প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে ৪ জন স্বাভাবিক ভাবে শুনতে পায় না। ফাইল ছবি।
করোনার ভয়ে অন্যান্য চিকিৎসার কথা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। এদিকে অন্যান্য অসুখ বিসুখ কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে নেই। সময় সুযোগ পেলেই সমস্যা ডেকে আনে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বিশেষ একটি সমস্যার কথা। বেশ কিছু বাচ্চার শ্রবণশক্তির সমস্যা থাকে। প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে ৪ জন স্বাভাবিক ভাবে শুনতে পায় না। অথচ বাবা মা বা বাড়ির অন্যরা খেয়াল করেন না বা ডাক্তারকে জানান না বলে ধরা পড়ে না। আর এর ফলে বাচ্চার কথা বলার সমস্যা হয়, বললেন ইএনটি বিশেষজ্ঞ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষ তিনভাবে শেখে— দেখে, শুনে আর ঠেকে। যদি জন্মের সময় থেকেই কানে শোনার অসুবিধে হয় তাহলে কথা শিখবে কীভাবে!
পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে সদ্যোজাতের শ্রবণ ক্ষমতা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। এদেশের কিছু কিছু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে জন্মের পর বাচ্চার শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করা হয় ও এ ই অর্থাৎ অটো অ্যাকোয়াস্টিক এমিশন টেস্ট দ্বারা। কিন্তু রাজ্যের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালে এই পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই বাবা মাকে বাচ্চার শোনার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে বললেন শান্তনুবাবু।
আমাদের দেশে বাচ্চাকে যখন চিকিৎসকের কাছে আনা হয়, তখন অনেকটা সময় চলে গেছে। অন্যান্য অনেক অসুখের মতোই কানে শোনার অসুবিধে যদি জন্মের সময় ধরা যায়, তা হলে ভবিষ্যতের অনেক জটিলতাই আটকে দেওয়ার পাশাপাশি শিশুকে স্বভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায় বলে মনে করেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাচ্চার বধিরতার কারণ
গর্ভাবস্থায় হবু মায়ের কিছু অসুখ বিসুখ এবং কানের গঠনগত কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে বাচ্চার শ্রবণক্ষমতার সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনায় নানা ত্রুটি দেখা যেতে পারে বললেন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সূচির মৈত্র। যে সব কারণে বাচ্চার জন্মগত শ্রবণক্ষমতার সমস্যা হতে পারে সেগুলি জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: ধূমপানে বাড়ছে করোনার ঝুঁকি, আশঙ্কা ক্লাস্টার সংক্রমণের, এড়াতে কী করবেন?
• যিনি মা হতে চলেছেন তাঁর যদি মাম্পস, রুবেলা, হারপিস, চিকেন পক্স বা টক্সোপ্লাসমোসিসের মতো ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ হয় তাহলে শিশুর জন্মগত হিয়ারিং লসের ঝুঁকি থাকে।
• গর্ভাবস্থায় হবু মা কোনও ওষুধ খেলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাচ্চার শ্রবণ সংক্রান্ত নার্ভ বা সম্পূর্ণ সিস্টেমের ত্রুটি থাকতে পারে।
• কান বা শ্রবণযন্ত্রের, বিশেষ করে অন্তর্কর্ণের কোনও গঠনগত ত্রুটি থাকলে জন্মগত বধিরতার সম্ভাবনা প্রবল।
• অডিটরি নার্ভের কাছে কোনও টিউমার থাকলে সমস্যা হয়।
• গর্ভাবস্থায় হবু মায়ের চোট লাগলে শিশুর শ্রবণযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন: কোন মাস্ক পরবেন? ক’দিন পরবেন? কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
কানে শুনতে অসুবিধা হয় কেন
• জন্মের পর অনেক কারণে শিশুর শ্রবণযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় বললেন সূচিরবাবু।
• নির্ধারিত সময়ের আগে ও স্বাভাবিকের থেকে কম ওজন নিয়ে জন্মালে বাচ্চার শ্রবণতন্ত্রের গঠনগত ত্রুটি থাকতে পারে।
• কোনও কারণে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং সময়মতো চিকিৎসা না হলে বাচ্চার কানে শোনার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
• শোনার সমস্যার সব থেকে চেনা কারণ ঠান্ডা লেগে একাধিক বার সর্দি কাশি। এর ফলে নাক ও কানের সংযোগকারি ইউস্টেশিয়ান টিউবে সর্দি জমে কানের শোনার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
• কানে কিছু ঢুকে গেলে ও তা বের না করা হলে শ্রবণযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
• মেনিনজাইটিস বা এই ধরনের কোনও সংক্রমণ হলে কান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
• কানে ময়লা জমে ও খোঁচাখুঁচি করতে গেলে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে শোনার ক্ষমতা ধীরে ধীরে লোপ পায়।
শোনার সমস্যার সব থেকে চেনা কারণ ঠান্ডা লেগে একাধিক বার সর্দি কাশি। ফাইল ছবি।
টেস্ট করানো দরকার
ডাকলে বা জোরে শব্দ হলে বাচ্চা চমকে উঠলে বা ভয় পেয়ে কাঁদলে সমস্যা নেই। কিন্তু যদি কোনও শব্দেই সে রিঅ্যাক্ট না করে, বুঝতে হবে সমস্যা আছে—বললেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। ১২ - ১৫ মাস বয়সে বাচ্চারা মা, বাবা, দাদা ইত্যাদি বলতে শেখে। না বলতে পারলে বুঝতে হবে, সমস্যা আছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই নিওনেটাল হিয়ারিং স্ক্রিনিং করা উচিৎ। জন্মের সময়ই এই পরীক্ষাগুলি করিয়ে নিলে ভাল হয়। এই পরীক্ষাগুলি যন্ত্রণাহীন এবং উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির সাহায্যে করা হয়। এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় করা যায়। সুতরাং কোনও সন্দেহ হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিৎ।
হিয়ারিং এড বা অন্য চিকিৎসা জরুরি
হিয়ারিং টেস্ট করে যদি দেখা যায়, শোনার সহায়ক নার্ভ অর্থাৎ ককলিয়ার নার্ভ দুর্বল, তবে ছোট বয়স থেকেই হিয়ারিং এডের সাহায্য নেওয়া উচিৎ। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ডিজিটাল হিয়ারিং এড কানে শোনার সব ঘাটতি দূর করতে পারে। ছোট বয়স থেকে হিয়ারিং এড নিলে বাচ্চারা চট করে মানিয়ে নিতে পারে। আর ভবিষ্যতে কোনও সমস্যাও হয় না। যদি কোনও বাচ্চার ককলিয়ার নার্ভ ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তাদের হিয়ারিং এড কাজ নাও করতে পারে, বললেন সূচির মৈত্র। এদের শ্রবণ ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় ককলিয়ার প্রতিস্থাপন। বিশেষ সার্জারির সাহায্যে ইনার ইয়ার বা অন্তর্কর্ণ ও মস্তিষ্কের মাঝামাঝি অঞ্চলে এই ককলিয়ার নামক অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করা হয়। এর পর কিছুদিন অডিটরি ট্রেনিং এর সাহায্যে তারা শুনতে ও কথা বলতে শেখে। এই সার্জারির পর অভিজ্ঞ অডিওলজিস্ট ও স্পিচ থেরাপিস্ট নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেন। সুতরাং, বাচ্চার শোনার অসুবিধে থাকলে করোনার ভয়ে বসে না থেকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy