তিন লক্ষ টাকা তছরুপ করার অভিযোগ উঠল ফরাক্কার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দীপায়ন মন্ডল ও ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের হিসাবরক্ষক সন্দীপ পালের বিরুদ্ধে। ওই দু’জনের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা। ফরাক্কা থানায় তাঁর এফআইআর ( কেস নম্বর ৮২/১৫)-এর ভিত্তিতে মামলাও শুরু করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, ‘‘ভুলবশত’’ ওই তিন লক্ষ টাকা তিনি অন্য খাতে খরচ করে ফেললেও, পরে সে টাকা স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, তছরুপের ওই ঘটনা ঘটেছিল গত বছর। এ বিষয়ে প্রশাসনিক স্তরে প্রাথমিক তদন্তের পর ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ মেলায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিসবাবু সোমবার রাত্রে নিজে ফরাক্কা থানায় হাজির হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ এই অভিযোগের ভিত্তিতে দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ৪২০, ৪৬৫, ৪৬৮, ৪৭১ , ৪০৯ ও ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করেছে। এগুলি চুরি ও প্রতারণা সংক্রান্ত ধারা। বেশির ভাগই জামিন অযোগ্য ধারা হলেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্ত দু’জনের কাউকেই গ্রেফতার করেনি। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর জানান, দীপায়ন মন্ডল ও সন্দীপ পালের অর্থ তছরুপের মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তদন্তের পর গ্রেফতার করা হবে।
পুলিশ জানায়, ফরাক্কা ব্লকে ফরাক্কা, কেন্দুয়া ও অর্জুনপুর এই তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ তিন লক্ষ টাকা ফরাক্কার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও ওই হিসাব রক্ষক যৌথভাবে ষড়যন্ত্র করে আত্মসাৎ করেছেন। পরে এ নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানতে পারে, বরাদ্দ অর্থ ওই তিন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে না দিয়েই তা খরচ হয়ে গিয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এরপরই জেলা শাসকের নির্দেশে সোমবার রাত্রে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ফরাক্কা থানায় গিয়ে তছরূপের মামলা দায়ের করেন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিযোগ দায়েরের কথা স্বীকার করলেও বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে যা বলার বলবেন জেলাশাসক নিজেই। যা হয়েছে সব তাঁরই নির্দেশে।’’
জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলে, অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ আসে। তা নিয়ে তদন্ত করে ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়ার পরেই তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ দেন।
যে তিন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য এই তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয় তার দুটিতে (কেন্দুয়া ও ফরাক্কা) কোনও চিকিৎসক দায়িত্বে নেই। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক নিজেই সে দুটির দায়িত্বে। অর্জুনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক আশিস অধিকারী মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অভিযুক্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দীপায়ন মন্ডল প্রায় পাঁচ বছর ফরাক্কা ব্লকে রয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি অর্থ তছরুপের ঘটনা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘‘ভুল করে ওই তিন লক্ষ টাকা খরচ করে ফেলেছিলাম আমি। পরে সে টাকা আমি ফেরত দিতে চেয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন করি। সেই মতো সমস্ত টাকা আমি নিজে নগদে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বিভাগীয় দফতরে গিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে এসেছি। গত চারদিন আগে সে টাকা ‘রিসিভ’ করে নিয়ে আমাকে রসিদও দিয়েছেন তাঁরা। তারপরেও সোমবার রাত্রে ফরাক্কা থানায় আমার বিরুদ্ধে কেন এফআইআর দায়ের করা হয়েছে আমি বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy