Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Health

ভুল ডায়েেটর ফল মারাত্মক

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না নিয়ে ডায়েট করলে শরীরের বাসা বাঁধতে পারে নানা রোগ। ভুল ডায়েটের মারণফাঁদ থেকে দূরে থাকুন, সুস্থ থাকুন

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ ০০:১৮
Share: Save:

দিনকয়েক আগেই ডায়েট রুটিনে ভুল হওয়ায় কারণে মারা গেলেন অভিনেত্রী মিষ্টি মুখোপাধ্যায়। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, ডায়েট মেনে চলায় ত্রুটি থাকায় কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয় তাঁর, তা থেকেই মৃত্যু। ঠিক ডায়েট যেমন সুস্থ শরীরের চাবিকাঠি, তেমনই ভুল ডায়েট কিন্তু মৃত্যু অবধি ডেকে আনতে পারে। তাই ডায়েটে কী রাখবেন তা যেমন জরুরি, সেই ডায়েট কত দিন ফলো করবেন সেটা জানাও ততটাই জরুরি। কোনও অসুখের চিকিৎসায় আমরা যেমন ঘড়ি ধরে, দিন গুনে ওষুধ খাই, ডায়েটও কিন্তু এ ভাবেই মেনে চলতে হয়। বিশেষ করে, কিটো ডায়েট, ইন্টারমিটেন্ট ডায়েট ঠিকঠাক মেনে না চললে ফল হতে পারে প্রাণঘাতী।

ডায়েট কেন করবেন?

বেশির ভাগ মানুষই ওজন কমাতে বেছে নেন কোনও একটি ডায়েট। অনেকে ইন্টারনেট দেখে বা বন্ধুবান্ধব ভাল ফল পেয়েছে দেখে সেই ডায়েটই হয়তো ফলো করতে শুরু করে দেন। ডায়াটিশিয়ানের কাছে গেলেও অনেকেই ডায়েট চার্ট ক’দিন ফলো করার পরে মাঝপথেই তা ব্রেক করে ফেলেন। এর ফল হতে পারে মারাত্মক। তা ছাড়া মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র ওজন কমানোই ডায়েটের উদ্দেশ্য নয়, বরং সুস্থ থাকতে ঠিক ডায়েট বাছতে হবে।

কোন ধরনের ডায়েটে ঝুঁকি বেশি?

ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পাল চৌধুরী বললেন, ‘‘কিটোজেনিক ডায়েট খুব মেপে মেপে মানতে হয়। যেহেতু শর্করা বেশি খাওয়া যায় না, ধীরে ধীরে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে হয়। তার সঙ্গে যিনি এই ডায়েট করবেন, তিনি আদৌ এই ডায়েট করতে পারবেন কি না সেটাও দেখা জরুরি। গর্ভাবস্থায় বা হৃদ্‌রোগ থাকলে এ ডায়েট না করাই ভাল। কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিটো করার সময়ে অনেক সাপ্লিমেন্টও দেওয়া হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ভুল ভাবে এ ডায়েট মানলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া, হাইপোটেনশন হতে পারে।’’

দীর্ঘ দিন কিটো ডায়েট মেনে চললে বিভিন্ন অসুখও হতে পারে। ডায়াটিশিয়ান প্রিয়া আগরওয়ালের কথায়, ‘‘কিটো ডায়েটে প্রোটিন ও ফ্যাট বেশি গ্রহণ করা হয়। কোলেস্টেরলের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে আর্টারি ব্লক করতে পারে। অন্য দিকে প্রোটিন বেশি খাওয়া হয় বলে কিডনিকে বেশি কাজ করতে হয়। এতে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিটো ডায়েট ফলো করার জন্য কিডনিতে স্টোনও হতে পারে। শুধু কিডনিই নয়, লিভারে ক্যানসারের মতো মারণরোগও হতে পারে। ফ্যাটি লিভার থাকলে তাদের এই ডায়েট একদম করা উচিত নয়। গ্যাসট্রাইটিস এবং ডায়াবিটিস থাকলে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং থেকেও দূরে থাকতে হবে।’’

বারো-চোদ্দো ঘণ্টা খাবার না খেয়ে দীর্ঘদিন এই ডায়েট মেনে চললেও কিন্তু শরীরের ক্ষতি হতে পারে। ডায়েটে যেমন কী খাবেন তা গুরুত্বপূর্ণ, কতক্ষণ অন্তর খাবেন, তা মেনে চলাও সমান জরুরি। ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘কিটো, ইন্টারমিটেন্ট... এই ধরনের ডায়েট এক মাস বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য করতে দেওয়া হয়। অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিজের ইচ্ছেমতো এই ধরনের ডায়েট মানা যায় না। মনে রাখতে হবে, সুষম আহারই ঠিক ডায়েট। শরীরে যেমন প্রোটিনের দরকার আছে, তেমনই ফ্যাট, কার্বস, ভিটামিনস, মিনারেলস... এ সবেরও দরকার আছে। অনেকেই ওজন কমাবেন বলে শুধু প্রোটিন খান বেশি করে। তা কিন্তু ঠিক নয়।’’ ওজন কমাতে চাইলে ধীরে ধীরে পরিমাণ কমান। প্রথম কয়েক সপ্তাহ ৫০০ ক্যালরি কমান। তার পর ১৫০, ২০০ করে স্টেপ বাই স্টেপ এগোতে হবে।

এর সঙ্গে কত ঘণ্টা অন্তর খাবার খাচ্ছেন, তা-ও খেয়াল রাখুন। তিন-চার ঘণ্টার বেশি গ্যাপ দেওয়া উচিত নয়। বরং সারা দিন দু’ঘণ্টা অন্তর ছোট ছোট মিল খান। এতে বরং বিএমআরও বাড়বে।

মনে রাখবেন

প্রত্যেকটি মানুষের শারীরিক গঠন, হজমশক্তি, বিএমআর আলাদা হয়। বয়স ও জেন্ডারও এখানে একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। শারীরিক গঠন অনুসারে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের শরীরে ক্যালরির চাহিদা সমবয়স্ক একজন মহিলার তুলনায় বেশি হয়। অন্য দিকে অনেকের বিভিন্ন রোগব্যাধি থাকতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস,

হৃদ্‌রোগ থেকে শুরু করে কিডনি, পিরিয়ডসের সমস্যাও থাকে। তাই কী খাবেন আর কী বাদ দেবেন, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

অনেক ডায়েটেই মিনারেলস ও ভিটামিনসের ঘাটতি মেটাতে কিছু সাপ্লিমেন্টস খেতে হয়। তবে তারও সময়সীমা আছে। সাপ্লিমেন্টস দিয়েই মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টসের চাহিদা মেটাতে থাকলে পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

আমরা ছোট থেকে যে পরিবেশে যা খেয়ে বড় হয়ে উঠেছি, আমাদের শরীরও তাই দিয়েই তৈরি। শরীরের গড়ন ও চাহিদাও সেই অনুযায়ী। তাই ভাত খেয়ে বড় হয়ে উঠে যদি হঠাৎ ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেন, তার বদলে শুধু সবজি ও মাংস সিদ্ধ খেতে থাকেন, তা হলে কিন্তু তা শরীর মেনে নেবে না। নানা রকম অসুখবিসুখ দেখা দেবে। তাই যা-ই খাবেন, পরিমিত ভাবে খান। সময়মতো খান। মনে রাখবেন, শুধু মেদহীন ছিপছিপে চেহারাই নয়, বরং রোগমুক্ত সুস্থ শরীর ধরে রাখাটাই কিন্তু ডায়েটের আসল উদ্দেশ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Health Fitness Diet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy