যথাযথ চিকিৎসা করলে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের জন্মগত সমস্যাও সারে। ছবি: শাটারস্টক।
আমাদের দেশে শিশুদের অনুপাতে শিশু বিশেষজ্ঞ অনেক কম। বিশেষ করে সদ্যোজাতদের কিছু জন্মগত নার্ভের অসুখের মোকাবিলা করার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেহাতই অপ্রতুল। কিছু বছর আগেও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের জন্মগত সমস্যার সেই অর্থে কোনও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ছিল না। সাম্প্রতিক কালে মেডিক্যাল সায়েন্স স্পাইনাল বাইফিডার মতো সদ্যোজাতদের নার্ভের জন্মগত সমস্যার যথাযথ চিকিৎসা করে তাদের অনেককেই স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে সক্ষম। সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারি’-র এক সম্মেলনে এ কথাই জানা গেল।
ভাবছেন, এই অচেনা নামের অসুখটা নিয়ে চিকিৎসকরা এতো চিন্তিত কেন? নামটা অচেনা হলেও রোগটা খুব অপরিচিত নয়। অঙ্কের হিসেবে সংখ্যাটা নেহাতই কম নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুসারে, প্রতি বছর এক হাজার জন বাচ্চা পিছু প্রায় ১–৫ জন এই সমস্যা নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। বলছিলেন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারির চিকিৎসক ও ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারির এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়। বিহার, পঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানে স্পাইনা বাইফিডা ও অ্যানেনকেফালি নামক জন্মগত ত্রুটির প্রবণতা তুলনামূলক ভাবে বেশি হলেও, আমাদের রাজ্যেও এই সংখ্যা নেহাত কম নয়। একটু সচেতন হলেই এই সমস্যা সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব, বলছিলেন ডা চট্টোপাধ্যায়।
কী এই স্পাইনা বাইফিডা? আসলে এটি মেরুদণ্ডের এক গঠনগত সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে নিউরাল টিউব ডিফেক্ট। মেরুদণ্ডের শক্ত হাড়ের আবরণের মধ্যে থাকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র। নানা কারণে মেরুদণ্ডের গঠন অসম্পূর্ণ থাকায় সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম মেরুদণ্ডের বাইরে থেকে যায়, আর এ থেকেই শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নানা অসুবিধে হয়।
আরও পড়ুন: ফোন হাতছাড়া করতে ভয়, কারও আবার খাবার দেখলেই আতঙ্ক! ফোবিয়ার তালিকায় যোগ হল আর কী কী?
মৃদু থেকে বাড়াবাড়ি, মোট চার ধরনের স্পাইনা বাইফিডা দেখা যায়। এদের মধ্যে সব থেকে মারাত্মক হল Myelomeningocele। মেরুদণ্ডে কোনও আড়াল না থাকায় স্নায়ুতে সংক্রমণের ঝুঁকি ভয়ানক বেড়ে যায়। কেননা উন্মোচিত নার্ভতন্ত্র থেকে অনবরত সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ) নিঃসরণ হয়। ফলস্বরূপ মাথায় জল জমে মাথার আকার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বড় হয়ে যায়। এর ডাক্তারি নাম ‘হাইড্রোকেফালাস’। এই সমস্যা হলে সিএসএফ-এর জলের চাপে মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। বাচ্চার মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধা পায়। হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হতে পারে। পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জনরা এই সমস্যা দূর করেন বিশেষ পদ্ধতিতে, মস্তিষ্কের ফ্লুইড বার করে দিয়ে।
স্পাইনাল বাইফিডার সচেতনতা বাড়ছে ক্রমশ।
ক্লোজড নিউরাল টিউব ডিফেক্ট হলে আংশিক পক্ষাঘাত এবং বাওয়েল ও ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের ঝুঁকি থাকে। অর্থাৎ নিঃসাড়ে মলত্যাগ প্রস্রাব করে ফেলে। এই ধরণের মেরুদন্ডের গঠনগত সমস্যা মেরামত করে সদ্যোজাতকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে পারেন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জনরা। জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব সার্জারি করা দরকার। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে স্পাইনাল কর্ডের অনাচ্ছাদিত অংশ পেশী ও ত্বকের সাহায্যে মেরামত করে দিলে অনেক জটিলতার হাত এড়ানো যায়। তবে সদ্যোজাত শিশুর অস্ত্রোপচারের জন্যে প্রয়োজন অত্যন্ত উন্নতমানের অপারেশন থিয়েটার এবং প্রশিক্ষিত ও দক্ষ সার্জন। তবে এই ধরনের জন্মগত সমস্যা প্রতিরোধ করা খুব কঠিন নয়।
আরও পড়ুন: ফ্যাটি লিভার খুব ভোগাচ্ছে? কী ভাবে জব্দ করবেন
কেমন করে রোগ ঠেকাব
সন্তান গর্ভে আসার আগে থেকেই ইচ্ছুক মাকে নিয়ম করে ফলিক অ্যাসিড খেতে হবে। হবু মায়ের ডায়বিটিস থাকলে এবং অতিরিক্ত ওজনও হবু সন্তানের এই সমস্যার জন্যে দায়ী হতে পারে। গর্ভাবস্থায় এপিলেপ্সি ও বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ওষুধ খেলেও গর্ভস্থ ভ্রূণের মেরুদণ্ডের গঠনগত সমস্যা হবার ঝুঁকি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)র নির্দেশ চাইল্ড বিয়ারিং এজে সন্তান ধারণ করার আগে থেকেই ফলিক অ্যাসিড খাওয়া বাধ্যতামূলক। এর ফলে নিউরাল টিউবের ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুর সংখ্যা অনেকটাই কমানো যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy