ঘর তো কেবল চারটি দেওয়াল আর ছাদ নয়। নিজের পরিচয় এবং আশ্রয়ও বটে। আর তা-ই যদি অযত্নে পড়ে থাকে, তার প্রভাব পড়ে মনে। এমনকি স্বাস্থ্যেও। কিন্তু আলস্য এবং অতিরিক্ত ব্যস্ততার কারণে গোছানো হয়ে ওঠে না সব সময়ে? এই পরিস্থিতিতেই আপনার প্রয়োজন কেবল খানিক সাহায্যের। লোকবল নয়, মনোবল। সঙ্গে কৌশল। অগোছালো বাড়িকে ‘ঘর’ বানানোর জন্য খুব বেশি না খাটনির প্রয়োজন নেই। শুধু প্রয়োগ করে দেখুন কয়েকটি উপায়। এর জন্য গোটা দিন খরচ করারও দরকার নেই।
১. ঘরের একটি ছোট্ট অংশকে বেছে নিন। একটি বইয়ের তাক অথবা একটি ড্রয়ার। এ বার ঘড়িতে বা ফোনের টাইমারে ১০ মিনিট সেট করে ফেলুন। এই সময়ের মধ্যেই যথাসম্ভব ধুলো ঝেড়ে গুছিয়ে নিন নিজের মতো। পরের দিন আবার অন্য কোনও অংশের দিকে নজর দেবেন। ছোট ছোট পদক্ষেপে এগোলে মানসিক ও শারীরিক ক্লান্ত আসবে না। ধৈর্যের বাধও ভাঙবে না।
২. গোটা বাড়ির মধ্যে এমন অনেক জিনিস রয়েছে, যা আপনি গত এক বছরের মধ্যে এক বারও ছুঁয়েও দেখেননি। কিন্তু কোনও এক কাল্পনিক দিনের জন্য তুলে রেখে দিয়েছেন। এর ফলে ঘরে জায়গার অভাব হয়। ফলে অন্তত এক বছরের মধ্যে যা যা ব্যবহার করেননি, সেগুলিকে দান করে দিন।
৩. ‘১২-১২-১২’ নিয়ম জানেন? বাড়িতে আপনার চোখের সামনে অজস্র জিনিস রয়েছে। তার মধ্যে ১২টি জিনিস ফেলে দেওয়ার জন্য বেছে নিন। ১২টি জিনিস দান করার জন্য আলাদা করে রাখুন। অন্য আরও ১২টি জিনিস তুলে নিন, যেগুলির জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকা সত্ত্বেও এ পাশ-ও পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেগুলিকে জায়গা মতো রাখুন। শুনে পরিশ্রমের মনে হলেও রোজ এই নিয়ম মেনে চললে খুব তাড়াতাড়ি ঘর গোছানো হয়ে যাবে। এই পদ্ধতিতে চললে বাড়ি কখনওই প্রবল অগোছালো হয় না।

দানবাক্স হিসেবে একটি বাক্স হাতের কাছে রাখলেই ঘর গোছানোর কাজ সহজ হয়ে যাবে। ছবি: সংগৃহীত।
৪. বাড়িতে এমন অনেক জিনিস রয়েছে, যা ব্যবহার কবে করবেন, অথবা আদৌ করবেন কি না, তা নিয়ে ধন্দে থাকেন সবাই। সে সব কিছুর জন্য একটি বাক্স প্রস্তুত করুন। ৩০ দিন অপেক্ষা করে দেখুন, যেগুলির প্রয়োজন নেই, সেগুলি দান করে দিন, অথবা অন্য রূপ দিয়ে পুনর্ব্যবহারের কাজে লাগিয়ে ফেলুন।
৫. অধিকাংশ বাড়িতেই টেবিল, টুল, বা যে কোনও আসবাবের উপরিতল ফাঁকা পেলে তাতে এক এক করে জিনিস চাপতে থাকে। আর তাতেই ঘর সবচেয়ে বেশি নোংরা দেখায়। প্রতি দিন ১০ মিনিট রাখুন নিজের জন্য। যখন আসবাবের উপরিতল থেকে জিনিসপত্র সরিয়ে জায়গা মতো তুলে রাখবেন। এতেই ঘর পরিচ্ছন্ন দেখাবে।
৬. ঘর গোছানোর ক্ষেত্রে এই উপায়টিই সবচেয়ে কার্যকরী। রোজের রুটিনে নতুন অভ্যাস তৈরি করতে হবে। যখনই জায়গার জিনিস জায়গায় নেই দেখবেন, তখনই সেটি তুলে নিয়ে রেখে দেবেন। এই অভ্যাসের দাস হলে আলাদা করে আর গোছানোর প্রয়োজন পড়ে না রোজ।
৭. কাগজপত্র প্রত্যেক বাড়িতেই অনেকখানি জায়গা নিয়ে থাকে। কেবল খবরের কাগজ নয়, বিদ্যুতের বিল, গ্যাসের বিল, বাজারের ফর্দ, নম্বর লেখা কাগজের টুকরো, এমন গুচ্ছ গুচ্ছ কাগজ চঋদিকে পড়ে থাকে। প্রয়োজন বুঝে কিছু কাগজ ফেলে দিন। নয়তো ফাইল বানিয়ে যত্নে রাখুন।

ঘর গোছানোর সময়ে ‘১২-১২-১২’ নিয়ম মেনে চলতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত।
৮. প্রত্যেক সপ্তাহে নিজেকে মাত্র ১০টি মিনিট দেবেন। নিয়ম করে ঘর বা রান্নাঘরের আলমারির অন্তত একটি তাক খালি করবেন। জিনিস নামিয়ে সেই তাক পরিষ্কার করে পরে আবার গুছিয়ে রাখবেন।
৯. আরও এক অভিনব উপায় রয়েছে, যার সাহায্যে ঘর গোছানোর কাজটিকে খুব কষ্টসাধ্য মনে হবে না। ‘একটি ভিতরে, একটি বাইরে’। নতুন কোনও জিনিস কিনলে একই সঙ্গে পুরনো কোনও জিনিস বাতিল করতে হবে। এর ফলে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জমবে না ঘরের মধ্যে।
১০. দানবাক্স হিসেবে একটি বাক্স হাতের কাছে রাখুন। যখনই কোনও জিনিসের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে, তখনই ঘরের অন্য জায়গা থেকে তুলে এনে বাক্সে রেখে দেবেন। সেই বাক্স ভরে গেলেই দানের কাজ সেরে ফেলবেন। সেই জায়গায় বসবে নতুন বাক্স।