ঢাকের আওয়াজ আর ধুনুচি নাচের মাঝে বাঙালি রান্না থেকে চাইনিজ, সব রকম থাকছে নিউ টাউনের ‘ওয়েস্টইন’-এ। ছবি সৌজন্য ‘দ্য ওয়েস্টইন’।
লুচি-ছোলার ডাল হোক বা বাসন্তী পোলাও, পুজোর ক’টা দিন ভালমন্দ না জুটলে উৎসব জমে না। তবে বাঙালিদের হঠাৎ এক বেলা মুখরোচক খাবার খেয়ে মোটেই মন মজে না। দিন পাঁচেকের পুজোয় অন্তত দশ বেলা তো রকমারি চাই-ই চাই। তবে এখন অত সময় কার যে সকাল থেকে বসে চার বেলা ভালমন্দ রান্না করবে!
আর তা ছাড়া, সময় বদলেছে। এখন আর উৎসব মানে শুধু বাঙালি রান্না নয়। বাঙালি ঘি-ভাত, মাংস, মাছের সঙ্গে পাল্লা দেয় চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল। এতশত কি আর ঘরে বসে রান্না করে ঘুরে বাড়েনোর সময় কমানো যায়? মনের কথা জানে রেস্তরাঁ-মহলও। তাই তো সব রকম পছন্দের কথা মাথায় রেখে ব্যবস্থাপনা করে ফেলেছে শহরের সব রেস্তরাঁ।
নিউ টাউনের ‘ওয়েস্টইন’ হোটেলে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর মহাভোজ। প্রাঙ্গণেই হচ্ছে পুজো। ঢাকের আওয়াজ আর ধুনুচি নাচের মাঝে বাঙালি রান্না থেকে চাইনিজ, সব রকম থাকছে সেখানে। বাইপাসের ধারের ‘জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট’-এ থাকছে পোস্তো মুরগি, আম-কাসুন্দি পনিরের মতো যেমন থাকছে, তেমন থাকছে কন্টিনেন্টাল এবং এশিয়ান নানা পদ।
ভরপুর বাঙালি বুফে খেতে চলে যাওয়া যায় ‘বার্বিকিউ নেশন’-এও। সারা বছরের মেনুর থেকে বেশ আলাদা পুজোর আয়োজন। সর্ষে ইলিশ, চিংড়ি মালাইকারি, রসগোল্লা, মিষ্টি দইয়ে একেবারে জমজমাট হতে পারে পুজো। এ সব রান্নায় যদি খানিকটা ঘরোয়া ছোঁয়া পেতে ইচ্ছা করে, তবে আবার ঘুরে আসা যায় বালিগঞ্জ চত্বরের ‘হোমলি জেস্ট’ থেকে। একেবারে বাড়িতে তৈরি স্বাদ সেখানে। দই পটল থেকে নারকেলের সন্দেশ— আছে সবই।
শুধু চেনা স্বাদে তো মন ভরে না। অচেনা কিছুও তো চেখে দেখতে ইচ্ছা করে পুজোর সময়। কালীঘাটের ‘মিক্স’ সে ব্যবস্থা করছে। সেখানে গেলে পুজোর আড্ডা জমতে পারে নিউ ইয়র্ক স্টাইল বিরিয়ানিতে। শুনে অবাক হচ্ছেন অনেকেই, তবে চেখে দেখলে মন্দ কী! সান্ধ্য আড্ডা জমতে পারে ‘কলকাতা লোকাল’-এও। পছন্দের পানীয়ের সঙ্গে বসা যায় মোচার চপ, ভেটকি পাতুরি, ফিশ কবিরাজির মতো বাঙালির অতি প্রিয় কিছু খাবার নিয়ে।
পাঁচ নম্বর সেক্টরের ‘দ্য ট্রাইব’ আবার নতুনত্ব এনেছে পুজোর পানীয়ে। চিলি ফিশ থেকে অক্টোপাস, সবের স্বাদই মিলবে সেখানকার পুজো স্পেশ্যাল পানীয়ে। কম চেনার স্বাদ পেতে যাওয়া যায় পার্ক স্ট্রিটের ‘এফিনগট’-এও। ম্যাঙ্গো হালাপিনো মুর্গ টিক্কা থেকে আম আদা পনির টিক্কা, পুজো উপলক্ষে রকমারি খাবারের ভাবনা রয়েছে তাদের। ‘হোপিপোলা’-এ আবার রকমারি ককটেলের বন্দোবস্ত হয়েছে। উৎসব স্পেশাল সে সব পানীয়ের সঙ্গে বিশেষ ধরনের গ্রিলড ভেটকি মন জয় করতে পারে এ সময়ে। ল্যাম্ব চপ, হার্ব রাইস, স্টিক, স্কিউয়ার্সের মতো পরিচিত কন্টিনেন্টাল খেতে আবার যাওয়া যেতে পারে ভবানীপুর চত্বরে। কর্নার কোর্টিয়ার্ড রেখেছে উৎসবের জন্য বিশেষ বিশেষ রান্না।
ইটালির রান্নাও এখন বাঙালিদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। পার্ক স্ট্রিট এলাকার সোরানো গেলে দেখা যাবে, পিৎজা-পাস্তার রোজের মেনুতেও এসেছে দুর্গাপুজোর ছোঁয়া। চেখে দেখা যাবে রকমারি পাস্তা, রিসোতো, পিৎজা। দক্ষিণ কলকাতার ‘ভেনেতো বার অ্যান্ড কিচেন’-এ গেলে আবার ইটালির রকমারি রান্না তো মিলবেই, সঙ্গে পাবেন ম্যাঙ্গো চিজকেকের মতো জিভে জল আনা মিষ্টি। বালিগঞ্জের ‘টু ডাই ফর’-এ থাকছে আবার পাস্তা নিয়ে পরীক্ষা। পোস্ত দিয়ে রান্না করা স্প্যাগেটি, লাল শাক দিয়ে রান্না করা রিসোতোর মতো নানা রকম রান্না চেখে দেখা যাবে সেখানে। ফিউশন মেজাজের পুজোর ভোজের আয়োজন থাকছে শেক্সপিয়র সরণির ‘দ্য সল্ট হাউস’-এও। মিসে চিকেন কবাব, নাচোস আর ঘুগনির চাট, পাঁচ ফোড়ন দিয়ে সব্জির স্ট্যু— থাকছে যে কত কী! আবার ফিউশন মেজাজের আড্ডার মাঝেই যদি ফিরে পেতে ইচ্ছা করে সে কালের পুজোর স্বাদ, তবে কথা রাখবে পার্ক স্ট্রিটের ‘এলএমএনও_কিউ’। পুজো উপলক্ষে মেনুতে ঢুকেছে মোচার মিনি কাটলেট, ডাব চিংড়ি, ভাপা দইয়ের মতো রকমারি বাঙালি রান্না।
আধুনিক মেজাজে পুজোর সাজের ছবি তুলবেন আর পান-ভোজনও ভাল হবে, এমন যদি থাকে ইচ্ছা তবে চলে যাওয়া যায় পার্ক স্ট্রিটের ‘হার্ড রক ক্যাফে’-তে। স্পাইসি চিকেন ড্রাম স্টিক, কর্ন মালাই টিক্কির মতো রকমারি স্টার্টারের সঙ্গেই সেখানে মন ছুঁইয়ে যাবে পুজোর গান-বাজনার আসর।
ক্যামাক স্ট্রিটের ‘মাঙ্কি বার’-ও সুন্দর সাজের ছবি ধরে রাখার জন্য আদর্শ স্থান। আকাশ ছোঁয়া বাড়ির কাচের জানলার সামনে দাঁড়িয়েই ধরা থাক পুজোর সাজ। আর আড্ডা জমুক কষা মাংস স্লাইডার, মোচার শিক কবাব, মুরগির কাটলেটের সঙ্গে।
আর সবচেয়ে আপন চেনা স্বাদে মজে পুজোর একটা বেলা কাটাতে চলে যাওয়া যায় যে কোনও ‘আমিনিয়া’-এ। বিরিয়ানি, রেজালা, কবাবের সঙ্গে উৎসব কাটানোর মতো আরামের আর কী বা আছে বাঙালির কাছে।
আর পুজো যদি কাটাতে হয় ঘরে বসে ভিড় থেকে দূরে, তার জন্যও ব্যবস্থা আছে। বাড়ি পৌঁছে যাবে উৎসবের ভালমন্দ। ‘ইডব্বা’ কিংবা ‘ইবোল’-এ শুধু বলে দিলেই হবে। চলে যাবে সোনা মুগের ডাল, পোলাও, ছানার ডালনা, কাতলা কালিয়া। আবার বিরকিয়ানি চাইলেও মিলবে রকমারি।
পুব থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র রয়েছে এমনই উৎসব স্পেশাল নানা ধরনের আয়োজন। সময় বুঝে আগে থেকে ঠিক করে নিলেই হল। যে মণ্ডপে যাবেন, তার আশপাশের কোনও এক রেস্তরাঁয় মনের মতো ভোজ সেরে নিন এই পুজোয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy