেখুন।
৩। সোনা কেনার সময় ক্রেতাকে BIS দ্বারা অনুমোদিত অ্যাসেয়িং এবং সোনার হলমার্কিং কেন্দ্রের লোগোটিও পরীক্ষা করে নিতে হবে যেখান থেকে গহনা ব্যবসায়ী গহনাটির বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করিয়ে হলমার্ক করিয়েছে।
৪। এছাড়া, হলমার্ক করা সোনার ওপর BIS দ্বারা প্রদত্ত গহনা ব্যবসায়ী ও গহনা প্রস্তুতকারকদের শনাক্ত করারও প্রতীক হিসেবে ৬ ডিজিটের আলফানিউমেরিক HUID কোড থাকে। ভারতে হলমার্ক করা গহনা ব্যবসায়ীদের সম্পূর্ণ তালিকাটি BIS-এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। যদি কোন ক্রেতা অভিযোগ করে এবং হলমার্কিং নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে, তবে তারা সরাসরি BIS-এর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন।
অতএব সোনা কিনুন এবং সেই সঙ্গে বাড়িয়ে তুলুন আলংকারিক সৌন্দর্য্য। তবে অবশ্যই যাচাই করে সোনা কিনবেন।
পুজো সবার ভাল কাটুক। সবাই সুস্থ থাকুন।
শুভ শারদীয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy