বাঙালি বরাবরই 'চর্ব্য ও চোষ্য' খেয়ে বেঁচেছে। তাই গ্যাস,-অম্বল-চোঁয়াঢেকুরে ভোগান্তিও বেড়েছে। ঘরে ঘরে প্রেসার-সুগার-কোলেস্টেরল। কারও গেঁটে বাত, তো কারও কোষ্ঠকাঠিন্য। কিন্তু, ভোজনরসিক বাঙালিও ধীরে ধীরে খাদ্য-সচেতন হচ্ছে। ওজন কমানোর জন্য লো ক্যালরি ডায়েটের দিকে ঝুঁকছেন সকলে। সে মধ্যবিত্ত ঘরের গৃহবধূই হোন বা ফ্যাশনিস্তা সেলিব্রিটি— হরেক রকম ডায়েট নিয়ে নাড়াঘাঁটা করছেন সকলে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন এক ডায়েটের কথা বলছেন, যা মেনে চলতে পারলে শুধু ওজনই কমবে না, নীরোগ শরীরে বেঁচে থাকা যাবে বহু দিন।
৩০ বছর ধরে গবেষণা করে এমন ডায়েটের রহস্য জানিয়েছেন হার্ভার্ডের গবেষকেরা। ‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে এই গবেষণার খবর প্রকাশিতও হয়েছে। প্রায় এক লক্ষ মানুষের উপর ৩০ বছর ধরে পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকেরা নিশ্চিত ভাবেই দেখেছেন, যাঁরা সেই ডায়েট মেনে চলেছেন, তাঁরা ৭০ বছর অবধি সুস্থ শরীরে বেঁচে রয়েছেন। অসুখবিসুখ স্পর্শ করতে পারেনি।
আট রকমের ডায়েটের কথা বলেছে হার্ভার্ড, যার মধ্যে অতি সহজটি হল ‘অলটারনেটিভ হেল্দি ইটিং ইনডেক্স’ (এএইচইআই)। দাবি করা হয়েছে, এই ডায়েট মেনে চললে ক্রনিক অসুখের থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। হয়তো হেসেখেলে কাটিয়ে দেওয়া যাবে ১০০ বছর। ঠিক যেমন ‘ব্লু জ়োন’এলাকার বাসিন্দারা বিশেষ এক রকম ডায়েট করেন, অনেকটা তেমনই। উল্লেখ্য, জাপানের ওকিনাওয়া, ইটালির সার্ডিনিয়া, কোস্টারিকার নিকোইয়া, গ্রিসের ইকারিয়া এবং ক্যালিফর্নিয়ার লোমা লিন্ডা— এই পাঁচ জায়গা হল বিশ্বের ব্লু জ়োন। সিঙ্গাপুর এই তালিকায় নবতম সংযোজন। জীবনধারণ সম্পর্কে ভীষণ সচেতন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। বলা হয়, বিশেষ এক রকম ডায়েট মেনে চলার কারণেই এখানকার বাসিন্দাদের গড় আয়ু নাকি বেশি।
হার্ভার্ডের গবেষক ফ্র্যাঙ্ক হু জানিয়েছেন, এই ডায়েটে উদ্ভিজ্জ খাবারের উপর বেশি করে জোর দেওয়া হয়েছে। রোজের খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে নানা ধরনের শস্য, শাকসব্জি, মরসুমি ফল, বাদাম, বীজ। চিনি, প্যাকেটজাত, প্রক্রিয়াজাত যে কোনও খাবার, অ্যালকোহল একেবারেই বাদ দিতে হবে।
আরও পড়ুন:
পেট ভরে খাওয়া বা খেয়ে হাঁসফাঁস করা নয়, সব সময়েই অল্প পরিমাণে খাওয়া দস্তুর এই ডায়েটে। কুড়ি শতাংশ জায়গা পেটে সব সময়েই খালি থাকবে। এই ডায়েট হবে ভিটামিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ।
‘অলটারনেটিভ হেল্দি ইটিং ইনডেক্স’ ডায়েটে কী কী খেতে হবে?
মরসুমি ফল ও সব্জি।
দানাশস্যের মধ্যে ওট্মিল, ব্রাউন রাইস, কিনোয়া, পপকর্ন।
বাদাম ও বিভিন্ন ধরনের ডাল।
বাদাম ও নানা ধরনের বীজ।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যেমন অ্যাভোকাডো, ডিম, মাছ।
রান্না হতে হবে অলিভ তেলে।
মেনে চলুন
রান্নায় দিন বাদামজাত মাখন (আমন্ড বাটার, পিনাট বাটার ইত্যাদি), অলিভ অয়েল।
স্যালাডে খান ফল, স্প্রাউটস।
চিনি, গুড়, মধু এড়িয়ে চলা ভাল।
চা-কফি পানের পরিমাণ কমাতে হবে। জল খেতে হবে বেশি করে।
রোজের ডায়েটে রাখতে হবে টাটকা ফলের রস।
এই ডায়েট অনুসরণে পেশির নমনীয়তা বাড়বে। ফলে অনেক বেশি কর্মক্ষমও হয়ে ওঠা যাবে।