পুরনো দিনের যে রাজকন্যাদের সৌন্দর্য দেখে আমাদের পলক পড়ে না, তাঁদের অনেকেই চরম আবহাওয়ার দেশে থাকতেন। তখন এত প্রসাধনী, বাতানুকূল ঘর ছিল না! তবু তাঁরা নিখুঁত রূপসী থাকতেন কী ভাবে?
মিশরের লবণ, আল্পসের বরফ
রানি ক্লিয়োপেত্রা যখন সিজ়ার বা অ্যান্টনির মনোহরণ করেন, গ্রীষ্মের মিশর তখনও একই রকম গরম। অথচ সেই চড়া রোদ সম্রাজ্ঞীর অঙ্গে এতটুকু মলিনতা আনতে পারেনি। তাঁর জন্য সারা পৃথিবীর নদী-পর্বত-খনি খুঁড়ে রূপচর্চার উপাদান আনা হত। তাঁর স্নানকক্ষে যে জলাধার ছিল, তার গায়ে বসানো হত সমুদ্র ছেঁচে আনা পান্না। চৌবাচ্চাভরা উটের দুধ পান্নায় ঠান্ডা থাকত। তাতে দেহ ডুবিয়ে বসতেন রানি। হাত-পায়ে ঘষা হত ঘিয়ে মাখা লবণদানা। জল থেকে উঠে দাঁড়ালে তাঁর শরীরে পড়ত পাতলা মোমে মাখা বাদামের ক্রিমের প্রলেপ।
মিশরের আর এক রানির সময়ে ঘরের অনেক উঁচুতে মুখোমুখি করে জানালা কাটা হত। আরামদায়ক বাতাস খেলত ঘর জুড়ে। সোনা বা তামার পাত্রে জল ধরে রাখা হত। তাতে ডোবানো থাকত সুদৃশ্য শ্যাওলা! অন্দরমহল হিমেল রাখত তারা। রোমান সুন্দরীরা নকশাকাটা চাঁদোয়ার মতো দেখতে বিরাট ছাতা ছাড়া ঘরের বাইরে যেতেনই না।
ফলের রসে, ফুলের সুধায়
এ দেশে মুঘল বেগমরাও ক্রান্তীয় গরমে হাঁসফাঁস করতেন। তাই ঘন ঘন ফলের রস পান করতেন। জাহাঙ্গির মহিষী নূরজাহান স্থায়ী সমাধান আবিষ্কার করেন। তিনি দেখেছিলেন, ফোয়ারায় গোলাপের পাপড়ি ভাসালে তা জলে ঠান্ডা রেশ রেখে যায়। তা থেকেই গোলাপরস তৈরির কথা ভাবেন তিনি। তাঁদের অঙ্গমার্জনা ও সুগন্ধির অন্যতম উপাদান ছিল গোলাপি মধু। আর কারিপাতা দিয়ে মেহেন্দি তৈরি করে চুলের অকালপক্বতা রুখতেন। এতে মাথা ঘামতও কম।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শরীর জুড়োতে
• স্ক্রাব বা মাস্কে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে নিন
• দুধে কেশর ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সেই দুধ দিয়ে মুখ ধুলে মুখ পরিষ্কার হবে, সতেজও
• বাড়ির বারান্দা, ছাদ, জানালায় থাক গাছের সবুজ স্পর্শ। রোদ আড়াল করে হাওয়ায় থাকবে হিমেল পরশ
• ঘরের সাজে ব্যবহার করুন জুঁই, চাঁপা, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা
সোনার বিছা, পদ্মপাতা ও দিবানিদ্রা
বাংলার ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে লড়তে বঙ্গবালারা ভেষজের অ্যান্টিসেপটিকে আস্থা রেখেছেন। নিম, চন্দন, তুলসী ছাড়াও গন্ধরাজ লেবু, বট এমনকি ধুঁধুল পাতা থেঁতো করে দেহে লাগাতেন। ত্বক স্নিগ্ধ হত। সোনার বিছা, জরির ফিতে দিয়ে বাহারি খোঁপা করে চুলকে গরম থেকে বাঁচাতেন। গ্রীষ্মে তাঁদের প্রিয় ছিল তালপাতার পাখা। ঘাসের পর্দা টানা ঘরে, হাতির দাঁতের পালঙ্কে শুয়ে আছেন নবাবনন্দিনী, জল থেকে সদ্য তুলে আনা পদ্মপাতা দিয়ে হাওয়া করে দিবানিদ্রার আয়োজন হচ্ছে— এমন ছবি বারবার এঁকেছেন বাঙালি শিল্পীরা।
সাজে হিমেল ছোঁয়া
আগেকার জীবনযাত্রা যতই ইতিহাস হোক, তা বাস্তব বটে। তাই গরমের দাবদাহ থেকে বাঁচতে পুরনো পন্থা বেছে নিলে ক্ষতি কী?
রোদে বেরোনোর আগে কিংবা মেকআপ শুরুর আগে সুতির কাপড়ে বরফ মুড়ে তা মুখে লাগিয়ে নিন। এতে ত্বক আরাম পাবে। মেকআপ প্রডাক্ট যেন জেল-বেস্ড হয়। ত্বকে তেল বেশি হলে ধুলোময়লা সহজেই আকর্ষণ করবে। ফলে ত্বকের রোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে ব্রণ, ফুসকুড়ির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই মুখ ধোয়ার জন্য সামার ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। ফোমিং ফেসওয়াশ ভাল কাজ করবে।
ত্বক নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করা জরুরি। বেসন, টক দই, মধু ও গোলাপজল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন স্নানের আগে ত্বক এক্সফোলিয়েট করে নিন।
ত্বক ঠান্ডা রাখতে গোলাপজলে মুখ ধুয়ে নিন। রোদ থেকে ফিরে টম্যাটোর রস ঘষতে পারেন। ত্বকের তাপমাত্রা সঙ্গে সঙ্গে কমে যাবে। অ্যালো ভেরার জেলেরও জুড়ি নেই।
গরমের প্রিয় বন্ধু ফেস মিস্ট। যে কোনও সময়েই তা মুখে স্প্রে করে নিতে পারেন। ফেস মিস্ট বাড়িতে বানিয়েও রাখা যায়। শসার রসের মধ্যে আধ চা চামচ পাতিলেবুর রস, ২ চা চামচ পুদিনার রস, আধ কাপ গোলাপজল মিশিয়ে বানান ফেস মিস্ট। দিনে দু’তিন বার মুখে স্প্রে করলে আরাম পাবেন।
স্নানে আনন্দ
প্রত্যেক দিন মাথার তালু ভিজিয়ে স্নান করুন। বড় চুল হলে চুল বেঁধে মাথায় জল ঢালুন। স্ক্যাল্পও পরিষ্কার রাখতে হবে। রোজ রাস্তায় বেরোলে দু’দিন অন্তর শ্যাম্পু করা শ্রেয়। গরমে স্ক্যাল্পে ঘাম বসে চুলকানি হতে পারে। নিম পাতা সিদ্ধ জল বা চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। চুলের স্বাস্থ্যও বজায় থাকে।
চুলের কন্ডিশনিংও দরকার। ঈষদুষ্ণ নারকেল তেল চুলে, স্ক্যাল্পে মাসাজ করে নিন। নারকেল তেল মাথা ঠান্ডা রাখে। পরে শ্যাম্পু করুন। চুল নরম হবে।
পরনে আরাম
সাজের সঙ্গে পোশাকেও আরাম জরুরি। সুতি বা লিনেনের পোশাকেই আস্থা রাখা ভাল। আঁটোসাটোর পরিবর্তে ঢিলেঢালা পোশাকেই আরাম বেশি। যেমন লেগিংসের বদলে পালাজ়ো, সুতির মিড লেংথ বা ম্যাক্সি ড্রেস, কলারের পরিবর্তে খোলা গলা, প্যান্টসের পরিবর্তে লং স্কার্ট জাতীয় পোশাক বাছতে পারেন। পোশাকের রংও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাদা, আকাশি নীল, বাসন্তী, হালকা গোলাপির মতো চোখজুড়োনো নরম রঙের পোশাক বেছে নিন।
খাবারেও ঠান্ডা
গরমে বেশি তেল-ঝাল একেবারেই নয়, বরং এমন খাবার খান, যা শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পদে থাকতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে মিষ্টি ও তেতো। তার মানেই প্রতি পদে মধু ঢেলে খাওয়া নয়। বরং বেছে নিন মরসুমি ফল-আনাজ। সুস্থ মানুষ তো বটেই, এমনকি ডায়াবিটিস থাকলেও পরিমিত পাকা আম খাওয়া দরকার। ভিটামিন বি সমৃদ্ধ আম স্নায়ু ঠান্ডা রাখে, এনার্জি বজায় রাখে।
• পাতে থাকুক অল্প পরিমাণে দই। দুপুরে দই ভাত বা সন্ধেয় রাস্তার ভাজাভুজি না খেয়ে দইয়ের ঘোল খেতে পারেন।
• সহজলভ্য ফল থাক তালিকায়। আম ছাড়াও খান আঙুর, আনারস, তরমুজ, খরমুজ, চেরি, ন্যাশপাতি, আপেল, বেদানা।
• এমন আনাজপাতিই খান, যা শরীর ঠান্ডা রাখে। যেমন লাউ, কাঁচকলা ইত্যাদি। লাউয়ের ঘণ্ট কিংবা কাঁচকলার ঝোল খেতে পারেন। শুরুর পাতে অল্প নিমপাতা ভাজা থাকুক।
• রাজমা, কলাই, চানা বা কাঁচা আম দিয়ে ডাল খেতে পারেন।
• মশলার মধ্যে থাক মৌরি, দারচিনি, ধনে, এলাচ, পোস্ত।
• বেশির ভাগ রান্নাই নারকেল বা সূর্যমুখী তেলে করলে ভাল।
• এই মরসুমে অতিরিক্ত নুন, তেল, গোলমরিচ, ভিনিগার, রসুন, টম্যাটো, মুলো, পালং, সরষে এড়িয়ে যাওয়া ভাল।
• মাংস শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় ভীষণ ভাবে। রেড মিটের পাশাপাশি মুরগির মাংসও এড়িয়ে যান। তার পরিবর্তে খান নানা ধরনের টাটকা মাছ। বরফের বা চালানের মাছ বর্জন করে তাজা, ছোট মাছের পদ কম মশলা দিয়ে রান্না করুন।
• শরীর জুড়োতে তেঁতুল, জলপাই, কাঁচা আমের পাতলা টক বা অম্বল থাক শেষ পাতে।
• পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া বাঞ্ছনীয়। জলে মিশিয়ে নিতে পারেন খস বা ভেটিভারের শিকড়। শরীর ঠান্ডা রাখে পুদিনার জল, কোকুমের শরবতও। তাতে মিশিয়ে দিন সবজ়া বা তুলসীর বীজ। রাতে ঘুমোনোর আগে গুলকন্দ মিল্ক খেতে পারেন। গুলকন্দ বাড়িতে তৈরি করুন গোলাপের পাপড়ি ও চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে। এই পানীয় রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে। আর বরফঠান্ডা নয়, কলসি বা কুঁজো থেকে জল পান করাই শ্রেয়। রাস্তাঘাটে তেষ্টা মেটাতে বরফগোলা নয়, বরং ভরসা রাখুন ডাবের জলে।
সবশেষে হাতে সময় নিয়ে রাস্তায় বেরোন। অতিরিক্ত ছুটোছুটি ক্লান্তি ডেকে আনে। সঙ্গে ঘামও। আর হাতব্যাগে অবশ্যই থাক জলের বোতল, ছাতা ও রুমাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy