ছবি: সংগৃহীত।
পেশির ব্যথা, দুর্বলতা, অসাড়তায় ভোগেন অনেকেই। ওয়ার্কআউট করলেও শরীরের সব পেশি সবসময়ে প্রয়োজন মতো সঙ্কুচিত হয় না। কিছু মাসল দীর্ঘ দিন কাজ না করতে করতে ক্রমশ কর্মক্ষমতা হারায়। আবার কখনও আঘাত, অস্ত্রোপচার-সহ নানা কারণে পেশি সচলতা হারায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে ইলেক্ট্রিক্যাল মাসল স্টিমুলেশন (ইএমএস)।
ইএমএস কী?
এ ক্ষেত্রে লো-ফ্রিকুয়েন্সিতে বিদ্যুৎ পেশি বা স্নায়ুতে সরবরাহ করা হয়। ইলেক্ট্রিক্যাল মাসল স্টিমুলেশন (ইএমএস) এবং ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন (টিইএনএস) দু’ধরনের ইলেক্ট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ব্যবহার হয়। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, মাসলের স্প্যাজ়ম, স্নায়ুর ব্যথার জন্য টিইএনএস ব্যবহার করা হয়। পেশির শক্তি বাড়াতে, তাকে টোন করতে, ক্ষতিগ্রস্ত পেশিকে সুস্থ করে তুলতে কাজে লাগে ইএমএস। ফিটনেস প্রশিক্ষক অরিজিৎ ঘোষাল বলছেন, “মূলত বাইসেপস, ট্রাইসেপস, কাঁধ, পিঠ, পেট, হাঁটু, পা ইত্যাদির পেশিতে ইএমএস ব্যবহার করা হয়।”
কী উপকার হয়?
অরিজিৎ বলছেন, “পেশির জোর বাড়ানোর ক্ষমতা থাকলেও, ইএমএস কিন্তু শারীরচর্চার বিকল্প নয়, বরং পরিপূরক বলা যায়।”
• নিয়মিত খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই স্টিমুলেশন কার্যকর। একটানা একাধিক ম্যাচ খেলতে গিয়ে অনেক সময়েই পেশিতে খিঁচ ধরে। বেকায়দায় কোনও পেশিতে চোট লাগতে পারে। ইএমএস ব্যবহারে সে সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
• শারীরিক অসুস্থতা, চোট বা অস্ত্রোপচারের পর শয্যাশায়ী, পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা পেশি দুর্বল হয়ে পড়লে, এতে উপকার পাওয়া যায়।
• শরীরের বিভিন্ন ব্যথা (যেমন কোমরের ব্যথা, ঘাড়ের টান ইত্যাদি) উপশম করতে পারে।
• পেশিতে রক্তসঞ্চালন বাড়ে।
• ফ্রোজ়েন শোল্ডার, আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যা দূর হয়।
• এর ব্যবহারে থাই, হিপ ইত্যাদির মাসল অ্যাক্টিভ হয়। ফলে এর পরে শারীরচর্চা করলে জমা ফ্যাট দ্রুত কমে। ওজন কমতে কমতে অনেক সময়েই স্ট্যাটিক হয়ে যায়, তখনও এই পদ্ধতি কাজে লাগে।
সতর্ক থাকুন
ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট ডা. শবনম আগরওয়াল বলছেন, “ইএমএসের ইনটেনসিটি এবং ফ্রিকোয়েন্সি কত থাকবে তা ব্যক্তিবিশেষে নির্ধারিত হবে। কম ইনটেনসিটির ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে শুরু করে সয়ে এলে ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়। একইসঙ্গে কতক্ষণ ব্যবহার করা হচ্ছে, সে দিকে নজর রাখা জরুরি।”
আরও...
• লেজ়ার ট্রিটমেন্ট কিংবা হেয়ার রিমুভের তাৎক্ষণিক পরেই ইএমএস করাবেন না। এ সময় ত্বক সংবেদনশীল হয়ে থাকে।
• ত্বকে কোনও রকম র্যাশ বা ক্ষত থাকলে, কোথাও কেটে গেলে সেখানে ইএমএস করাবেন না। এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।
• মাসল স্টিমুলেশনের সময়ে যেন কোনও ধাতব গয়না শরীরে না থাকে।
• ইলেকট্রোড প্যাড যেখানে লাগাবেন, সেই স্থানের ত্বক পরিষ্কার রাখুন। ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করবেন না।
• বারবার একই প্যাড ব্যবহার করলে তা থেকে ত্বকে ইনফেকশন হতে পারে।
• উচ্চ ইম্পালস বা ভুল ইলেকট্রোড স্নায়ুতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
কারা করবেন না?
• হার্টের সমস্যা থাকলে বা পেসমেকার ব্যবহার করলে ইএমএস ব্যবহার করবেন না।
• এপিলেপ্সি বা সিজ়ার ডিজ়র্ডার থাকলে এড়িয়ে চলুন।
• মৃগী রোগ বা স্নায়ুর সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই ব্যবহার করুন।
• অস্ত্রোপচারের পরে থ্রম্বোসিসের মতো রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা থাকলে সতর্ক থাকুন।
গর্ভাবস্থায় অনেক সময়ে ইলেক্ট্রিক্যাল মাসল স্টিমুলেশন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ফিজ়িয়োথেরাপিস্টরা। তবে ডা. আগরওয়াল বলছেন, “প্রেগন্যান্সিতে কখনওই চিকিৎসকের পরামর্শ এবং ফিজ়িয়োথেরাপিস্টের নজরদারি ছাড়া ইএমএস ব্যবহার করবেন না।” বাজারে আজকাল বিভিন্ন ধরনের পোর্টেবল ইএমএস ডিভাইস সহজলভ্য। তার মধ্যে কিছু আবার স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অ্যাপের মাধ্যমে ইনটেনসিটি, ফ্রিকোয়েন্সি, সময়কাল সবই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে ডা. শবনম বলছেন, “সপ্তাহে ক’বার কতক্ষণের জন্য তা ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়ে ফিজ়িয়োথেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।” বাড়িতে ব্যবহার করলেও প্রশিক্ষক বা ফিজ়িয়োথেরাপিস্টের নজরদারি দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy