মঙ্গলবার আগুনে পুড়ে যায় হলং বাংলো। —ফাইল চিত্র।
আগুনের খবর শোনার পর থেকে বার বার হলং বনবাংলোর কথা মনে পড়ছে নাট্যব্যক্তিত্ব ডলি বসুর। এক সময়ে তাঁর শ্বশুরমশাই, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু গোটা পরিবারকে নিয়ে ওই বাংলোয় ছুটি কাটাতে যেতে পছন্দ করতেন। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের এই বনবাংলোর প্রতি শ্বশুরমশাইয়ের যে অমোঘ টান ছিল, সে কথা আবার মনে পড়ছে জ্যোতি-পুত্র চন্দন বসুর প্রাক্তন স্ত্রী ডলির।
পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের হলং বাংলো। পুজোর ছুটিতে গোটা পরিবার নিয়ে বহু বার সেই বাংলোয় থেকেছেন জ্যোতিবাবু। সে সব দিনের কথা মনে করে আনন্দবাজার অনলাইনকে ডলি বলছেন, “পুজোর ছুটি পড়লেই মেয়েদের নিয়ে চলে যেতাম। প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য জ্যোতিবাবুর পছন্দ ছিল। তবে হলং বাংলোর প্রতি বিশেষ টান ছিল।’’
জঙ্গলে ঘেরা হলং বাংলো বাংলার ঐতিহ্য। ১৯৬৭ সালে তৈরি এই বনবাংলোটি রাজ্য বন দফতরের অন্যতম মহার্ঘ সম্পত্তি ছিল। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তা থেকে অনেক নামী ব্যক্তিত্ব ছুটি কাটিয়েছেন সেখানে। প্রকৃতির কোলে সেই সুদৃশ্য বনবাংলোর কদর ছিল বিদেশি পর্যটক মহলেও। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বার বারই হলং বাংলোতে গিয়ে থাকতেন জ্যোতিবাবু। ডলির কথায়, “হলং বাংলো পুড়ে গিয়েছে শুনেই এত কষ্ট হচ্ছে যে বলে বোঝাতে পারব না। কত স্মৃতি, টুকরো টুকরো ভাল লাগা জড়িয়ে রয়েছে ওই বাংলোর সঙ্গে। পুজোর ছুটি পড়লেই বাচ্চাদের নিয়ে আমরা চলে যেতাম ওখানে।’’
চিরসবুজ অভয়ারণ্যের নয়নাভিরাম দৃশ্য শহুরে কোলাহল থেকে শান্তি দিত বসু পরিবারকে। আর ছিল বন্যপ্রাণী দেখার আকর্ষণ। বাংলোর পাশ দিয়ে যেত হাতির পাল। দু’-একটি বন্যপ্রাণীও যে বাংলোর আশপাশে চলে আসত না, তা নয়। সে সবই উপভোগ করতেন তাঁরা। সে ভাবেই এক দিন দেখা হয় হারাধনের সঙ্গে।
হারাধনের কথা বলতে গিয়ে ডলির গলা ধরে এল আবেগে। তিনি বলেন, “ছোট্ট হারাধন ছিল বড় আদরের। ঠিক যেন মানবশিশু। ওকে বড্ড ভালবাসতাম আমরা। আমাদের চোখের সামনেই বড় হয় হারাধন।” হাতির পাল থেকে দলছুট হারাধনকে উদ্ধার করে বাংলোতেই এনেছিলেন বন দফতরের আধিকারিকেরা। হলং বাংলোতে শৈশব কেটেছে হারাধনের। টলমল পায়ে হাঁটতে শিখেছে হস্তিশাবকটি। মানুষের সঙ্গে খেলতেই বেশি পছন্দ করত। ডলির তিন মেয়ের সঙ্গে কম খেলা করেছে হারাধন! বোতলে করে দুধ খাওয়ানো হত তাকে। দুধ খেয়েই দৌড়ে চলে আসত খেলতে। জড়িয়ে আদর করলে মাথা নাড়িয়ে সাড়া দিত।
সন্তান হারানো এক মা-গন্ডারকেও ভোলেননি ডলি। আসলে বন্যপ্রাণী দেখতে বড় ভালবাসতেন জ্যোতিবাবু। হলং বাংলোর প্রতি হয়তো এ জন্যই এত টান ছিল। সময় পেলেই নাতনিদের নিয়ে চলে যেতেন। স্মৃতির পাতা উল্টে আরও একটি গল্প শোনালেন তাঁর প্রাক্তন পুত্রবধূ। বাংলোর ঠিক কাছেই প্রতিদিন একটি গন্ডার এসে দাঁড়িয়ে থাকত। একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাংলোর জানলা দিয়ে তাকে রোজই দেখত বসু পরিবার। এক দিন কৌতূহলে বাংলোর কেয়ারটেয়ারকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন, তার সন্তানকে খেয়ে ফেলেছিল বাঘ। তাই রোজই বাংলোর কাছাকাছি এসে সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকত মা-গন্ডারটি।
একটি বড় জানলা ছিল পুড়ে যাওয়া হলং বাংলোর বৈঠকখানায়। ডলি বসু বলে চললেন, ওই জানলাটিতে গোধূলির রোদ এসে যখন পড়ত, তখন এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি হত। বাংলোর কয়েকটা ঘরে ভাগাভাগি করে থাকতেন সকলে। আজ সেই ঘরগুলি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এ বারের পুজোয় আরও এক বার হলং বাংলোয় গিয়ে থাকবেন বলে ভেবেছিলেন ডলি। পরিকল্পনাও করছিলেন। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। খবরটা শুনেই মেয়েদের জানিয়েছেন। জানালেন, তাঁদেরও মন খুব খারাপ। জ্যোতিবাবুর কথাও খুব মনে পড়ছে আগুনের খবরটি পেয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy