—প্রতীকী চিত্র
অনেক দিন ধরেই নীলাঞ্জনার পায়ে একটা কালো ছোপের মতো গ্রোথ দেখা যাচ্ছে। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন হয়তো আঁচিল বা তিলের মতো কিছু। কিন্তু ক্রমশ তা বাড়তে থাকে। চিকিৎসকের কাছে যেতে জানা গেল নীলাঞ্জনার মেলানোমা হয়েছে।
শুধু মেলানোমাই নয়, রয়েছে আরও অনেক ধরনের স্কিন ক্যানসার। প্রথম দিকে উপসর্গ দেখে হয়তো তা বোঝা যায় না। কিন্তু ঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করলে স্কিন ক্যানসার নিরাময় সম্ভব। জেনে নিন বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন এ বিষয়ে।
মেলানোমা কেন হয়?
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সন্দীপন ধর বললেন, ‘‘আমাদের ত্বকে এপিডার্মিসের সবচেয়ে নীচের স্তর স্ট্র্যাটাম বেসাল লেয়ারের মাঝেমাঝে মেলানোসাইট থাকে। আমাদের দেশের মানুষের ত্বক একটু শ্যামলা। আসলে আমাদের স্কিনের মেলানোসাইটের মেলানিন উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। মেলানাইজেশনের (মেলানিন উৎপাদিত হয়ে এপিডার্মিসের স্তরে ছড়িয়ে পড়ে) গতিও বেশি। এই মেলানোসাইটই ত্বককে অনেকাংশে এই ধরনের ক্যানসার থেকে রক্ষা করে। কিন্তু তার পরেও এ দেশের অনেকেই মেলানোমায় আক্রান্ত হন। শুধু ত্বকেই নয়, চোখেও ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা হতে পারে।’’
মেলানোমায় আক্রান্ত হয়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও আমাদের দেশে অস্বাভাবিক নয়। সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘স্কিন ক্যানসারের মধ্যে মেলানোমা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। এই ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর হাতে পায়ে কালো স্পট দেখা যায়। পরে এই ক্যানসার ছড়িয়ে যেতে পারে লিম্ফ গ্ল্যান্ডস থেকে লাংসেও। তখন কিন্তু এই রোগের নিরাময় অনেক কঠিন হয়ে যায়।’’ রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
উপসর্গ কী?
অনেকের ত্বকেই তিল, আঁচিল, জড়ুল থাকে। তবে সেগুলো সারা জীবন একই আকারে থেকে যায়। কিন্তু সেগুলো ক্যানসারাস হলে তা দ্রুত বাড়তে থাকে। তাই ত্বকে এ রকম পিগমেন্টেশন যদি বাড়তে থাকে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডা. সন্দীপন ধরের কথায়, ‘‘মেলানোসাইটস থেকে যখন টিউমর হয়, তখন তাকে বলে মেলানোসাইটিক টিউমর। সে ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। তা ছাড়া ত্বকে আঁচিল, তিল থাকলে খেয়াল করতে হবে যে, তার থেকে চুল বেরিয়ে আছে কি না। চুল যদি থাকে, তা হলে বুঝতে হবে তা থেকে ক্যানসার হবে না। দেখতে খারাপ লাগলেও এটা গুড সাইন। তবে কিছু শিশুর মধ্যে কনজেনিটাল মেলানোসাইটিক নেভাস দেখা যায়, তাদের মধ্যে কিন্তু কালো স্পটের মধ্যে হেয়ার গ্রোথও দেখা যায়। মেলানোমা বা স্কিন ক্যানসার বোঝার জন্য কিছু ওয়ার্নিং সাইনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ত্বকে কোনও কালো স্পট থাকলে সেটা বাড়লে, নডিউল ফর্ম করলে বা ওই গ্রোথ থেকে রক্ত বেরোলে ডাক্তার দেখাতে হবে।’’ এ ছাড়াও কিছু উপসর্গ দেখা যায়। যেমন কালো স্পটের চারপাশে হালকা বলয় তৈরি হতে পারে। ঘাড়ে বা বগলে লিম্ফ নোডস ফুলে থাকতে পারে। এগুলো সব ম্যালিগন্যান্ট হওয়ার লক্ষণ। তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
স্কিন ক্যানসারের ধরন
সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট গৌতম মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমাদের দেশে মেলানোমার তুলনায় অন্যান্য স্কিন ক্যানসার বেশি হয়। যেমন বেসাল সেল কার্সিনোমা। এটা পিগমেন্টেড বা নন-পিগমেন্টেড দু’রকমেরই হয়। তবে এটা মূলত মুখমণ্ডলে হয়। এ ক্ষেত্রে চোখের পাশে, নীচে, মুখের এক দিকে কালো স্পট দেখা যায়। তবে এই ক্যানসার খুব বেশি ছড়ায় না। এটি ডিপলি বারোয়িং বলা যেতে পারে। অর্থাৎ মুখের উপরে যেখানে দেখা যায়, তার নীচের স্তর থেকে ক্রমশ হাড়েও ছড়াতে পারে। কিন্তু সেখান থেকে লিম্ফ নোডস, ফুসফুসে ছড়াবে না। তাই একে বলা হয় লোকালি ম্যালিগন্যান্ট। ফলে দ্রুত সেই জায়গায় অপারেট করলে রোগী সুস্থ হয়ে যান। এ ধরনের স্কিন ক্যানসার কিন্তু কমন। স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমাও হতে পারে। এটা আর একটু বেশি ছড়ায়। লিম্ফ নোডসে ছড়িয়ে যেতে পারে। এটা হাতে হলে বগলের নোডসে, বা পায়ে হলে কুঁচকির নোডসে ছড়িয়ে যেতে পারে।’’ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে এই ক্যানসার ট্রিগার করতে পারে।
মার্জুলিন স্কিন ক্যানসারও হতে পারে ক্রনিক স্কার থেকে। হাতে-পায়ে গরম তেলে বা আগুনে বা অ্যাসিডে পুড়ে গভীর ক্ষত তৈরি করলে সেখানে দীর্ঘ দিন পরে মার্জুলিন স্কিন ক্যানসার হতে পারে। তবে এই ক্যানসারও বেশি ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও প্রাণঘাতী স্কিন ক্যানসার হল মেলানোমা।
চিকিৎসা হবে কী ভাবে?
স্কিন ক্যানসারের লক্ষণ দেখা গেলে প্রথমে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। বায়পসি করে ক্যানসার ধরা পড়লে অপারেট করতে হয়। সার্জারির এক-দু’সপ্তাহ পর থেকেই রোগী সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। তবে প্রাথমিক স্টেজে তা ধরা পড়া জরুরি। অনেক সময়ে রোগী সার্জারি করতে ইচ্ছুক না হলে, তখন কিছু ক্ষেত্রে রেডিয়োথেরাপি করা হয়। তবে মেলানোমা খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে যায়। তাই সে ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি রোগনির্ণয় হবে, ততই মঙ্গল। আর স্কিন ক্যানসারের চিকিৎসা খুব ব্যয়সাপেক্ষও নয়। সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করলে বিনামূল্যেও তা হওয়া সম্ভব বলে জানালেন ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায়।
আর কিছু বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা প্রয়োজন। তাই কড়া রোদে অনেকক্ষণ থাকতে হলে ছাতা, সানস্ক্রিন মাস্ট। জিনগত কারণেও এই ধরনের ক্যানসার হতে পারে।
তবে আশ্বাস হল এই যে, অনেক ক্ষেত্রেই স্কিন ক্যানসারের নিরাময় সম্ভব। কিন্তু তার আগে দরকার ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা। ত্বকে কোনও রকম স্পট দেখা দিলে বা তা ছড়িয়ে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখবেন, ঠিক সময়ে রোগনির্ণয়ই কিন্তু রোগমুক্তির উপায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy