আধুনিক যুগে চিকিৎসকরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাকে ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’ হিসেবেই গণ্য করে থাকেন
আধুনিক জীবনে কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা, বিভিন্ন ব্যস্ততার জাঁতাকলে রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যেতেই পারে। অনেক সময়ই পরিস্থিতি এমনই হয়ে ওঠে যে ভিতরের বিপদ বাইরে থেকে আঁচ করা সম্ভব হয় না। হৃদরোগ বা স্ট্রোক ঘনিয়ে আসে। আধুনিক যুগে চিকিৎসকরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাকে ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’ হিসেবেই গণ্য করে থাকেন।
একটা সময়বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রবণতা বাড়ত। বয়সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আসলে শরীরের সব কলবব্জাই কমজোরি হয়ে পড়ে। রক্তবাহ নালীগুলিও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই বয়স্কদের রক্তচাপ অনেক সময়ই একটু বেশির দিকে তাকে। তবে বর্তমানে বয়স ৩০ পেরলেই ঝুকির গণ্ডি শুরু হয়ে যাচ্ছে। আধুনিক জীবনযাপনের নানা বিষয়কেই এ ক্ষেত্রে ‘ভিলেন’ ঠাওরাচ্ছেন।
কত থাকলে বিপদ নেই?
একটা সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক জন সুস্থ ব্যক্তির রক্তচাপের স্বাভাবিক মাপ হিসেবে ১২০/৮০-কে নির্দিষ্ট করে। পরে জীবনযাপনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই অঙ্কই তারা বাড়িয়ে ১৩০ করে। সম্প্রতি প্রকাশিত আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশিকা অনুযায়ীও এই মাপকে ১৩০ ধরা হয়েছে। তবে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৪০ পর্যন্ত চাপ উঠলেও শঙ্কার কারণ নেই। তার চেয়ে বেশি থাকলে তবেই তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা যাবে।
আরও পড়ুন: টনসিলের ব্যথায় নাজেহাল? এই সব ঘরোয়া উপায়েই মিলবে আরাম
বয়স্কদের ক্ষেত্রে ও হার্টের রোগীদের বেলায় রেসিসটেন্ট হাইপার টেনশন দেখা যায়
ভাবনা কোথায়?
রোগার প্রেশার বাড়িতে মেপে দেখা গেল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে। অথচ কিছু ক্ষণের মধ্যে চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে মেপে দেখলেন বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। এই প্রবণতার নাম‘হোয়াইট কোট হাইপার টেনশন’। এমন হলে অনেক সময় সরীরের পোর্টেবল ব্লাড প্রেশার মেশিন ২৪ ঘণ্টার জন্য বসিয়ে দেখা হয়, কোনও বিশেষ অবস্থা ও কাজের সময় রক্তচাপ কেমন থাকছে।
অনেকের বেলায় আবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েক রকমের ওষুধ দিলেও তা নিয়ন্ত্রণে আসে না সহজে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ও হার্টের রোগীদের বেলায় এমন রেসিসটেন্ট হাইপার টেনশন দেখা যায়।
থাইরয়েড, কোলেস্টেরল বা কিডনির সমস্যায় ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রেশার বাড়ার মূল কারণের অনুসন্ধান এবং চিকিৎসা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: মাত্র কয়েক মিনিট সময় দিলে এই দুই ব্যায়ামেই উধাও হতে পারে ভুঁড়ি!
রক্তচাপ বেশি মানেই নুন বন্ধ?
চিকিৎসক গৌতম বরাটের মতে, এক জন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ২.৩ গ্রাম সোডিয়াম নেওয়া উচিত। কিন্তু বিভিন্ন দেশের জলবায়ু, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের সব কিছুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে একেবারে ওই মাপেই সোডিয়াম গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তবে প্রতি দিন খাবারে যে পরিমাণ নুন মেশান তার চেয়ে ৫-১০ গ্রাম কমিয়ে ফেলাই ভাল। কাঁচা নুন তো চলবেই না, তার বদলে অল্প পরিমাণে সোডিয়াম সমৃদ্ধ অন্য খাবার খান।
অসুখ সারলেই ওষুধ বন্ধ?
এখানেই ভুল করে ফেলেন অনেকে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও মনে রাখা উচিত, তা কিন্তু এল আদতে ওষুধের হাত ধরে। প্রতি রোগীকেই তার শরীরের ধরন ও ওষুধের কার্যক্ষমতা মিলিয়ে ওষুধ দেওয়া হয়। ওষুধ কাজ করার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমাও থাকে। কাজেই ওষুধ কখন বন্ধ হবে বা পরিবর্তন হবে কি না তা একমাত্র চিকিৎসকই পরামর্শ দেবেন।
সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবারে রাশ টানুন
কী কী সাবধানতা
• বয়স ৩০ পেরলেই নিয়ম করে রক্তচাপ মেপে চলুন। বাড়িতে এই যন্ত্রও কিনেও রাখতে পারেন।
• ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, লাগামছাড়া চা-কফিতে ‘না’ বলুন।
• মাসে এক আধবার দু’-তিন টুকরো পাঁঠার মাংসে কোনও ক্ষতি নেই। ভয় বরং ঝোল অনেকটা খেয়ে ফেলায়।
• বিরিয়ানির মাংস খেলে ক্ষতি নেই। তবে ক্ষতি বিরিয়ানি বা ভাত বা মাংসের ঝোলে মাংসের ফ্যাট মিশে থাকে আর আমরা মাংস কম খেয়ে ঝোলটুকুই বেশি খাই।
• ডায়েটে থাকুক সবুজ শাকসব্জি ও ফলমূল। জোর দিন পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ফলমূলের উপর।
• ব্লাড প্রেশার বাড়ার সঙ্গে শরীরের অন্য কোনও সমস্যা বাড়ছে কি না, নজর রাখুন।
• নুন কম, সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবারেও রাশ টানুন। তবে শরীরে যেটুকু সোডিয়াম প্রয়োজন তা জোগানে যেমন ঘাটতি না থেকে।
• ডায়েট থেকে ফ্যাটও একেবারে বাদ নয়। কারণ শর্করা ও প্রোটিনের পাশাপাশি ফ্যাটও দরকার শরীরে। ভিটামিন এ, কে ও ডি-র আত্তীকরণের জন্য শরীরে ফ্যাট থাকা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy