করোনা -ত্রাসে ভুগছে গোটা বিশ্ব। ছবি: পিটিআই।
করোনা-আতঙ্ক ক্রমে চেপে ধরছে সারা বিশ্বকে। রোজ বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। রোগ নির্ণয়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাঝেও সেই সব ঘটনায় ত্রাস ছড়াচ্ছে আরও। তবে রোগের সঙ্গে লড়তে গেলে সেই রোগের প্রকোপ, ভাইরাসের ধরন এ সবও জানতে হবে বইকি।
কোভিড-১৯ কী?
করোনাভাইরাস পরিবারের এই সদস্য নতুন গজিয়ে ওঠা মুখ নয়। বরং করোনা গ্রুপের আরও কযেক জন নির্বিবাদী সদস্যের মধ্যেই এক জন বলে গণ্য হত এত দিন। কিন্তু এই ভাইরাস গত বছর ডিসেম্বরের আগেই নিজদের ভোল বদলে জেনেটিক মিউটেশন ঘটিয়ে ভয়াল হয়ে ওঠে। শুধু সংক্রমণ ঘটানোই নয়, মৃত্যুর ক্ষমতাতেও সকলকে ছাপিয়ে গেল। গত ডিসেম্বরে চিনের উহান থেকে এটি ছড়িয়ে পড়া শুরু করে। মনে করা হচ্ছে, প্রথমে বাদুড় ও এক বিশেষ প্রজাতির সাপের দেহ থেকে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। অর্থাৎ পশু থেকে মানুষে আসে। পরে সংক্রমণ ছড়াতে বেছে নেয় মানুষেরই শরীর। তাই প্রথম অবস্থার স্বভাব ছেড়ে এ বার সে মানুষের থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার স্বভাবেই নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলল।
কী কী হয়?
করোনাভাইরাসের প্রকোপে কোভিড-১৯-এর শিকার হলে প্রাথমিক ভাবে জ্বর, শুকনো সর্দি, শুকনো কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ছাড়াও কখনও কখনও বমি বমি ভাব, ডায়াবিয়াও এই ভাইরাসের কারণে হতে পারে। মারাত্মক আকার নিলে নিউমোনিয়াও হতে পারে। সরাসরি ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এই ভাইরাস। বেশি আক্রান্ত হন কম প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষরা।
আরও পড়ুন: কোভিড ১৯–এর ওষুধ এসে গেল? কী বলছেন চিকিৎসকরা
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কী ভাবে ছড়াবে?
আক্রান্ত রোগীর কশি-হাঁচির ড্রপলেট থেকে এই রোগ ছড়ায়। এক মিটার দূর পর্যন্ত এই ভাইরাস বাতাসে চলাফেরা করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে সুস্থ মানুষের শরীরে এই ভাইরাস সহজেই ঢুকে পড়ে। তবে এতে খানিক রহস্যও আছে, আর তার হাত ধরেই এই ভয় আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে। এই ভাইরাসে কে আক্রান্ত তা বুঝতেই সময় বয়ে যায়। মানবশরীরে প্রবেশ করে প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত কোনও ট্যাঁ ফোঁ করে না এই ভাইরাস। রোগলক্ষণ প্রকাশ পায় এক সপ্তাহ পর। ফলে বোঝাই যায় না কার শরীরে ভাইরাস আছে না নেই। দেখা গেল, আপাত সুস্থ মানুষটির সঙ্গে ওঠাবসা করলেন, পরের সপ্তাহে তাঁরই তেড়ে জ্বর এল বা করোনা টেস্টে পজিটিভ এল। তখন কিন্তু মেলামেশার দায়ে বিপদে পড়বেন আপনিও।
তা হলে কী করব?
• কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চিকিৎসকরা ইতিমধ্যেই বলেছেন। সমস্ত চিকিৎসকরাই এ বিষয়ে একমত।
• ঘন ঘন নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে হাত ধুতে হবে। হাত ধোবেন আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল মেশানো হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে।
• হাতের কাছে রাখুন হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
• ঘর থেকে বেরনোয় রাশ টানুন। লকডাউন, আইসোলেশন পদ্ধতি মেনে চেষ্টা করুন সব সময় বাড়িতে থাকতে।
• সারা বছর সর্দির ধাত থাকলে বা অসুস্থ হলে মাস্ক পরুন।
• রাস্তার ধুলোবালি এড়ান।
• কাফ এটিকেট মেনে চলুন। তালু নয়, বাহু ঢেকে হাঁচুন বা কাশুন। তাতে হাতের তালু জীবাণুমুক্ত থাকবে।
• যেখানে সেখানে কফ বা থুতু ফেলা বন্ধ করুন।
• সর্দি-কাশি হলে ব্যবহৃত রুমাল নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন বা জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে ফেলুন প্রতি দিন।
• বিদেশ ভ্রমণ তো বন্ধই, সঙ্গে বিদেশ ও প্রবাস থেকে আসা লোকজনের সঙ্গও এড়িয়ে চলুন।
• বাড়িতে কারও জ্বর-সর্দি-কাশি হলে দিন তিনেক অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স করার পরেও না সারলে তাঁকে করোনা টেস্ট করাতে হবে। পজিটিভ ধরা পড়লে সঙ্গের লোকজনও কোয়রান্টিনে যাবেন।
সাধারণ জ্বর না কি কোভিড-১৯, বুঝব কী করে?
না। বোঝার তেমন উপায় নেই। অন্তত তেমনটাই মত সংক্রামক অসুখ ও বক্ষবিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্তের। সাধারণ অসুখ বা ফ্লু-তে আক্রান্ত হলে এই রোগ তিন দিন বা পাঁচ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক কোর্সেই অনেকটা ভাল হয়। কিন্তু অসুখ উত্তরোত্তর বাড়তে থাকলে বা কমার নামগন্ধ না থাকলেই সচেতন হতে হবে। গবেষক ও চিকিৎসকরা এর প্রতিষেধক এখনও বার করতে না পারলেও চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: সাবধান হোন, করোনাভাইরাসের স্টেজ থ্রি আটকাতে হবে
আরও পড়ুন: সর্দি, কাশি হলেই উদ্বিগ্ন হবেন না, কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
যদি আক্রান্ত হই, কী করব?
প্রথমেই টেনশন করা একেবারে কমান। ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই কোভিড-১৯-এর ক্ষমতা খুব সাধারণ। সেরেও যায়। ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই অসুখ ভয়ের হয়ে দাঁড়ায়। মারাত্মক আকার নেয় ২-৩ শতাংশের বেলায়। তাই সচেতন হলে ও নিয়ম মানলে এই অসুখ খুব মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে না। সাধারণ ফ্লুয়ের মতো অ্যান্টিবায়োটিকে না কমলেই সচেতন হোন। খবর দিন স্থানীয় প্রশাসন বা চিকিৎসককে। ফোন করতে পারেন রাজ্যের দেওয়া হেল্পলাইন নম্বরেও (হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০০৩১৩৪৪৪২২, ০৩৩২৩৪১২৬০০) ফোন করতে পারেন। কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে এগুলোই সাহায্য করবে। যত দ্রুত চিকিৎসকদের আওতাধীন হবেন, ততই ঢুকে পড়বেন সুরক্ষাবলয়ে।
মৃত্যুর হার কেমন?
অঙ্কের হিসেবে আক্রান্তদের মাত্র ১ শতাংশেরও কম মানুষের মৃত্যু ঘটানোর ক্ষমতা এর রয়েছে। তবে গণহারে ছড়িয়ে পড়লে এই হার ৩.৪ শতাংশ অবধিও পৌঁছে যেতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত। তবে বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে ভয় বেশি হলেও, দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে তাঁদের প্রায় ৯০ শতাংশের বেলাতেই সেরে ওঠার সম্ভাবনা আছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
করোনা ঠেকাতে বাড়িতে থাকা, বাইরের লোকের সংস্পর্শ এড়ানোই অন্যতম সেরা উপায় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
গাড়িঘোড়া থেকেও কি ছড়াতে পারে?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর মতে, আপাত ভাবে অনেকেই ধরে নিচ্ছেন গাড়িঘোড়া থেকে এটা ছড়ায় না। ঠিকই, সরাসরি গাড়িঘোড়া থেকে তা ছড়ানোর কোনও উপায় নেই। কিন্তু আপনার সিটেই একটু আগে কোনও আক্রান্ত মানুষ বসেছিলেন কি না তার কী প্রমাণ আছে? গাড়ির সিটে বা হাতলে ১২-৪৮ ঘণ্টা বাঁচে এই জীবাণু। তাই এ সব এড়াতে গাড়িঘোড়া না চড়াই উচিত। বাড়িতে থেকেই রোগ আটকানোয় সাহায্য করা উচিত।
নতুন গবেষণায় ওষুধ কি বেরলো? আমেরিকার দাবি কী?
স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখে পাওয়া গেল সুখবর, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিনের যুগলবন্দিই নাকি সেই ম্যাজিক ওষুধ, যে করবে মুশকিল আসান। এই সময়ই ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ) জানাল, না, এত দ্রুত কিছু করা যাবে না। ক্লোরোকুইন-অ্যাজিথ্রোমাইসিন কোনও ম্যাজিক ওষুধ নয়। সব ধরনের কোভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রে তারা কাজ করবে, এমন কথা বলা যায় না। কাজেই এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, তাতে রুটিনমাফিক এই ওষুধ দেওয়া যাবে না।
হাত ধুতে হবে বার বার।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পণ্ডার মতে, “ক্লোরোকুইনের মতো ম্যালেরিয়ার ওষুধের ভাইরাস মারারও ক্ষমতা রয়েছে, আমরা বহু দিন ধরেই জানি সে কথা। চিনে যখন আচমকা মহামারী লেগে গেল, তখন এই ওষুধ দেওয়া হয়েছে। কিছু উপকারও হয়েছে তাতে। তবে এখনও পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে গাইডলাইন মেনে চলা হচ্ছে, তাতে কোথাও এর রুটিন ব্যবহারের কথা বলা নেই। আর অন্যান্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, লোপিনাভির ও রেটোনাভির কম্বিনেশনের সঙ্গে ক্লোরোকুইন দিলে বরং নানা রকম ক্ষতি হতে পারে।
অ্যাজিথ্রোমাইসিন আমরা মোটামুটি নিয়মিত দিই। প্রথমত, ভাইরাসের সঙ্গে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থাকে। কখনও আবার আশঙ্কা থাকে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের। সে সব ঠেকাতে এই ওষুধ দিতে হয়। দিতে হয় প্রদাহ কমানোর জন্যও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy