প্রতিষেধক পর্যাপ্ত মাত্রায় সুরক্ষা দিতে সক্ষম কি না, সে ভাবনা ঘিরে বিভ্রান্তির অবকাশ এখন নেই। ফাইল চিত্র
কোন পথে যে চলি? কার কথা যে শুনি? প্রতিষেধক নেওয়া ঘিরে এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র। কিন্তু উত্তর মিলছে না বললেই চলে।
এই প্রশ্নের মূলে থাকছে কয়েকটি তথ্য ঘিরে ভাবনা। যেমন প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও অনেকে সংক্রমিত হচ্ছেন। তবে কি এতে কাজ হচ্ছে না? দেশ-বিদেশের গবেষকেদের বক্তব্য, করোনাভাইরাস রূপ বদলে যেমন হয়েছে, তা আগের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। বিশেষ করে এ দেশে ভাইরাসের যে প্রজাতি এখন বেশি ছড়াচ্ছে, তা আরও গুরুতর। বেশি ছোঁয়াচে। এবং ক্ষতিকর বলেও দাবি অধিকাংশ গবেষকের। যে প্রতিষেধক নেওয়া হচ্ছে, তা এর জন্য যথেষ্ট নয়? তা এখনও পুরোপুরি প্রমাণিত নয় বলেই জানাচ্ছেন গবেষকেরা।
সে সব কথা প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কি তবে দূরে থাকতে হবে প্রতিষেধকের থেকে? নিলে কি কোনও লাভ হবে না? উল্টে শারীরিক ক্ষতি হবে কি? অপেক্ষা করতে হবে কি উন্নততর প্রতিষেধক তৈরি হওয়া পর্যন্ত? নাকি হাতের কাছে যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে কিছুটা হলেও সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নিজেকে?
যে প্রতিষেধক এখনও তৈরি হয়নি, তার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকা কাজের নয়। অন্তত এমন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে। কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জেনোমিক্সের অধিকর্তা পার্থ মজুমদার জানাচ্ছেন, যে কোনও প্রতিষেধক নিলেই শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা বাড়বে। কারণ, অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। এবার প্রশ্ন, ভাইরাসের নির্দিষ্ট এই প্রজাতির সঙ্গে লড়তে কি কার্যকর এই প্রতিষেধক? তা প্রমাণিত হতে এখনও সময় লাগবে। পার্থ বলছেন, ‘‘তা যদি না-ও হয়, তবু প্রতিষেধক শরীরে গিয়ে ক্ষতি করবে না। বরং খানিকটা লাভ তো হবেই।’’ তাঁর বক্তব্য, প্রতিষেধক পর্যাপ্ত মাত্রায় সুরক্ষা দিতে সক্ষম কি না, সে ভাবনা ঘিরে বিভ্রান্তির অবকাশ এখন নেই। আপাতত সকলকে প্রতিষেধক নিতে হবে। এতে কোনও ক্ষতি নেই। যদি ক্ষতির আশঙ্কা থাকত, তবে প্রতিষেধক জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হত না। এ হল প্রতিষেধক তৈরির প্রাথমিক নিয়ম।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কাজে যুক্ত চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীও একমত। প্রতিষেধক নিয়ে কোনও ক্ষতির আশঙ্কা যখন নেই, তখন তা এড়িয়ে যাওয়া এ মুহূর্তে যুক্তিযুক্ত নয়। প্রতিষেধক নিয়ে তেমন কোনও ক্ষতির আশঙ্কা যখন নেই, তখন তা এড়িয়ে যাওয়া এই মুহূর্তে যুক্তিযুক্ত নয়। তিনি বলেন, ‘‘ভাইরাস-ঘটিত যে কোনও রোগের ক্ষেত্রেই জীবাণু যেমন ভাবে রূপ পরিবর্তন করে, সে অনুযায়ী প্রতিষেধকেও সামান্য পরিবর্তন এনে তাকে সময়োপযোগী ও অধিকতর কার্যকরী করা যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য সময় লাগে। অতিমারির এই পরিস্থিতে প্রাথমিক প্রতিষেধক নেওয়া জরুরি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, এই প্রতিষেধক কারও কারও শরীরে বেশি কাজ করছে। কারও ক্ষেত্রে কম। তবে সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে সক্ষম এই সময়ে চালু সব প্রতিষেধকই।
বিজ্ঞানীদের নানা তত্ত্ব নেটমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখন। তাতে গুলিয়ে যাচ্ছে প্রতিষেধক বিষয়ে ধারণা। তাই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। কিন্তু খেয়াল রাখা জরুরি, সব কথাই হচ্ছে একটি ভাইরাসকে নিয়ে। তার রূপ বদলাচ্ছে। কিন্তু রূপ বদলেও সেটি করোনাভাইরাসই রয়েছে। ফলে এমন চিন্তার কোনও জায়গা নেই যে এক অসুখ ছড়াচ্ছে, আর অন্য অসুখের প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। ভাইরাস নিজের মান উন্নত করেছে। সেই মতো প্রতিষেধকের লড়ার ক্ষমাও বাড়াতে হবে। সাধারণের ভয় কাটাতে পরিস্থিতির জটিলতা নিয়ে এমনই বক্তব্য চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীর। এমন বিভ্রান্তি নিয়ে পার্থের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘নিজের কাছে খুব ধারাল তলোয়ার নেই বলে কি কোনও অস্ত্র ছাড়াই যুদ্ধে নামবেন? নাকি যেমন ধার আছে, অন্তত তা দিয়েই শত্রুকে হারানোর চেষ্টা করবেন?’’ প্রতিষেধকের বিষয়টিও এমনই। আপাতত যে তলোয়ার আছে, তা নিয়েই লড়তে হবে ভাইরাসের সঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy