বর্ষায় সচেতন না হলে পেটের অসুখের হানা বাড়বে। ছবি: আইস্টক।
বর্ষায় পেটের সমস্যা নতুন কিছু নয়। তবে শুধু বড়দের নয়, এই ঋতু পরিবর্তনের সময় ছোটদের প্রতিও বাড়তি নজর রাখতে হয়। ফুড পয়জন থেকে ডায়েরিয়া, সাধারণ বদহজমও মাথাচাড়া দেয়। গরমের ছুটির পর বাচ্চাদের রুটিনেও কিছুটা রদবদল হয়। স্কুল খুলে যায়। খাওয়াদাওয়ার সময়, পরিমাণ ও টিফিনের উপাদানও বদলে যায়। তাই একটু নিয়মের এদিক-ওদিক হলেই সমস্যা দেখা যায়।
বাইরের খাবার ও খাওয়ার সময়ের কারণে হওয়া বদহজমও কোপ বসাতে পারে যখন তখন। কৃমির প্রবণতা থাকলে পেটের যে কোনও সমস্যায় আরও কাহিল হয়ে পড়ে শিশু। তাই বর্ষায় বাড়ির খুদে সদস্যদের পেটের খেয়াল রাখা বিশেষ প্রয়োজন।
বর্ষাকালে বৃষ্টির নোংরা জল জমে চারদিকে। এই জমা জলই বিভিন্ন পেটের রোগের আঁতুড়ঘর। পরিচ্ছন্নতার অভাবও অসুখের অন্যতম কারণ। এই সময় পোকা-মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ে। খাবারের উপর বসে জীবাণু ছড়ায়। তার ফলে ব্যাকটিরিয়া ও ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে খাদ্যনালীতে সংক্রমণ ছড়ায়। তাই বর্ষায় বাড়তি সচেতন হতেই হবে। কিন্তু কেমন হবে সেই সতর্কতা? কী ভাবেই বা শিশুর থেকে দূরে রাখবেন অসুখ?
আরও পড়ুন: তেলের দোষেই অসুখ বাড়ে, কী তেল কোন রান্নায় দিলে সুস্থ থাকবে শরীর?
এ ভাবে যেখান-সেখান থেকে জল খাওয়াবেন না শিশুকে।
প্রথমেই জেনে রাখা ভাল, কোন কোন অসুখের হানায় শিশু বিব্রত হতে পারে।
অমাশয় বা ডিসেন্ট্রি, যা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গেলে রক্তপাতও ঘটায়। এ ছাড়া ডায়েরিয়াও এই মরসুমের অন্যতম রোগ। শুধু খাবার বা পানীয় থেকেই নয়, অপুষ্টির কারণে ভিটামিন এ ও জিঙ্কের অভাবও অসুখ ডাকে। এ ছাড়া সর্দি-কাশি কমাতে অনেক সময় কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, যা থেকে ডায়েরিয়া হতে পারে। কৃমি ও বদহজমও বাসা বাঁধে এই সময়।
চলতি এই অসুখগুলির ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অবহেলা তো চলবেই না এমনকি, অসুখ যাতে বাসা না বাঁধে শরীরে, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কী কী মেনে চললে অসুখ এড়াতে পারবেন— রইল চিকিৎসকের পরামর্শ।
আরও পড়ুন: বর্ষায় ভাইরাল ফিভারের হানা শুরু, উপসর্গ কী কী? ঠেকাবেনই বা কী ভাবে?
ডায়েরিয়ার ভ্যাক্সিনে অবহেলা একেবারেই নয়।
প্রথমেই স্পষ্ট করে বলা ভাল, বর্ষা মানেই আবহাওয়ায় জলীয় ভাবের সঙ্গে জল-কাদা বাড়বে। নোংরাও বাড়বে। তাই প্রথমেই বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখুন। খাবার বানানোর সময় যে জল বা পাত্র ব্যবহার করছেন তা যেন খুব পরিচ্ছন্ন হয়। হাত ভাল করে ধুয়ে খাওয়ান শিশুকে। সন্তান নিজে হাতে খেলেও নজর রাখুন ওর হাইজিনের দিকে। শিশুর বয়স এক বছরের মধ্যে হলে তাকে অন্য খাবার দেওয়ার চেয়ে মাতৃদুগ্ধ পান করান। বদহজম ঠেকাতেও এই দাওয়াই উপকারী। ডায়েরিয়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শিশুকে জিঙ্ক সিরাপ এবং প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল দেওয়া যেতে পারে। তবে পেটের সমস্যায় সকলের আগে স্যালাইন ওয়াটার দিন। পাঁচ বছর বা তার কম বয়সি বাচ্চাদের ভাইরাল ডায়েরিয়া হওয়ার প্রবণতা বেশি। শিশুর দেড় থেকে আড়াই মাস বয়স পর্যন্ত ডায়েরিয়া আটকানোর বিশেষ ভ্যাকসিন নেওয়ান। শিশুর খাবার পাতে সবুজ শাক-সব্জি ও ফলমূল রাখুন। তবে কাটা ফল দেবেন না। রাস্তার পানীয় ও খাবার থেকে দূরে রাখুন। শিশুর স্কুলের টিফিনের প্রতি নজর দিন। বর্ষায় সংক্রমণ বাড়ার ভয় তাকে। তাই পেটে সয় না এমন খাবার একেবারেই দেওয়া যাবে না। খুব ভাজাভুজি বা তেল-মশলার খাবার এড়িয়ে চলুন। টিফিনের খাবার ঠান্ডা হয়ে যায়। তাই এমন কিছু দেবেন না যা ঠান্ডা হওয়ার পর আরও বিষাক্ত। এড়িয়ে চলুন নুডলস বা প্রিজারভেটিভ মেশানো খাবার। শিশু খুব বায়না করলে বরং দু’-এক দিন বাড়িতে বানিয়ে গরম গরম খাইয়ে দিন সে সব।
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
অন্তত পাঁচ বছর বয়স অবধি পানীয় জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খাওয়ান। জল পরিশোধনের ব্যবস্থা থাকলে সেই যন্ত্রটিও নিয়মিত পরিষ্কার করুন। এলাকায় ডেঙ্গি ধরা পড়লে জল পরিশোধনের পরেও শিশুকে সেই জল গরম করে বাড়তি সুরক্ষা নিয়ে পান করান। পর্যাপ্ত ঘুম ও জল খাওয়ার পরিমাণ মাথায় রাখুন, কিছুতেই শরীর থেকে জলের পরিমাণ কমতে দেওয়া যাবে না। এতে ডিহাইড্রেশন রোখা সহজ হবে। কোনও কোনও খাবারে শিশুর গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থাকলে তা এড়াতে হবে। বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার করুন। পেটে ব্যথা হলে নিজেরা চিকিৎসা না করে ঘরোয়া স্যালাইন ওয়াটার দিয়েই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
—ছবি: আইস্টক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy