অস্টিওপোরোসিস আটকাতে মেনে চলুন কিছু নিয়ম। ছবি: শাটারস্টক।
হাঁটুর অসুখে বয়স একটা সংখ্যামাত্র। অন্তত তেমনটাই মত বেশির বাগ অস্থিবিশেষজ্ঞের। যদিও এই সমস্যা ডেকে আনার নেপথ্যে কোনও ‘অসুখ’ রয়েছে বলে মনে করেন না তাঁরা। বরং ভুল জীবনযাত্রাকেই এই অসুখের মূল কারণ বলে চিহ্নিত করেন তাঁরা। পেন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ দেবাঞ্জলি রায়ের মতে, ‘‘জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো কারণ যোগ হয়েই অস্টিওপোরোসিস জন্ম নেয়। প্রধাণত, যথেচ্ছ ওজন ও হাঁটাচলা কম করার অভ্যাস তো রয়েছেই, মেয়েদের বেলায় যোগ হয় মেনোপজের পর থেকেই হাড়ের যত্ন নিতে শুরু না করার অভ্যাসও। অনেকেই হয়তো কায়িক পরিশ্রম করেন কিন্তু সেই ভাবে ব্যায়াম করেন না। কেউ হয়তো ভুল ব্যায়াম করে ডেকে আনছেন অকালে হাড় ক্ষয়ে যাওয়া বা অস্টিওপোরোসিস।’’
অস্থিবিশেষজ্ঞ সুতনু লাহিড়ি আবার এগুলোর সঙ্গে যোগ করছেন দীর্ঘ ক্ষণ এক জায়গায় একই ভঙ্গিতে বসে কাজ, ঘরের কাজে শ্রম কমাতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, হেঁটে যাওয়ার বদলে কথায় কথায় ক্যাব বুক করে ফেলার প্রবণতা, নিয়মিত শরীরচর্চায় ছেদ— সবকিছুকেই। আবার ওজন কমানোর নেশায় বুঁদ আধুনিক প্রজন্ম অনেক সময়ই অস্বাস্থ্যকর ডায়েট বা সোশ্যাল সাইট থেকে ডায়েট দেখে তা মেনে চলছে। ফলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ তাতে অনুপস্থিত থাকায় ওজন কমলেও ভিতর থেকে দুর্বল হচ্ছে হাড়। অনেক সময় জিনগত কারণও এর জন্য দায়ী।
দিনকে দিন এই সব নানা কারণকে হাতিয়ার করেই ঘরে ঘরে বাড়ছে অস্টিওপোরোসিসের প্রকোপ। এই অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ২০ অক্টোবরকে ‘বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস’ হিসেবেও ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
আরও পড়ুন: এই ডায়েটে ব্যায়াম লাগে না, ফ্যাট খেতে হয় দেদার, তবু হু হু করে কমে পেটের মেদ
তবে সুতনুবাবুর মতে, সচেতনতা বাড়িয়ে সঠিক ডায়েট ও শরীরচর্চা অস্টিওপোরোসিসের শঙ্কা কমিয়ে দিতে পারে অনেকখানি।
হাঁটু ওজরআপত্তি জানাতে শুরু করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই তাঁর বেছে দেওয়া কিছু ব্যায়াম প্রতি দিন অভ্যাস করুন।
কেমন ডায়েট?
অনেকেরই ধারণা, হাড়ের জন্য কিছু বাজারচলতি ক্যালশিয়াম খেলেই হাড়ের অনেকটা যত্ন নেওয়া হয়ে যায়। আদতে তা নয়। বরং ওষুধবিষুধ খেয়ে ক্যালশিয়াম বাড়ানোর চেয়ে খাবারের তালিকায় মন দেওয়াই বেশি প্রয়োজনীয়। ক্যালশিয়ামের ওষুধ দীর্ঘ দিন খেলে কিডনিতে অতিরিক্ত ক্যালশিয়াম গিয়ে মজুত হয়, তাই তা জমে পাথরও হতে পারে। তাই ওষুধে ভরসা না করে খাবারদাবারে আস্থা রাখাই ভাল।
হাড় সুস্থ রাখতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, বোরন, ম্যাগনেশিয়াম, স্ট্রনটিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম-যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। সাধারণত, দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি থেকে শরীর অনেকটা ক্যালশিয়াম পায়। তাই দুধ, চিজ, ছানা, মাখন, দই রাখুন ডায়েটে। ল্যাকটোজেনে সমস্যা থাকলে সরাসরি দুধ না খেয়ে ছানা, চিজ এ সব খান। এ ছাড়াও বিভিন্ন ফল ও শাক-সব্জি, তেল-যুক্ত সামুদ্রিক মাছে ভিটামিন ডি থাকায় সে সবকেও রাখতে হবে পাতে।
শরীরচর্চা: পেশির শক্তি বাড়ে এমন কিছু ব্যায়াম এ ক্ষেত্রে খুব উপযুক্ত। হাঁটুর সমস্যা ইতিমধ্যেই শুরু না হলে দৌড়, হাঁটাহাঁটি স্কিপিংয়ের মতো শরীরচর্চা রোজই করতে হবে। সাঁতার বা নাচ দুই-ই ভাল ব্যায়াম। কিন্তু ইতিমধ্যেই হাঁটু ওজরআপত্তি জানাতে শুরু করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই তাঁর বেছে দেওয়া কিছু ব্যায়াম প্রতি দিন অভ্যাস করুন।
আরও পড়ুন: রোজ এই সব খাবার রাখুন পাতে, রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ বাড়বে সহজে
পেশির শক্তি বাড়ে এমন কিছু ব্যায়াম এ ক্ষেত্রে খুব উপযুক্ত।
সুতনুবাবুর মতে, আজকাল কেউই বুড়ো হলাম বলে বাড়িতে আটকে থাকতে চান না। তাই বুড়ো বয়সে যাতে বেশি ভুগতে না হয়, তাই অনেকেই অস্টিওপোরোসিস দেখা দিলেই হাঁটু বদলে ফেলার পথে হাঁটছেন। তবে অসুখ ডেকে আনা বা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেয়ে নিজের হাঁটুকে যত্নে রাখাই লক্ষ্য হওয়া উচিত।
দৈনন্দিন জীবনে কিছু বিধি-নিষেধ মানলেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হাঁটু প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে না, অস্টিওপোরোসিসের প্রকোপও কমে।
কী সেই বিধি-নিষেধ?
ডায়েট, শরীরচর্চার পাশাপাশি এক জায়গায় দীর্ঘ ক্ষণ বসে না থাকা, মাঝে মাঝেই উঠে হেঁটে আসা বা সহজ কিছু স্ট্রেচিং করে নেওয়া, খুব উঁচু হিল না পরা, হাঁটুর সমস্যা থাকলে দাঁড়িয়ে রান্না না করে টুলে বসে রান্না করা, বা রান্নার মাঝে মাঝেই এসে চেয়ারে বসে পড়া জরুরি। দাঁড়িয়ে স্নান করাও চলবে না। লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ভাঙুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy