Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
food

‘নো কার্ব’-এ মারাত্মক ক্ষতি, কোন কার্বোহাইড্রেট খাবেন, কী পরিমাণে?

প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন মিনারেলস নিয়ে সবাই চিন্তা করেন। কিন্তু কার্বোহাইড্রেটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই।

‘নো কার্ব ডায়েট’ করতে চাইলে পরামর্শ নিন চিকিৎসকের। ফাইল ছবি।

‘নো কার্ব ডায়েট’ করতে চাইলে পরামর্শ নিন চিকিৎসকের। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ১০:০০
Share: Save:

রচেস্টার স্ট্রং হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রবার্ট কোলম্যান অ্যাটকিনস প্রথম বলেছিলেন কার্বোহাইড্রেট নাকি শুধু ওজন বাড়ায়। ১৯৭২ সালে তাঁর লেখা, অ্যাটকিনস ডায়েট রেভোলিউশন বইয়ে প্রকাশ করেন, কার্বোহাইড্রেটের একমাত্র কাজ ওজন বাড়ানো। তাই ডায়েট হওয়া উচিত ‘লো কার্ব’ এবং ‘নো কার্ব’।

পুষ্টি বিজ্ঞানীরা কিন্তু এ কথা মানেন না। বিশেষ করে ছোটদের শরীর গড়তে (স্ট্রাকচারাল গ্রোথ) কার্বোহাইড্রেট অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন মিনারেলস নিয়ে সবাই চিন্তা করেন। কিন্তু কার্বোহাইড্রেটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই।

অ্যাটকিন সাহেব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের এক পুষ্টি গবেষক অ্যালফ্রেড পেনিংটনের গবেষণার সূত্র ধরে ‘নো কার্ব ডায়েট’ নিয়ে জোর প্রচার শুরু করেন। তাঁরই সূত্র ধরে অনেকে কার্বোহাইড্রেটকে দৈনিক খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এই ডায়েট মানতে গিয়ে হোক বা অন্য কারণে ডাক্তার অ্যাটকিনের গুরুতর হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।

জটিল জৈব যৌগ কার্বোহাইড্রেটের মূল উপাদান কার্বন, হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন। আমাদের শরীরের জ্বালানি হল কার্বোহাইড্রেট। যত দামি গাড়িই হোক না কেন জ্বালানি না দিলে যেমন গাড়ি চলতে পারে না, তেমনই রোজকার ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট না থাকলে নানা অসুবিধা হয়। খাবারের এই উপাদান প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন বা অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের থেকে অনেক দ্রুত শক্তির জোগান দেয়, জানালেন ডায়েটিশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরী।

আরও পড়ুন: করোনা আবহে নখ নিয়ে এই বিষয়গুলি মানতেই হবে

চিনি হল সব থেকে সরল (সিমপ্লিয়েস্ট ফর্ম) কার্বোহাইড্রেট। আমরা যে চিনি (সুক্রোজ) খাই তা ছাড়াও বিভিন্ন মিষ্টি ফলে (ফ্রুক্টোজ) ও দুধে ল্যাক্টোজ নামে সরল কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। তবে চিনি কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য মোটেও ভাল নয়। স্টার্চ হল কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, পাওয়া যায় বিভিন্ন শস্য, সবজি, বিনস ও কড়াইশুঁটি থেকে।

চাল, ডাল, ভুট্টা, সয়াবিন ও কড়াইশুঁটি থেকে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। রেশমী জানালেন, এগুলি আমাদের শরীরের জন্যে অত্যন্ত দরকারি। এ ছাড়াও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট আছে গম, ওটস, জোয়ার, বাজরা ইত্যাদিতেও। তাই রোজকার খাবারে ভাত, রুটি, বা তার বদলে ওটস, জোয়ার, বাজরা বা কিনওয়ার মত কার্বোহাইড্রেট থাকা জরুরি।

আরও পড়ুন:কোভিডের উপসর্গে জ্বরের দোসর হাত-পা ব্যথা? কী খেয়াল রাখতেই হবে?​

রেশমী রায়চৌধুরী বললেন, প্রতিদিন আমাদের যতটা ক্যালোরি প্রয়োজন তার মধ্যে ৪৫% থেকে ৬৫ % কার্বোহাইড্রেট থেকে আসা উচিত। যার ২০০০ ক্যালোরির প্রয়োজন ৯০০ থেকে ১৩০০ ক্যালোরি আসা উচিত কার্বোহাইড্রেট থেকে। এর জন্যে ২৫০ গ্রাম থেকে ৩৫০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট রোজ খেতেই হবে।

আরও পড়ুন:নিউ নর্মালে সম্পর্ক ভাল রাখতে কী করবেন, কী করবেন না

ভাত, ডাল, সব্জি, ফল, বাদাম সবেতেই থাকে শরীরের শক্তির উৎস। ভাত, ডাল, রুটি, সব্জি আর ফল খেলে হজমের পর সেগুলি সরল শর্করায় রূপান্তরিত হয়ে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে গিয়ে শক্তির জোগান দেয়। এই শক্তি আমাদের রোজকার কাজকর্ম করতে সাহায্য করে।

কার্বোহাইড্রেট সরল শর্করায় রূপান্তরিত হয়ে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে শক্তির জোগান দেয়। ফাইল ছবি।

প্রতিদিন সকালের জলখাবার, মধ্যাহ্নভোজন ও রাতের খাবারে কার্বোহাইড্রেট থাকা দরকার। ‘ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড’ মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করে। কিন্তু সরল শর্করার অভাবে চিন্তাশক্তি কমে যেতে পারে। রেশমী রায়চৌধুরী এই প্রসঙ্গে জানান, ছোটদের জন্য সুষম খাবারের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কার্বোহাইড্রেট।

আরও পড়ুন:খুসকির সমস্যায় জেরবার, সমাধানে এই বিষয়গুলি মানছেন তো?​

ভাত, রুটির বদলে শুধু মাছ, চিকেন, মাটন বা প্রোটিন শেক খেলে চলবে না। উদাহরণ হিসেবে রেশমী জানান, গাছের গুঁড়ি মজবুত হলে তবেই ডালপালা মেলতে সুবিধা হয়। কার্বোহাইড্রেট শরীরের ভিতকে মজবুত করে বুদ্ধির বিকাশে সাহায্য করে। তাই শর্করার বদলে শুধু প্রোটিন, ভিটামিন বা মিনারেলস খেলে ব্যাপারটা দাঁড়ায় অনেকটা গাছের গুঁড়ি ঠিক ভাবে তৈরি না করে ডালপালাকে বাড়তে দেওয়া। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে গ্লুকোজের অভাবে মাথা ব্যথা করে। নুন চিনির জল খেলে কষ্ট কমে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি কোষকে ভাল রাখতে জরুরি এই কার্বোহাইড্রেট।

বাচ্চাদের জন্যে কার্বোহাইড্রেট বেশি দরকারি। অনেকেই মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে চিনি বা মিষ্টির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে। ফলে এক দিকে মনঃসংযোগের অভাব হয়, পড়া মনে রাখতে অসুবিধা হতে পারে। অন্য দিকে শরীর জুড়ে রাজ্যের ক্লান্তি নেমে আসে। কার্বোহাইড্রেট একেবারে বন্ধ করে দেওয়া ঠিক নয়। ভাত, রুটি, মুড়ি, খই, ওটস সবই খেতে হবে বদলে বদলে।

আরও পড়ুন:২০৩০ সালে বছরে ২.৫ কোটি মৃত্যু হতে পারে হার্ট অ্যাটাকে!

ময়দা দিয়ে তৈরি নুডলস বা পিৎজার বদলে আটার তৈরি খাবার অনেক বেশি উপযোগী। প্রত্যেক দিন একবার ভাত খেতে হবে। রেশমী রায়চৌধুরীর পরামর্শ, সবই খেতে হবে, কিন্তু তা যাতে মাত্রা না ছাড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অল্প ভাত, ২/৩ টে রুটি, ২/৩ চামচ চিনি খেলে উপকার মিলবে। অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে আলাদা কথা। কার্বোহাইড্রেটকে জীবন থেকে বাদ দিলে মুশকিলে পড়তে হবে, যেমন আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন অ্যাটকিন সাহেব। মেপে খান, সুস্থ থাকুন।

অন্য বিষয়গুলি:

Carbohydrate Protein Food Diet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy