—প্রতীকী চিত্র।
টকটকে লাল চোখের ভিড় জমছে ডাক্তারখানায়। চক্ষু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দিনে অন্তত তিন-চার জন রোগী আসছেন এই সমস্যা নিয়ে। তাঁদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের বয়সই আঠারোর কম। কারণ, বহু ক্ষেত্রে স্কুল থেকে ছড়াচ্ছে এই রোগ। সকালে পিচুটি ভরা সেই চোখ টেনে খোলার কষ্ট মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘জয় বাংলা’র কথা। মাসখানেক ধরে এই পরিস্থিতি দেখে চিকিৎসকদের প্রশ্ন, তবে কি ফিরে এল সে? সংক্রমণের পিছনে তপ্ত আবহাওয়া ও পরিবেশ দূষণও দায়ী বলে মত তাঁদের।
বছর পঞ্চাশেক আগে আসা ‘জয় বাংলা’ ধীরে ধীরে জমি হারিয়েছিল। তার জায়গা নিয়েছিল তুলনায় বেশি ক্ষতিকর কনজাংটিভাইটিস। জয় বাংলার হানায় কর্নিয়ার ক্ষতি হত না বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু গত কয়েক বছরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে, কনজাংটিভাইটিসে কর্নিয়ার ক্ষতি হয়। তবে একই সঙ্গে চিকিৎসকেরা যে আশ্বাসবাণী শোনাচ্ছেন, তা হল, এ বছর এখনও পর্যন্ত কনজাংটিভাইটিসে কর্নিয়ার ক্ষতি হতে দেখা যায়নি। পাশাপাশি, দু’টি রোগের মধ্যে পার্থক্য আছে আরও। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কনজাংটিভাইটিসে পিচুটি কাটে না। চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ে। এটি ভাইরাসঘটিত রোগ। কিন্তু, জয় বাংলায় আক্রান্তের পিচুটি কাটে খুব বেশি। এই রোগ ব্যাক্টিরিয়াঘটিত।
জয় বাংলা নামের ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর বন্দুকে বিপুল পরিমাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ইস্পাতের বেয়নেট। তা দ্রুত ঠান্ডা হয়। ওই ঠান্ডা ইস্পাত থেকে হু হু করে ছড়াতে থাকে অতি সংক্রামক এই চোখের অসুখ। চক্ষু চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ওষুধ দেওয়া হোক বা না হোক, সাত দিনের আগে হটানো যেত না জয় বাংলাকে। পরবর্তী সময়ে অ্যাডিনোভাইরাস ক্রমাগত তার শক্তি বদলে কনজাংটিভাইটিস নামে চোখে হানা দিয়েছে।
আর এক চক্ষু চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বললেন, ‘‘গত দু’সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন চার-পাঁচ জন রোগী চোখ লাল হওয়ার সমস্যা নিয়ে আসছেন। রোগীদের মধ্যে চার থেকে ১৮ বছর বয়সির সংখ্যাই বেশি। মূলত স্কুল থেকে এই রোগ ছড়াচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বেশির ভাগেরই চোখ লাল, পিচুটিতে ঢাকা। পরিবারে কোনও শিশুর কনজাংটিভাইটিস হলে বাকি সদস্যদের মধ্যেও তা দ্রুত ছড়াচ্ছে।’’
চিকিৎসক সিদ্ধার্থ ঘোষের কথায়, ‘‘ভাইরাল কনজাংটিভাইটিসে চোখ লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, গলা ব্যথা, জ্বর, চোখ দিয়ে জল পড়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এ বছর ব্যাক্টিরিয়াল কনজাংটিভাইটিসও হচ্ছে। তাতে চোখ লাল হয়ে, ফুলে পিচুটিতে ভরে থাকছে।’’ শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘কোভিডের সময়ের কনজাংটিভাইটিসের থেকে এটি আলাদা। ফলে প্রশ্ন উঠছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ঘাটতির কারণেই কি এই সংক্রমণ? গত বছর অ্যাডিনোভাইরাসের বাড়বাড়ন্তের পরে এ বছর এই উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, সেটাও লক্ষ করার বিষয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy