অতিরিক্ত ঠান্ডা ত্বকের সেবাম নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে অ্যাকনের প্রকোপ কমে। প্রতীকী ছবি।
ত্বক টানটান ও তারুণ্যে ভরপুর দেখানোর হরেক উপায় রয়েছে। ইদানীং ‘ইনস্টাগ্রামেবল’ হয়ে ওঠার তাগিদে অনেকেই বেশ কম বয়স থেকে অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট শুরু করে দেন। ত্বকের বয়স ফেরাতে তাৎক্ষণিক ফল হাতেনাতে পাওয়া যায় আইস থেরাপির মাধ্যমে। এটি মূলত ক্রায়োথেরাপি, যেখানে তীব্র ভাবে তাপমাত্রা কমিয়ে ত্বকে প্রয়োগ করা হয়। রক্তনালিতে সরাসরি তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হওয়ায় তা মুখের ‘ওপেন পোর’গুলি বন্ধ করে ত্বককে টানটান করতে সাহায্য করে। আবার তাপমাত্রা স্বাভাবিকে ফিরে এলেই ব্লাড ভেসেলস ফের প্রসারিত হয়। এতে মুখের ত্বকে রক্তসঞ্চালন ভাল হয় এবং অক্সিজেনও পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছয়। মুখের ত্বক ঝকঝক করে, ঠোঁটদু’টি স্ফুরিত দেখায়। ঘরোয়া ভাবে মেকআপ করার আগে মুখে বরফ ঘষে নেওয়ার যে রীতি, সেটিই পেশাদার ভাবে, মেশিনের সাহায্যে করাই ক্রায়োথেরাপি, যার রেশ থাকে দীর্ঘ সময়।
কেন এই থেরাপি?
বিভিন্ন কারণে যাঁদের নিয়মিত ভাবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয়, অথবা রোজ মেকআপের ভারে যাঁদের ত্বক ভারাক্রান্ত, তাঁরা ভাবতে পারেন আইস থেরাপি করানোর কথা। এর প্রধান উপকারিতা ত্বকের জেল্লা ফেরানো। যাঁদের ত্বকে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব রয়েছে, রোদে পুড়ে অনুজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে মুখ, অ্যাকনের সমস্যা রয়েছে, ত্বক ঝুলে গিয়েছে বা বলিরেখা পড়েছে— এই সব ক’টি সমস্যার সমাধান হতে পারে ক্রায়োথেরাপি। এটি প্রধানত বয়সের চাকা উল্টো দিকে ঘোরানোর ফেশিয়াল, যা মেশিনের সাহায্যে, নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় করা হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ঠান্ডা ত্বকের কোলাজেনকে স্টিমুলেট করে, ফলে ত্বকের রোমকূপ ছোট হয় ও টানটান ভাব আসে, যা মুখের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে তোলে। অতিরিক্ত ঠান্ডা ত্বকের সেবাম নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে অ্যাকনের প্রকোপ কমে। চোখের নীচের ফোলা ভাব কমাতে, মুখের লালচে বা পোড়া ভাব দূর করতে এই ট্রিটমেন্টের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
তবে শুধু মুখের ত্বকেই নয়, সারা শরীরেই নেওয়া যায় আইস বাথ। এতে পেশিগুলি রিল্যাক্সড হয়, চোট-আঘাত লেগে থাকলে তাতেও মলম পড়ে। পেশাদার খেলোয়াড়দের অনেকেই এই ট্রিটমেন্ট করিয়ে থাকেন।
সাবধানতা
ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছিল দীপিকা পাড়ুকোনের আইস বাকেটে মুখ চুবিয়ে নেওয়ার ভিডিয়ো। তবে এ সব আইস থেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে না করলে আইসবার্ন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তার যন্ত্রণা কম নয়। সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ ব্রিজেট জোনস বললেন, ‘‘কোনও কিছুই অতিরিক্ত করানো ভাল নয়। সালঁতে গিয়ে ক্রায়োথেরাপি প্রফেশনালদের সাহায্যে করালে ছ’মাসে একবার করানোই যথেষ্ট। কারণ তাপমাত্রা কমিয়ে তা তীব্র ভাবে প্রয়োগ করা হয় বলে কখনও কখনও ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। তাই এই ধরনের অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্ট সব সময়ে পেশাদারদের তত্ত্বাবধানে করানো উচিত। এবং ঘনঘন করানো উচিত নয়।’’ সংবেদনশীল ত্বক যাঁদের, তাঁদের এটি না করানোই ভাল। আর দুর্বলচিত্তদের জন্য প্রফেশনাল ক্রায়োথেরাপি নয়। যিনি যতটা নিতে পারবেন, সহনশক্তি অনুযায়ী ততটা তাপমাত্রাই তাঁকে দেওয়া উচিত।
ব্রিজেট নিজে যে মেশিনটি ব্যবহার করেন, সেটি তুলনামূলক ভাবে অনেক ‘রিল্যাক্সিং’, জানালেন নিজেই। ‘‘প্রথমে ত্বকে ক্লেনজ়িং, এক্সফোলিয়েশনের মতো পরপর ধাপগুলি করে নিয়ে তার পরে কোল্ড মাসাজ দেওয়া হয় মেশিনের মাধ্যমে। জেল ব্যবহার করা হয় সেই সময়ে। শেষে সেরাম ও মাস্ক লাগানো হয়,’’ ব্যাখ্যা করলেন তিনি। অনেকে মেশিনের মাধ্যমে লিকুইড নাইট্রোজেনও ব্যবহার করে থাকেন। এর ফলাফল পরের ৪-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত অনুভূত হয়। ব্রিজেটের পরামর্শ, দ্রুত উজ্জ্বল ত্বক চাইলে মেশিনের সাহায্য নিশ্চয়ই নেওয়া যায়। তবে কেউ যদি বাড়িতে নিয়মিত আইস থেরাপি করেন, সেটির ফলও সুদূরপ্রসারী। চিরাচরিত এই রূপটান খরচাসাপেক্ষ নয়, নিয়মিত করাও সহজ।
ঘরোয়া পদ্ধতি
আইস কিউব জমানোর সময়ে তাতে দুধ, গ্রিন টি, গোলাপের পাপড়ির মতো কিছু উপকরণ যদি জমিয়ে তা ব্যবহার করা যায়, ত্বকের পক্ষে খুবই ভাল। তবে সরাসরির বদলে একটা নরম মসলিন কাপড়ে জমানো বরফের টুকরোটি নিয়ে তার পরে তা মুখে ঘষাই শ্রেয়। কোনও কারণে ত্বকে ইনফ্ল্যামেশন হলে তৎক্ষণাৎ ফল পাওয়া যায় আইস কিউব দিলেই। মসলিন কাপড়ের টুকরোটি বরফগলা ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে তাতে বরফের টুকরো ভরেও কমপ্রেস করা যায় মুখে। বিশেষ করে গরমের সময়ে খুবই আরামদায়ক এই রূপচর্চা।আরামের পাশাপাশি ত্বকের যত্ন, দুই-ই করতে জুড়ি নেই আইস থেরাপির। এই গ্রীষ্মে একবার পরখ করে দেখতেই পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy