হারবেরিয়াম শিট। ফাইল চিত্র।
অনেক সময়েই বইয়ের পাতা থেকে হঠাৎ করে বেরিয়ে আসে শুকিয়ে যাওয়া ফুল বা গাছের পাতা। বইয়ের পাতার ফাঁকে ফুল পাতা রাখার শখ অনেকেরই আছে। কিন্তু জানেন কি, গোটা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের শুষ্ক নমুনার সংরক্ষণ করে রাখা হয় আর সেই সংরক্ষণকে কেন্দ্র করে চলছে নানা গবেষণা? এক বিশেষ ধরনের কাগজে গাছের ফুল, পাতা, শিকড়, বীজ ইত্যাদির নমুনা সংগ্রহ করে শুকিয়ে আঠা দিয়ে আটকানো হয় এবং ওই কাগজে লিখে রাখা হয়, গাছের গোত্র, বৈজ্ঞানিক নাম, সাধারণ নাম, কবে কোথা থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে ইত্যাদি। এই ভাবে উদ্ভিদ সংরক্ষণের পদ্ধতিকে বলে হারবেরিয়াম শিট তৈরি। পাঁচশো বছর আগে এই কাজটি প্রথম করেন ইটালির ফিজিশিয়ান ও বটানিস্ট লুকা গিনি। উদ্ভিদ গবেষণার মতো ভারী বিষয়টিকে পাশে সরিয়ে রাখলে দেখা যায় শৈশবে কমবেশি সকলেই স্কুলে তৈরি করেছেন হারবেরিয়াম শিট। আজও অনেক স্কুলে সেই নিয়ম আছে। উদ্দেশ্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন গাছের পরিচিতি, তাদের ফুল ফল চেনা ও প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা।
বৃক্ষ, গুল্ম, লতানে, জলজ ইত্যাদি নানা ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে বিশ্বজুড়ে। তাই শুধু স্কুল নয়, বাড়িতেও ছোটদের চারপাশের গাছপালা সম্পর্কে জানাতে অভিভাবকেরা অভ্যেস করাতে পারেন হারবেরিয়াম শিট তৈরির। এটি এক ধরনের ডকুমেন্টেশন, একটি নির্দিষ্ট এলাকার উদ্ভিদ বৈচিত্র নথিভুক্ত করা। এতে ছোটদের গাছপালা সম্পর্কে জানার আগ্রহও বাড়ে। বিশেষ করে শহরে বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা খুব বেশি গাছপালার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে না। হারবেরিয়াম শিট তৈরির অভ্যেস থাকলে বিভিন্ন জায়গা থেকে গাছের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে এই খামতিটা পূরণ হয় এবং প্রকৃতি পাঠও হয়ে যায়।
হারবেরিয়াম শিট তৈরি করার পদ্ধতি
হারবেরিয়াম শিট তৈরির জন্য সাধারণ কাগজের বদলে ভাল মানের হ্যান্ডমেড কাগজ ব্যবহার করলে বহুদিন টিকে থাকে। কারণ এই ধরনের কাগজ আর্দ্রতা শুষে নিতে পারে। শিট তৈরির বেশ কয়েকটা পদক্ষেপ আছে। সবচেয়ে আগে ফুলসহ পাতা, শিকড়সহ চারাগাছ ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য যা প্রয়োজন খুব সাবধানে সংগ্রহ করতে হবে। এর জন্য গাছ থেকে ফুল পাতা হাত দিয়ে না ছিঁড়ে, ধারালো কাঁচি বা ছুরি ব্যবহার করতে হবে। শিকড় সুদ্ধ চারা তোলার জন্য অবশ্যই খুরপি ব্যবহার করতে হবে। এমন ভাবে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে যাতে ফুল পাতা ছিঁড়ে না যায়, অক্ষত থাকে। এর পরে জোড়া খবরের কাগজের ভিতর নমুনাটি ঠিক মতো শুইয়ে বা পেতে রেখে কাগজের ঢাকার উপরে কয়েকটি ভারী বই দিয়ে চাপা দিতে হবে। নমুনার তলায় যেন পিচবোর্ড থাকে। এই সময়ে খেয়াল রাখতে হবে যাতে পাতা বা ফুল মুড়ে না যায়। কারণ একবার মুড়ে গেলে পরে নমুনাটির কোনও অংশ সোজা করা যাবে না। এই ভাবে কয়েকটি দিন কাগজের ভিতরে রাখতে হবে যতক্ষণ না পাতা সম্পূর্ণ শুকিয়ে গিয়ে খয়েরি রং নেয়। দু’-তিনদিন অন্তর খবরের কাগজ বদলে দিলে ময়েস্ট থাকার ভয় থাকে না। আর্দ্রতা ছত্রাক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে ঘনঘন কাগজ পরিবর্তনের প্রয়োজন বর্ষায়। তাই হারবেরিয়াম শিট তৈরির আদর্শ সময় শীতকাল। কয়েকদিন খবরের কাগজে রাখার পরে সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে কাগজ থেকে সাবধানে তুলে পাতার নীচের অংশটিতে ভাল মানের আঠা লাগিয়ে সাবধানে শিটে আটকাতে হবে। ফুল-পাতা বা চারা গাছের সঙ্গে একই শিটে আটকানো যায় সেই গাছের বীজ, অবশ্যই একই পদ্ধতিতে শুকিয়ে নিয়ে। আটকানোর জন্য আঠার পরিবর্তে অনেকে সেলোটেপ ব্যবহার করেন কিন্তু তাতে পাতা বা ফুলের অংশ ভেঙে বা পরে খুলে যেতে পারে। তা ছাড়া এটি দেখতেও ভাল লাগে না।
সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ লেবেলিং করতে হবে। বাজারে কিনতে পাওয়া যায় রেডিমেড হারবেরিয়াম শিট লেবেল, না পেলে নিজেই তৈরি করে নিন। লেবেলিং করার সময়ে লিখতে হবে গাছের বৈজ্ঞানিক নাম, সাধারণ নাম, গোত্র, যে দিনে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সেই দিনের তারিখ, যে জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে তার নাম এবং সংগ্রাহকের নাম। পুরো কাজটা হয়ে গেলে প্রতিটি শিট পলিকভারে ঢুকিয়ে রাখলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
শিক্ষক, অভিভাবক প্রত্যেকেরই ছোটদের হারবেরিয়াম শিট তৈরির জন্য উৎসাহ দেওয়া উচিত। এতে সারাক্ষণ মোবাইলমুখী হয়ে থাকার চেয়ে চারপাশের গাছপালা, প্রকৃতি দেখার উৎসাহ বাড়বে ওদের। বড়রাও অবসর সময়ে তৈরি করতে পারেন হারবেরিয়াম শিট। গাছ চেনার পরিধি আরও বাড়বে তাতে।
তথ্য সহায়তা: বনশ্রী শিকদার (শিক্ষিকা, মিত্র ইনস্টিটিউশন)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy