মাছ-মাংস-সব্জি, সব কিনেও কী ভাবে মাসের শেষে পকেটে টান পরবে না? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গরমের আঁচ পড়ছে আনাজ বাজারেও। জোগানের ঘাটতির কারণে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গ্রীষ্মকালীন আনাজের দাম। বাজারে পটল, ঝিঙে, ঢেঁড়শ, উচ্ছে থেকে এঁচোড়, ডাঁটা সবেরই দাম আকাশছোঁয়া। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এই গরমে মার খেয়েছে আনাজের উৎপাদন, চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় বেড়ে গিয়েছে শাকসব্জির দাম। তার উপর চড়া রোদে বাজার নিয়ে বসলে অর্ধেক শাকসব্জি শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে, ক্রেতারা সেই সব্জি কিনতে চাইছেন না, সেখানেও ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। সাধারণত এই সময়ে পটল যেখানে কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা, সেখানে তার দাম ছুঁয়েছে ৫০-৬০ টাকা, কোথাও কোথাও আবার ৭০। ঝিঙে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকায়। গরম পড়ার আগে এক একটি লাউ যেখানে ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, এখন তার দাম প্রায় দ্বিগুণ। প্রতি কেজি জ্যোতি আলুর দাম প্রায় ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা। ১০০ গ্রাম রসুনের দাম যেখানে ১৫-২০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করত, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা।
মাছের বাজারেও একই হাল! ৩-৪ কেজির পাকা রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায়। প্রতি কেজি বড় মাপের কাতলার দাম প্রায় ৫০০ টাকা ছুঁইছঁই। ১ কেজি মৌরলা মাছের দামও প্রায় ৫০০ টাকা। ফলের বাজারে গেলে দাম শুনে যেন ছেঁকা লাগছে! ১টা ডাবের দাম নাকি ৭০ টাকা! গ্রীষ্মের বাজারে আম কিনেও স্বস্তি নেই। স্বাদে তেমন ভাল না হলেও, হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি প্রায় ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। প্রতি কেজি লিচুর দাম প্রায় ১৮০ টাকার কাছাকাছি।
এই পরিস্থিতিতে রোজের বাজার করতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে মধ্যবিত্ত বাঙালির। মাসের বাজেট দিন-দিন বেড়েই চলেছে, অথচ রোজগার আটকে সেই একই জায়গায়। এ দিকে গরমের সময় ডায়েট একটু ভাল না হলেই নয়। পুষ্টিবিদদের কড়া নির্দেশ রোজ একটি করে ফল, পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রোটিন রাখতেই হবে ডায়েটে। শরীরের কথা ভেবে বাজার করতে গিয়ে তো পকেট হয়ে যাচ্ছে গড়ের মাঠ। রোজের বাজারে কোথায় কাটছাঁট করবেন, কী ভাবে রোজের মেনু ঠিক করলে শরীরও ঠিক থাকবে আর পকেটেও খুব বেশি টান পড়বে না, রইল তার হদিস।
১. সবার আগে বাইরে থেকে কিনে খাওয়া বন্ধ করুন। ভাল-মন্দ খেতে ইচ্ছে করলে বাড়িতেই রান্না করার অভ্যাস করুন। এই অভ্যাসে এক বার অভ্যস্ত হতে পারলে শরীরও ভাল থাকবে আর সাশ্রয় হবে অনেকখানি। কোনও রেস্তরাঁ থেকে ১ প্লেট চিকেন কষা অর্ডার করলে তার দাম খুব কম হলেও ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। সেই ১ প্লেট মাংস খেয়ে ১ জনেরই পেট ভরবে। কিন্তু ভেবে দেখুন, ৩০০ টাকায় কিন্তু ১ কেজি মুরগির মাংস কিনে আপনি বাড়িতেই রকমারি পদ রেঁধে ফেলতে পারেন।
২. অনেকেরই অভ্যাস থাকে রোজ বাজার করার। টাটকা মাছ-মাংস শরীরের পক্ষে ভাল হলেও, রোজ বাজার করলে কিন্তু খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়। চেষ্টা করুন, সপ্তাহের বাজার একবারেই করে, ফ্রিজে মজুত রাখার। সপ্তাহের বাজারে কত টাকা ব্যয় করবেন, তা আগে থেকেই স্থির রাখুন। দেখবেন, অনেকটাই সাশ্রয় করতে পারছেন এক দিনে বাজার করার ফলে। গরমের মধ্যে রোজ-রোজ বাজার না যাওয়াই স্বাস্থ্যকর। পয়সাও বাঁচবে, আবার শরীরও ঠিক থাকবে।
৩. সপ্তাহে অন্তত এক দিন নিরামিষ খান। মাছ-মাংস ছেড়ে সয়াবিন,পনির খান। সঙ্গে সে দিন বেশি করে সব্জি খান। অনেকেই আছেন, যাঁরা মাছ-মাংস ছাড়া খেতে পারেন না; তাঁরা কিন্তু সয়াবিন দিয়েই রকমারি পদ বানিয়ে ফেলতে পারেন। খেতে মাংসের মতোই লাগবে। এ ছাড়াও দৈনিক ডায়েটে প্রোটিন পাবেন, যদি সে দিন খানিকটা ডাল খান। সুস্বাদু ডাল রান্না করে, গরম অবস্থায় তাতে রুটি ডুবিয়ে খান, বা ভাতে মেখে এক গ্রাসে পাঁপড়ে কামড় দিয়ে দেখুন, খারাপ লাগবে না।
৪. অফিসে টিফিন নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস করুন। বাইরে এখন ভাত,ডাল, সব্জি আর একটা মাছ খেতেই প্রায় ১০০ টাকার কাছাকাছি খরচ হয়ে যায়। বাড়ি থেকে খাবার আনলে কিন্তু অনেকটা টাকাই সাশ্রয় করতে পারবেন।
৫. মাছ, মাংসের যা দাম বেড়েছে, তাতে রোজের মেনুতে মাছ-মাংস না-ই রাখতে পারেন। সপ্তাহে দু’তিন দিন না হয় ডিম দিয়েই কাজ চালিয়ে নিলেন। তবে রোজ-রোজ ডিম কষা খেতে কারও ভাল লাগবে না, তার বদলে ডিমের পাতুরি, ডিমের ধোঁকা, ডিমের কচুরির মতো রকমারি পদ বানিয়ে ফেলতে পারেন।
৬. মাছ-মাংস রান্না করার সময় একটু কায়দা জানলেই আপনি খানিকটা সাশ্রয় করতে পারবেন। ধরুন, বাড়িতে তিন টুকরো কাতলা মাছ আছে আর বাড়িতে সদস্যসংখ্যা ৫ জন। বাজার থেকে আবার নতুন করে মাছ না এনে, ওই মাছ সেদ্ধ করে তার সঙ্গে সব রকম মশলা মিশিয়ে পকোড়ার মতো বানিয়ে নিয়ে তাই দিয়েই ঝোল বানিয়ে নিতে পারেন। মুরগির মাংস কেনার সময় যদি অল্প করে কিমা করে আনেন, সেই কিমাও কিন্তু ঘুগনি কিংবা কাবলি ছোলার তরকারির মধ্যে দিয়ে দিলে দারুণ সুস্বাদু আমিষ পদ বানিয়ে ফেলতে পারেন। তবে এই সব করতে গেলে একটু পরিকল্পনা দরকার। চেষ্টা করুন পরের দিন বাড়িতে সারা দিন কী কী খাবার রান্না হবে সেই লিস্টটি আগের দিন রাতেই বানিয়ে রাখার। এমন সব রেসিপি জানতে হলে রান্নার বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন কিংবা কুকিং ভিডিয়োও দেখতে পারেন।
৭. রান্না করা খাবার যেন ফেলতে না হয় সে দিকটাও দেখতে হবে। পরিমাণ বুঝে রান্না করুন। অযথা অনেকটা খাবার বানিয়ে রাখলেন, সবার খাওয়াদাওয়ার পরেও খাবার বেঁচে গেল— বাজারের এই পরিস্থিতিতে এমনটা না করাই ভাল। আর যদি কোনও খাবার বেঁচেও যায়, সেই বাড়তি খাবার দিয়ে পরের দিন নতুন কী বানিয়ে ফেলা যায়, সেই চিন্তাটাও সেরে রাখতে হবে।
মনে রাখুন:গরমের দিনে সপ্তাহের বাজার ভাল রাখতে হলে ফ্রিজ ভাল থাকাটা খুব জরুরি। হঠাৎ ফ্রিজ খারাপ হয়ে গেলে কিন্তু এই গরমে অনেক খাবারই নষ্ট হবে। তাই সময় মতো ফ্রিজের সার্ভিসিংটা করাতে হবে। সেটা ভুললে কিন্তু চলবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy