জল্পনা সত্যি করে নাম বদলে গেল মঙ্গল শোভাযাত্রার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে বাংলা নববর্ষে ঢাকায় যে শোভাযাত্রা বার হয়, তার নতুন নাম হবে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। আজ, শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি একাধিক ইসলামি সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছিল, শোভাযাত্রায় আপত্তি নেই। কিন্তু ‘মঙ্গল’ নামকরণ চলবে না। তাদের কারও বক্তব্য, কোনও শোভাযাত্রা করলে মঙ্গল হবে, এমন বিশ্বাস বা ধারণা ইসলামের দিক থেকে গুনাহ। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের কোনও আয়োজনে ইসলাম অসমর্থিত কিছু থাকা যাবে না। মূর্তি-সহ ইসলাম অসমর্থিত সব কিছু বাদ দিতে হবে। আবার কারও দাবি, মঙ্গল শোভাযাত্রা আদতে হিন্দুদের জন্মাষ্টমীর ধর্মাচার। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় প্রতি বছরই তাদের দেবতা শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে সাড়ম্বরে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করে থাকেন। সর্বজনীনতার নামে সেটা সকলের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে, সামরিক শাসনের শিকল ভাঙার ডাক দিয়ে ১৯৮৯ সালের পয়লা বৈশাখ প্রথম এই শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল চারুকলা অনুষদ।শুরুতে নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। নব্বইয়ে নামকরণ হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পায় এই কর্মসূচি।
প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ সকালে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ দিয়ে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা। শাহবাগ এলাকা রূপ নেয় জনারণ্যে। ঢাকের তালে তালে সেই শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় হয়ে শিশুপার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে ফের শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।
এ বারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। আয়োজকেরা জানান, শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হবে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সেই সঙ্গে গত বছর জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ‘ফ্যাসিবাদকে’ বিদায় জানানো হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদের উত্থান যেন এই দেশে আর না হয়, সেই বার্তাও দেওয়া হবে।
শোভাযাত্রার মোটিফের মধ্যে থাকছে প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার স্বৈরাচারের দৈত্যাকৃতি প্রতিকৃতি, ১৬ ফুট উচ্চতার ইলিশ মাছ, সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী কাঠের বাঘ আর শান্তির দূত পায়রা। থাকছে হাতি, বাঘ, পেঁচা-সহ পশুপাখির মুখোশও। চারুকলা প্রাঙ্গণে এখন সে সব মুখোশ আর প্রতিকৃতির কাজ চলছে। এ ছাড়া চারুকলার সীমানা প্রাচীর সাজানো হচ্ছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শৌখিন হাঁড়ির নকশা দিয়ে। ফুল-পাখি-লতাপাতায় সাজানো হচ্ছে দেওয়াল।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)