Advertisement
E-Paper

মেদহীন মধ্য প্রদেশ

সামনেই পুজো। স্টাইলিশ পোশাকে গ্ল্যামারাস দেখাতে কমাতেই হবে ভুঁড়ি। সহায় থাক ডায়েট ও ব্যায়ামের যুগলবন্দিসামনেই পুজো। স্টাইলিশ পোশাকে গ্ল্যামারাস দেখাতে কমাতেই হবে ভুঁড়ি। সহায় থাক ডায়েট ও ব্যায়ামের যুগলবন্দি

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩৩
Share
Save

মেঘলা পার্টিতে যাওয়ার জন্য লিটল ব্ল্যাক ড্রেস বা গাউনেই বেশি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু পেট ও কোমরের চারপাশে বাড়তে থাকা মেদ ইদানীং সমস্যায় ফেলছে তাঁকে।

ঊর্মির সমস্যা অন্য। তাঁর শাড়ি পরার কায়দা ও ধরনে অনেকেই মুগ্ধ হন। কিন্তু বাড়তে থাকা মেদে হারিয়ে গিয়েছে তাঁর ছিপছিপে কোমর। আঁচলের উপর দিয়েই স্পষ্ট জানান দিচ্ছে সেই ফ্যাট।

শাড়ি পরুন কিংবা গাউন, পেটের অতিরিক্ত চর্বি একটা সময়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দেবেই। ভুঁড়ির সঙ্গে কারও বিবাদ নেই। শরীরের ওজন একেবারে যথাযথ হলেও, ছোট্ট ভুঁড়ি থাকতেই পারে। আর পেট ও কোমরের চারপাশে মেদ জমেও তাড়াতাড়ি। এক বার ভুঁড়ি হতে শুরু করলে তা কমতেও সময় লাগে। তবে ঠিকমতো ব্যায়াম ও ডায়েটে ভুঁড়ি কমানো সম্ভব। তাই সারা বছর যা-ই করে থাকুন, সময় থাকতে ভুঁড়ি কমানোর উদ্যোগ করলে পুজোর ক’দিন আপনিই হয়ে উঠতে পারেন শো স্টপার!

মনে রাখা জরুরি

• একটি দিনের জন্য হলেও বিঞ্জ ইটিং ভাল নয়। আজ খেয়ে কাল ঠিক কমিয়ে নেব— মনোভাবটিই ভুল
• প্রত্যেক দিন অল্প অল্প করে, কিন্তু নিয়মিত ফ্যাট কমানোর অভ্যেস জরুরি
• এক্সারসাইজ় ছাড়া শুধু মাত্র ডায়েট দিয়ে ভুঁড়ি কমে না
• পুরুষ এবং মহিলার জন্য ব্যায়াম সর্বদা এক নয়
• চিট ডে-র ধারণা খারাপ নয়। কিন্তু সপ্তাহের ছ’দিন নিয়ম মেনে চলার পরে এক দিন অতিরিক্ত অনিয়ম ক্ষতিকর

গোড়াতেই গলদ

সবচেয়ে আগে জানা জরুরি, ভুঁড়ি কেন হয়। অনেকেই তেমন ভাবে প্রচুর ভাত খান না অথবা দুপুরে ভাতঘুমেও অভ্যস্ত নন। তবুও বাড়তে থাকে ভুঁড়ি। এর কারণ কী?

• কেক-ক্যান্ডির মতো অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, প্যাকেটজাত ফলের রস, পানীয় খেলে মেদ বাড়ে।

সিট আপ

• খাবারের তালিকায় কম প্রোটিন রেখে যদি অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট রাখা হয়, তা ক্ষতিকর। মাছ, মাংস, ডাল, পনির জাতীয় প্রোটিন পেট অনেকক্ষণ ভরিয়ে রাখে। খিদে কম পায়। আবার সেগুলি না খেলে ভাত-রুটি বেশি খাওয়ার প্রবণতাও থাকে।

• যে কোনও ধরনের খাবার যাতে ট্রান্স ফ্যাট থাকে, তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ফাস্ট ফুড, চিপস, ক্র্যাকার, কাপকেকের মধ্যে থাকা ফ্যাট ইনফ্ল্যামেশন বাড়ায়। ভুঁড়ি বাড়তে থাকলে ওবেসিটির ঝুঁকিও থাকে।

বজ্রাসন ও (ডান দিকে) পদ্মাসন

• অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারের সমস্যার মতো শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও ভুঁড়ি বাড়ায়।

• কোনও রকম এক্সারসাইজ় না করে অনেকক্ষণ ধরে একই জায়গায় বসে থাকার অভ্যেস ভুঁড়ির অন্যতম কারণ। আবার শরীরে যে পরিমাণ ক্যালরি দরকার, তার চেয়ে বেশি ক্যালরি ইনটেক করলে এবং তার ক্ষয় না হলে পেটের চারপাশেই জমা হয় মেদ।

• অতিরিক্ত স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে সাধারণত মানুষ খাবারের দিকেই হাত বাড়ায়। আর স্ট্রেসের কারণে যে সমস্ত খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়, তা থেকেই বাড়ে ভুঁড়ি।

• স্মার্টফোনের ব্যবহার, ধূমপান, পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমোনো, বংশগত কারণেও বাড়তে পারে ভুঁড়ি।

কমানোর দাওয়াই

ভুঁড়ি কমানোর জন্য শুধু মাত্র ডায়েট করাই ঠিক নয়। নিয়ম মেনে ঠিক মতো খাবার খাওয়া এবং ব্যায়ামের মাধ্যমেই ভুঁড়ি কমানো সম্ভব। ব্যায়ামের জন্য যাঁর যেমন সুবিধে, সেই অনুযায়ী ফিটনেস ট্রেনিং অথবা আসন করতে পারেন।

ফিটনেস ট্রেনার চিন্ময় রায় বলছেন, ‘‘ভুঁড়ি কমানোর জন্য বিশেষ কোনও ব্যায়াম নেই। আর সিট আপ করলেই যে কমে, তাও ঠিক নয়। দেখা গিয়েছে, জোর বাড়ানোর ব্যায়াম করলে সবচেয়ে ভাল কাজ হয়। স্কোয়াট, লাঞ্জ, স্টেপ আপ, ডেড লিফট, হ্যামস্ট্রিং কার্ল এর মধ্যে অন্যতম।’’ আসলে এগুলি করতে শরীরকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ক্যালরিও ঝরে অনেক বেশি। ফলে এক্সারসাইজ় ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে দু’ভাগে। সপ্তাহের চার দিন স্ট্রেংথ ট্রেনিং অর্থাৎ জোর বাড়ানোর এক্সারসাইজ় করতে হবে। বাকি তিন দিন জগিং, দৌড়ঝাঁপ ইত্যাদি করা যেতে পারে। আর পাশাপাশি ভুঁড়ি কমাতে করে যেতে হবে কোর এক্সারসাইজ়। যেমন প্ল্যাঙ্ক, সাইড প্ল্যাঙ্ক, ব্রিচ ইত্যাদি। ‘‘গোড়ার দিকে সপ্তাহ দু’-তিনেক প্ল্যাঙ্ক জাতীয় ব্যায়াম করে নিতে হবে। তার পরে সাহায্য নিতে হবে সুইস বল বা এক্সারসাইজ় বল বা মেডিসিন বলের। রাশিয়ান টুইস্ট, রোল আউট জাতীয় এক্সারসাইজ় করলে পেটের পেশি অনেক টানটান হয়,’’ বললেন চিন্ময়। তবে বলের সাহায্যে ভুঁড়ি কমাতে গেলে প্রশিক্ষিত ট্রেনারের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।

যাঁরা এই জাতীয় এক্সারসাইজ় করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না, তাঁরা যোগের আসন করতে পারেন। তবে এই জাতীয় ব্যায়ামের অভ্যেস করতে হবে নিয়মিত। শুধু ভুঁড়ি কমানোই নয়, সার্বিক ভাবে শরীর সুস্থ রাখতেও এ ধরনের ব্যায়ামের জুড়ি মেলা ভার। যোগ বিশেষজ্ঞ অনীশ রঘুপতি বলছেন, ‘‘বিএমআই বা বডি মাস ইনডেক্সের কথা মাথায় রেখে এগোনো ভাল। বিএমআই-এর নন ওবিস রেট ১৮ থেকে ২৫-এর মধ্যেই থাকা উচিত। কোনও কারণে তা ৩০-এর উপরে উঠলে চিন্তার বিষয়।’’ তাঁর কথায় সপ্তাহে তিন দিন সূর্যনমস্কার করা ভাল। আর বাকি তিন দিন অন্যান্য ব্যায়ামে মনঃসংযোগ করতে পারেন।’’ সেতু আসন, অর্ধচন্দ্রাসন, পার্শ্বচন্দ্রাসন, মৎস্যাসন, অর্ধমৎস্যেন্দ্রাসন, বজ্রাসন ভুঁড়ি কমাতে সক্ষম। তবে যাঁদের হাঁটুর সমস্যা আছে, তাঁরা অবশ্যই বজ্রাসন বাদ দেবেন। অনেকেরই ধারণা, কপালভাতি আসন করলে ভুঁড়ি কমে তাড়াতাড়ি। ‘‘তবে তার মানে অনেকক্ষণ ধরে কপালভাতি করা মোটেও ঠিক নয়। গুনে গুনে ১০০ বার অথবা তিন মিনিটই রোজকার জন্য যথেষ্ট। অতিরিক্ত কপালভাতি আবার মেরুদণ্ডের সমস্যা তৈরি করে,’’ বলছেন অনীশ। এ ছাড়াও তাঁর কথা অনুযায়ী, মাসে এক দিন স্বচ্ছন্দে উপোস করতে পারেন। ‘একাদশী ডায়েট’ নামে পরিচিত এই ডায়েটে সারাদিন উপোস করতে হয়। এতে শরীরের নানা প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়। তবে তা মাসে এক দিনের জন্যই।

নজরে ডায়েট

ভুঁড়ি কমানোর জন্য যদি ৬০ শতাংশ উপায় ব্যায়াম থেকে আসে, তা হলে বাকি ৪০ শতাংশ অবশ্যই ডায়েট মেনে। এক মাসে পাঁচ কিলো বা দশ দিনে সাত কিলো ওজন কমানোর ভ্রান্ত ধারণাকে প্রথমেই বাদ দিতে হবে। প্রত্যেক সপ্তাহে মোটামুটি ৭৫০ গ্রাম ওজন কমানোই ভাল। তবে ভুঁড়ি কমাতে কিন্তু প্রত্যেক সপ্তাহেই অল্প অল্প করে ওজন কমাতে পারেন। ডায়েটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘দিনে তেলের পরিমাণ যেন থাকে চার-পাঁচ চামচ। মাটন তো অবশ্যই কম খাবেন। পারলে কাঁকড়া, চিংড়ির মাথা, ডিমের কুসুমও বাদ রাখুন।’’ লো ক্যালরি ও লো ফ্যাট ডায়েট মেনে চললে ভুঁড়ি কমানোর কাজটা অনেকটাই সহজ হয়। তবে রাস্তা থেকে দই না কিনে ঘরে দই পাততে পারেন। বেশি ভাত খাওয়ার বদলে রুটি বা ব্রেড জাতীয় কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটও খাওয়া যায়। ওট্‌স, ডালিয়া দিয়ে প্রাতরাশ করতে পারেন। খাদ্যতালিকায় অবশ্যই থাক কাঁচা লঙ্কা। সকালে ফল খেতে পারেন। টকজাতীয় ফল খাওয়া যেতে পারে সন্ধেয়। এ ছাড়া গ্রিন টি বা মাচা টি থাকুক তালিকায়। ‘‘যা খাবেন, তা যেন নিজের প্রয়োজনীয় ক্যালরির বেশি না হয়। এক বারে এক থালা খাবার না খেয়ে বারবার অল্প পরিমাণে খাওয়াই শ্রেয়। আর ফ্যাট বার্নিং পিল অনেক ক্ষেত্রেই নানা প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। তাই সেগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভাল,’’ বলছেন সুবর্ণা।

ঠিকঠাক ডায়েট ও ব্যায়ামের সাহায্যে ভুঁড়ি কমানো সম্ভব। ভুঁড়ি কমানোর দাওয়াই হল সর্বদা সক্রিয় থাকা। ব্যায়াম না করেও ঝাড়পোঁছ, ঘর মোছা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার মাধ্যমে চাইলেই ভুঁড়ি অনেকটা কমানো যায়। তবে যা-ই করুন, তা যেন হয় নিয়মিত। তা হলে ভুঁড়িও কমবে, থাকবেনও সুস্থ।

মডেল: রিয়া ভট্টাচার্য, স্নেহা বসু, ছবি: অমিত দাস (স্নেহা), আশিস সাহা (রিয়া), মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত (স্নেহা), লোকেশন: ভর্দে ভিস্তা ক্লাব, চকগড়িয়া

Diet Exercise Health Fitness

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}