চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ কংগ্রেসের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস বা অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা পরিষেবার মান নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছেন রোগীর পরিজনরা। অভিযোগ, কাউকে খরচ জোগাড় করে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে। কোনও রোগীকে এমআরআই করাতে নিয়ে গিয়ে কয়েকঘন্টা দাঁড করিয়ে রেখে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডে চিকিৎসক, নার্সদের একাংশ নিয়মিত রোগীদের দেখভাল করছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার আন্দোলনে নামে মাটিগাড়া যুব কংগ্রেস।
গত তিন বছরে জেই এবং এইএসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৩৮০ জন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে মারা গিয়েছেন। গত বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ৩৪ জন। কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি হাসপাতালে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এইএস-এ ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, তার নাম শুভজিৎ মোদক (০৪)। কোচবিহারের খাগরাবাড়ির ওই বালককে ৮ জুলাই ভর্তি করানো হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। তার পরেও উত্তরবঙ্গের জেলা হাসপাতালির একাংশে এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ওই রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবার পরিস্থিতি কেন এমন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর আত্মীয় থেকে বিরোধী দলগুলি। তাঁদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীও বিগত কয়েক মাসে একাধিকবার উত্তরবঙ্গে এসেছেন। অথচ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেননি। মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না বলে অভিযোগ। তা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্বের অন্যতম তথা মাটিগাড়ার নেতা বাবলু সরকার, মানব সিংহ, সুব্রত কুণ্ডু, সুজিত দাসরা।
অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় বলেন, ‘‘জেই বা এইএস রোগীদের খরচ হাসপাতাল থেকেই দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাইরে থেকে কারও ওষুধ কেনার কথা নয়। বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই ভাল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেও জেই বা এইএস-এর উপসর্গ নিয়ে রোগী আসার সংখ্যাও কমছে।’’ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার নির্মল বেরা অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের দাবি, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জেই বা এইএস রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড খোলার কথা বলা হলেও সেখানে রোগীকে রাখা হচ্ছে না। মেডিসিন ওয়ার্ডেই রোগীরা থাকছে। চিকিৎসকদের একাংশ নিয়মিত দেখছেন না।
এ দিন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান তারা। রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। পরে দফতরে ঢুকে অধ্যক্ষের কাছে তাদের অভিযোগ জানান।
বাবলুবাবু বলেন, ‘‘জেই বা এইএসে মৃত রোগীদের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ লেখা হচ্ছে না। কারা মারা যাচ্ছেন চা লুকোছাপা করার চেষ্টা হচ্ছে। সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে বাড়িতে চিকিৎসক এবং ওষুধ সরবরাহের আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে পরিস্থিতি অন্য। রোগীদের নিখরচায় ওষুধ মিলবে বলে জানানো হলেও জেই বা এইএস আক্রান্তদের পরিবারের তরফেই অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ বহন করতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ দেখছেন না।’’
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যত্রতত্র আবর্জনা ছড়িয়ে থাকা, ঝোপজঙ্গলে হাসপাতাল চত্বর ভরে ওঠায় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে যুব কংগ্রেস। অধ্যক্ষকে কয়েক জন নেতা বলেন, ‘‘আপনার দফতরের পিছনের অংশ ঝোপজঙ্গলে ভরে গিয়েছে। আবর্জনা ফেলতে গত বছর বড় গর্ত করা হলেও সেগুলি ঝোপজঙ্গলে ভরে গিয়েছে। চিকিৎসা বর্জ্য আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। দিন দশেক আগে বৈঠক করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তিন দিনের মধ্যে হাসপাতাল চত্বরের আবর্ঝনা, জঙ্গল সাফ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ সেই ও হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy