Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Joint Pain

১৫ কোটি মানুষ জেরবার দেশে, হাঁটুর ব্যথা জব্দ করুন পেশীর শক্তি বাড়িয়ে

হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু কোভিড ১৯ এর থেকে বেশ কয়েক গুণ বেশি। শুধু আমাদের দেশের  প্রায় ১৫ কোটি মানুষ নানা কারণে হাঁটুর ব্যথা নিয়ে জেরবার।

দেশের ১৫ কোটি মানুষ জেরবার হাঁটুর ব্যথায়। ছবি: শাটারস্টক

দেশের ১৫ কোটি মানুষ জেরবার হাঁটুর ব্যথায়। ছবি: শাটারস্টক

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:৩৫
Share: Save:

এখন বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের কাছে আতঙ্কের আর এক নাম নভেল করোনা ভাইরাস। উহানের এই ভাইরাসকে আমরা যমের মত ভয় পেলেও ব্যথা বেদনা-সহ অন্যান্য অসুখ অকুতোভয় হয়ে নিজেদের দাপট বজায় রেখেছে। এ দিকে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া সবাইকে তুড়ি মেরে পুজো আসছে। আর পুজো এসে গেলেই বাঙালি সব ভুলে মেতে ওঠে আনন্দে।

যদি হাঁটুর ব্যথায় কাতর থাকেন তবে কি সব আনন্দ মাঠে মারা যাবে! মোটেও তা নয়, একটু সতর্কতা আর দু-একটা নিয়ম মেনে চললেই হাঁটুর ব্যথাকে বশে রেখে পুজোর বাজার থেকে শুরু করে ঠাকুর দেখা, কোনও কিছুতেই ছেদ পড়বে না। হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু কোভিড ১৯ এর থেকে বেশ কয়েক গুণ বেশি। শুধু আমাদের দেশের প্রায় ১৫ কোটি মানুষ নানা কারণে হাঁটুর ব্যথা নিয়ে জেরবার। কিন্তু তাই বলে কি পুজোর বাজার কিংবা প্যান্ডেল হপিং বন্ধ রাখা যায়!

অস্টিও-আর্থ্রাইটিস হোক বা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অন্য কারণে হাঁটুর ব্যথা হলে হাঁটাচলা করতে প্রাণান্তকর অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে আছে মাংস পেশি, লিগামেন্ট, কার্টিলেজ, ক্যাপসুল, সাইনোভিয়াল মেমব্রেন, ফ্লুইড, শিরা ধমনী-সহ অনেক কিছুই। তাই হাঁটুর ব্যথা মানে শুধুই যে হাড়ের ব্যথা তা কিন্তু নয়, সম্পূর্ণ সিস্টেমের কোনও একটা কিছুর গোলমাল হলেই হাঁটুর ব্যথায় কাতর হতে হয়। জানালেন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের (এমস)-এর প্রাক্তন অর্থোপেডিক সার্জন গৌতম সাহা।

আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খাবেন কি খাবেন না, ডাক্তারের উপর ছাড়ুন​

হাড়ে ব্যথার ব্যাপারে কম বেশি অনেকেই যথেষ্ট সচেতন। কিন্তু কঙ্কাল তো হাঁটাচলা করতে পারে না। হাড়ের কাঠামোর ওপর মাংস পেশি, লিগামেন্ট, কার্টিলেজ, রক্তবাহী শিরা-ধমনীর অচ্ছেদ্য বাঁধনে বাঁধা থাকলে তবেই হাঁটা চলা, নড়াচড়া বা অন্যান্য কাজ করা সম্ভব। পুরো সিস্টেমের কোনও সমস্যা বা গঠনগত বিচ্যুতি থাকলে কিংবা বয়সজনিত কারণে অস্থিসন্ধি ক্ষয়ে গেলে তবেই ব্যথার সূত্রপাত হত। ইদানিং হাঁটুতে ব্যথা হলে অর্থোপেডিক সার্জনরা হাঁটু বদলে দেবার কথা বলেন কেন জানতে চাইলে গৌতম সাহা জানালেন, এই ধারণাটা ঠিক নয়। হাঁটুতে ব্যথা মানেই জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি নয়। হাঁটুতে অল্প স্বল্প ব্যথা হলে কিছু নির্দিষ্ট শরীরচর্চা করলে ব্যথা এড়িয়ে চলা যায়। আর অত্যন্ত ব্যথা এবং হাঁটুর অস্থিসন্ধির ক্ষয় হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিস্থাপন করা উচিত নয়।

হাঁটুর অস্থিসন্ধির কোয়াড্রিসেপস পেশির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কয়েকদিন শরীরচর্চা করার পর তবেই অস্ত্রোপচার করা উচিত। এখানেও সেই একই প্রসঙ্গ আসে কঙ্কাল হাঁটতে পারে না, পেশির ক্ষমতা কমে গেলে হাঁটুর অস্থি সন্ধি বদলেও হাঁটাচলা করা কষ্টকর, বললেন গৌতম বাবু।

সাইনোভিয়াল ফ্লুইড হাঁটুর অস্থিসন্ধিকে সাবলীল রাখে। ছবি: শাটারস্টক

হাঁটুর ব্যথা সম্পর্কে জানতে গেলে এর গঠন জানা দরকার। জানলা দরজা খোলা বন্ধ করতে যেমন হিঞ্জ বা কব্জা থাকে হাঁটু ভাঁজ করা ও নাড়াচড়া অর্থাৎ ফ্লেক্সন ও এক্সটেনশন মুভমেন্টে তেমনই দরজা জানলা খোলা বা বন্ধের নিয়ম মেনেই হয়। শরীরের বৃহত্তম হিঞ্জ জয়েন্ট হাঁটু। হাঁটুর হাড়ের নিচের দিক বা কণ্ডাইল অফ ফিমার ও পায়ের লম্বা হাড় টিবিয়ার উপরিভাগ বা কন্ডাইল অফ টিবিয়া এর দুই এর সংযোগস্থলের সামনের দিকে থাকে প্যাটেলা যা আমাদের কাছে মালাইচাকি নামে পরিচিত। এই চারটি হাড় ছাড়াও শরীরের প্রধান ওয়েট বিয়ারিং জয়েন্টে আছে পেশি, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল ও সাইনুভিয়াল মেমব্রেন।

এই আবরণ বা মেমব্রেন থেকে নিঃসৃত সাইনোভিয়াল ফ্লুইড হাঁটুর অস্থিসন্ধিকে সাবলীল রাখে। রোজকার হাঁটাচলা, দৌড়, ওঠাবসার কারণে হাঁটুর যে ওয়্যার অ্যান্ড টিয়ার হয় তার থেকে হাটুকে সুরক্ষিত রাখে এই সাইনোভিয়াল ফ্লুইড। স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করার জন্যে হাঁটুর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট, মিডিয়াল, ল্যাটারাল ও কোল্যাটারাল লিগামেন্ট, দুটি কার্টিলেজ, হাঁটুর চারপাশের মাংসপেশি ও শক্ত আবরণী অর্থাৎ ক্যাপসুল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। এদের ঠিক রাখতে ওজন বাড়তে দিলে চলবে না। তাই পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়ম করে হাঁটুর ব্যায়াম করতেই হবে, পরামর্শ গৌতম সাহার।

আরও পড়ুন: যাতায়াত গণপরিবহণে, ভিড় রাস্তাতে, কী করবেন কী করবেন না​

হাঁটু ভাঁজ করলে যে বেন্ডিং মোমেন্ট বা চাপ তৈরি হয় তার টানে হাঁটুর সামনের দিকে থাকা মালাইচাকি থাই বোন অর্থাত্ হাড়ের তলার অংশের কার্টিলেজে চাপ দেয়। প্যাটেলার গঠনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কার্টিলেজের ওই অংশটিও জিগস পাজেলের মত প্যাটেলার ঈষৎ বাঁকানো হাড়ের সঙ্গে ভাঁজ হওয়া হাঁটু সমান ভাবে মিলে যায়।

রোজকার হাঁটাচলা ওঠা বসা বা সিঁড়ি চড়া নামার জন্য অগোচরে থাকা এই কার্টিলেজ ক্রমশ ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। এই ব্যাপারটার ডাক্তারি নাম কন্ড্রোম্যালেশিয়া, আর্থ্রাইটিসের প্রথম ধাপ। এই অবস্থায় সাবধান না হলে ক্ষইতে থাকা কার্টিলেজের সারফেস ফিশার তৈরি হয়। ক্ষয় ক্রমশ বাড়তে থাকে। নার্ভে চাপ পড়ে বলে ভয়ানক যন্ত্রণা শুরু হয়। তখনই রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যাবার কথা ভাবেন, বললেন গৌতম সাহা।

হাঁটুর সমস্যার শুরুতেই যদি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কয়েকটি ব্যায়াম শুরু করা যায় এবং রোজকার জীবনযাত্রায় কিছুটা বদল আনা যায় তাহলে আর সাংঘাতিক হাঁটুর ব্যথায় কষ্ট পেতে হয় না। হাঁটুর ব্যথার শুরুতে নিয়ম করে কোয়াড্রিসেপস মাসলের শরীরচর্চা করলে ব্যথার হাত থেকে নিষ্কৃতি মেলে।

আরও পড়ুন: স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি নেই মানেই কি করোনা, কী বলছেন চিকিৎসকরা

নাগাড়ে হাঁটু ভাঁজ করে মাটিতে বসে কাজ করা, বারবার সিঁড়ি চড়া ও নামার কারণে হাঁটুর ব্যথা বাড়তে পারে। এই দিকে খেয়াল রাখতে হবে, একই সঙ্গে ওজন বাড়তে দিলে চলবে না এবং নিয়ম করে ব্যায়াম করতে হবে। এসব নিয়ম মানলেই আমরা যেমন করোনাকে ভয় পাই, হাঁটুর ব্যথা তেমনই আমাদের ভয় পাবে। হাঁটু ভাল রেখে ভাল থাকুন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE