মোবাইলের প্রতি আসক্তি ছিল। তা বাড়ছিলও। কিন্তু ইদানীংকালে সমাজমাধ্যমের প্রতি ছোটদের আসক্তি বিপজ্জনক সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। সারা ক্ষণই মোবাইলে বুঁদ শিশুরা। এমনকি শিশুদের নামেও ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। সেখানে দেদার রিল পোস্ট হচ্ছে। স্কুল যাওয়া থেকে খেলাধুলো, পছন্দের খাবারদাবার, পরিবারের একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার প্রতি মুহূর্তের আপডেট রয়েছে সেই সব অ্যাকাউন্টে। উদ্বেগের বিষয় হল ছোটরা এখন আর বাইরে খেলতে যেতে চায় না। তার চেয়ে মোবাইলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটায়। এই ডিজিটালে আসক্তি এক দিকে যেমন ছোটদের মনোজগতে প্রভাব ফেলছে, তেমনই একে কেন্দ্র করে সাইবার অপরাধের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। ছোটরাও জড়িয়ে পড়ছে ডার্ক ওয়েবের আন্তর্জালে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য পদক্ষেপ করতে চলেছে মেটা।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে এ বার থেকে অ্যাকাউন্ট খোলার আগে তার যথাযোগ্য স্ক্যান করবে মেটা। আর সেই স্ক্যান হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অ্যালগোরিদ্মের সাহায্যে। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা করলেই তা বাতিল হবে। অনেক সময়েই বয়স বেশি দেখিয়ে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খোলে ছোটরা। সেই কায়দাও এখন আর করা যাবে না। যতই জন্মবছর বা জন্মদিনে হেরফের করে অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা হোক না কেন, তা পত্রপাঠ ধরা পড়ে যাবে এআই-এর স্ক্যানারে।
আমেরিকায় এই প্রযুক্তি শুরু হয়ে গিয়েছে। ইনস্টাগ্রামে নতুন করে শুরু করেছে ‘টিন অ্যাকাউন্ট’। শুধুমাত্র অল্পবয়সিদের জন্যই এই অ্যাকাউন্ট। সেখানে প্রাপ্তমনস্ক কোনওরকম কনটেন্ট থাকবে না বা স্ক্রল করেও দেখা যাবে না। এমন অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে অভিভাবকদের অনুমতিও প্রয়োজন হবে। সন্তান ইনস্টাগ্রামে কী করছে, কার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাচ্ছে, কী কী শেয়ার করছে তার সবটাই অভিভাবকদের নজরে থাকবে। ধরুন, ১২ বা ১৩ বছরের কোনও ছেলে বা মেয়ে নিজেদের বয়স ১৮ দেখিয়ে ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেল। সঙ্গে সঙ্গে এআই অ্যালগোরিদ্মে তা ধরা পড়বে। সেই অ্যাকাউন্ট সোজাসুজি ‘টিন অ্যাকাউন্ট’-এর আওতায় চলে যাবে। সেই সঙ্গে অভিভাবকদের নোটিফিকেশন পাঠিয়ে সতর্কও করে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
অল্পবয়সিদের মধ্যে ডিজিটাল-আসক্তির ক্ষতিকর প্রভাবটি উপেক্ষা করার নয়। মোবাইলের পর্দায় ভেসে ওঠা একের পর এক লোভনীয় ছবির দৃশ্যপট শিশুমনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক অলীক স্বপ্নের জগতে, বাস্তবের সঙ্গে যার মিল নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা বুঁদ হয়ে আছে। পড়াশোনায় আগ্রহ কমে আসছে। হ্রাস পাচ্ছে কল্পনাশক্তি, সৃষ্টিশীলতা। কিছু দিন আগেই দেশের নানা রাজ্যে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, অন্তত ১৭ শতাংশ শিশু মোবাইলে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে পড়াশোনায় মন দিতে পারছে না, ৪১ শতাংশ শিশু বাস্তব জীবনে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়ে সমাজমাধ্যমে ভার্চুয়াল বন্ধুত্বেই অধিক স্বচ্ছন্দ ।
আপাতদৃষ্টিতে এই পরিবর্তনগুলি সামান্য মনে হলেও সমাজজীবনের ক্ষেত্রে এর প্রভাব বিপুল এবং সুদূরপ্রসারী। অত্যধিক মোবাইল-মগ্নতার কারণে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, চোখের সমস্যা বৃদ্ধির মতো নানা অসুবিধার কথা তো চিকিৎসকেরা বলেনই, উদ্বেগের ব্যাপার হল এই আসক্তি শিশুদের মনোরোগের কারণ হয়ে উঠছে। কায়িক পরিশ্রমহীন অলস যাপনে অভ্যস্ত শিশুরা অবসাদের শিকার হচ্ছে। ইনস্টাগ্রাম জানিয়েছে, বাস্তব ও ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে ভারসাম্য থাকা জরুরি। তাই ছোটরা কতটা সমাজমাধ্যমে বিচরণ করতে পারবে, তার সীমাবদ্ধতা থাকা প্রয়োজন। সেই চেষ্টাই শুরু হয়েছে প্রাথমিক ভাবে।