ছবি:শাটারস্টক
করোনাভাইরাসকে গুনে গুনে গোল দিতে পারে এই অসুখ। কয়েক বছর আগেই গ্লোবাল এপিডেমিকের তকমাও পেয়েছে! অথচ তা নিয়ে বেশির ভাগ মানুষেরই কোনও হেলদোল নেই। সমস্যার নাম ঘুমের অসুখ। আক্রান্তের হিসেব শুনলে আঁতকে ওঠার কথা! শিশু থেকে বয়স্ক, বিশ্বে শতকরা প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ ঘুমের অসুখে আক্রান্ত। আর এই বিষয়ে সকলকে সচেতন করতে আজ, ১৩ মার্চ বিশ্ব ঘুম দিবস পালন করা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে।
ইন্টারনেটের যুগে দিন দিন ঘুমের সমস্যা বেড়েই চলেছে। সংখ্যার হিসেবে ঘুমের অসুখ সেঞ্চুরি করে ফেলেছে। ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে ২০২০-র রিজিয়োনাল কোঅর্ডিনেটর, স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সৌরভ দাস জানালেন, সব বয়সের মানুষের ঘুম সংক্রান্ত প্রায় একশো রকমের সমস্যা হয়। এ বিষয়ে সম্যক ধারণার অভাবে বেশির ভাগ মানুষই ত্রুটিপূর্ণ ঘুমিয়ে জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দেন। আর এর ফলে নানান লাইফস্টাইল ডিজিজ শরীরে বাসা বাঁধে। ঘুমের মধ্যে আচমকা ভবলীলা সাঙ্গ হয় এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এই বিষয়ে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়াতে ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ মেডিসিন ২০০৮ সালে প্রথম ‘স্লিপ ডে’ পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে মার্চ মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে পালন শুরু হয়েছে।
ঘুমের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি ঘুম সংক্রান্ত নানান সমস্যা— অ্যাডিনয়েড, ইনসমনিয়া, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া, রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম, সোমনামবুলজিম সমেত আরও কিছু অসুখ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে। বলছিলেন স্লিপ অ্যাপ্নিয়া সার্জন উত্তম আগরওয়াল। হিসেব অনুযায়ী মানুষের জীবনের এক তৃতীয়াংশ ঘুমিয়েই কেটে যায়। সেই নিয়ে অনেকেই কার্যত গা জোয়ারি করেন। না ঘুমিয়ে কাজের মধ্যে ডুবে থাকার চেষ্টা করেন। কেউ নেপোলিয়নের ১০ মিনিটের ঘুমের কথা বলেন। কেউ আবার ইন্দিরা গাঁধী-সহ অনেকের উদাহরণ দেন যাঁরা নাকি দিনে ঘণ্টা দু’-তিন ঘুমিয়েও দিব্যি সুস্থ থাকেন। কিন্তু এই ধারণা যুক্তিহীন। বরং নিয়ম করে গভীর ঘুম না হলে নানান শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
আরও পড়ুন: করোনা নিয়ে কতটা ভয় পাবেন? টিবি কিন্তু এর চেয়েও ভয়াবহ!
ভাল ঘুম নির্ভর করে তিনটি জিনিসের উপর, বললেন চিকিৎসক সৌরভ দাস। ১) সময়। ছোটদের ৮–৯ ঘণ্টা এবং পূর্ণবয়স্কদের ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। ২) ধারাবাহিকতা এবং ৩) গভীরতা। ভাল ঘুমের জন্য এই তিনটি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখা উচিত। ইদানীং বাচ্চা থেকে বড়, অনেকেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এ চ্যাট করতে গিয়ে মাঝ রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন। এটাই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। একই সঙ্গে রাতে একাধিক বার বাথরুমে যাওয়ার দরকার হয়। তাই ঘুমের সময়, গভীরতা ও নিরবিচ্ছিন্নতা— এই তিনটিরই অভাব দেখা যায়। এর নিট ফল নানান অসুখ ও মনঃসংযোগের অভাব। বললেন নিউরোলজির চিকিৎসক হাসিব হাসান। কিছুটা হলেও আগের থেকে নাক ডাকার অসুখ নিয়ে সচেতনতা অনেকটাই বেড়েছে। এর ডাক্তারি নাম অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ওএসএ। এই অসুখ থাকলে ঘুমের মধ্যে বিকট শব্দে নাক ডাকে। সঠিক চিকিৎসায় এই সমস্যা না সারালে হাই ব্লাড প্রেশার, হার্টের অসুখ সমেত নানান সমস্যা শরীরে বাসা বাঁধে। বাচ্চাদেরও নাক ডাকার অসুখ হয়। বেড়ে ওঠা অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ড বাদ দিলেই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, বললেন চিকিৎসক উত্তম আগরওয়াল।
আরও পড়ুন: মদ্যপান করলে বা সারা শরীরে অ্যালকোহল ছড়ালেই কি করোনা-হানা ঠেকানো যাবে?
কম ঘুমনোর অপকারিতা
কম ঘুমোলে ডিপ্রেশন বাড়ে, মনঃসংযোগ কমে যায়। অফিসের কাজ হোক বা অন্যান্য পেশাদার কাজে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। পারফরম্যান্স খারাপ হয়। ছোটরা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। রেজাল্ট খারাপ হতে শুরু করে।
• বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, এমনকি পরিবারের লোকজনদের সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। ধৈর্য্য কমে যায়। মেজাজ চড়ে যায়।
• দিনের পর দিন কম ঘুম হলে ক্ষিপ্রতা কমে যায়।
• বেশির ভাগ স্লিপ ডিজঅর্ডার সারানো যায়। কিন্তু এক-তৃতীয়াংশের কম সংখ্যক মানুষ এই সমস্যার জন্য কোনও বিশেষজ্ঞের কাছে যান।
• রোজ সাত-আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ছোটদের আরও বেশি ঘুম দরকার।
• ঘুমের মধ্যে গ্রোথ হরমোন বেশি নিঃসৃত হয়। তাই বাচ্চারা কম ঘুমোলে তাদের বাড়বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না।
• প্রতি দিনের ঘুম আমাদের রোজকার ওয়্যার অ্যান্ড টিয়ার মেরামত করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও মন ভাল রাখতে সাহায্য করে।
• ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা, অর্থাৎ স্লিপ অ্যাপ্নিয়া থাকলে উচ্চরক্তচাপ, হার্টের অসুখ, আচমকা হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
• প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪ জনের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে। স্লিপ টেস্ট করে এই সমস্যা সম্পর্কে জানা যায়। রোগ ধরা পড়লে সি-প্যাপের সাহায্যে সমস্যার সমাধান করা হয়।
কয়েকটি নিয়ম মেনে ঘুমোন
• নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে গেলে সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক থাকে। ঘুম থেকে ওঠার সময়ও নির্দিষ্ট থাকা উচিত।
• বিছানায় যাওয়ার অন্তত দু’ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিলে ভাল হয়।
• রাত্রে বেশি জলপান করবেন না। তা হলে বারে বারে উঠতে হবে না।
• ঘুমোতে যাওয়ার ৬ ঘণ্টা আগে থেকে চা, কফি, সিগারেট পান থেকে বিরত থাকুন। এতে ঘুম আসতে দেরি হয়। মাঝখানে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
• সকাল-সন্ধ্যে কিছুটা ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করলে ভাল ঘুম হয়। তবে ঘুমোতে যাওয়ার সময় ব্যায়াম করবেন না।
• মদ্যপান করলে সাময়িক ভাবে ঘুম পেলেও পরে নেশার দাস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
• ঘুমনোর চার ঘণ্টা আগে মিষ্টি বা বেশি মশলাদার খাবার খাবেন না।
• বিছানাকে কেবল ঘুমনোর জায়গা হিসেবেই ব্যবহার করুন, ওয়ার্কস্টেশন অথবা আড্ডার জায়গা করে তুলবেন না। বরং ঘুমোতে যাওয়ার সময় হালকা গান শুনতে পারেন কিংবা পছন্দের বই পড়তে পারেন।
• ঘুম কম হলে বা না হলেই ওভার দ্য কাউন্টার ঘুমের ওষুধ কিনে খাবেন না।ঘুমোতে যাওয়ার আগে হালকা সুতির পোশাক পরে নিন। টাইট পোশাক পড়লে ঘুমের অস্বস্তি হয়। আর ঘুমের সময় কাচা পোশাক পরাই বাঞ্ছনীয়।ঘুম না এলে কেন ঘুম হচ্ছে না সেই ভেবে দুশ্চিন্তা না করে বরং বিছানা ছেড়ে উঠে পরুন। আবার ঘুম এলে শুতে যান।
• দু’-এক দিন ঘুমের সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু যদি মাসখানেক ঘুমের অসুবিধে চলতে থাকে, তবে অবশ্যই এক জন নিদ্রা বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। ভাল ঘুমিয়ে সুস্থ থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy