হাতির মূর্তির নীচে কাপ হাতে চরণামৃত পানের অপেক্ষা। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।
তীর্থক্ষেত্র বৃন্দাবনের একটি ঘটনায় হতাশ যুক্তিবাদী ভারতীয়েরা! তাঁরা সরাসরিই বলতে শুরু করেছেন, ‘‘এ দেশে সংস্কারমুক্তির শিক্ষা কতটা জরুরি তা ওই মন্দিরের দৃশ্য এক ঝলক দেখলে রন্ধ্রে রন্ধ্রে বোঝা যাচ্ছে।’’ কেউ আবার চিন্তায় পড়েছেন বৃন্দাবনে তীর্থ করতে আসা পুণ্যার্থীদের স্বাস্থ্য নিয়ে। তাঁরা বলছেন, ‘‘এ ভাবে চললে তো দলে দলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বেন।’’
ঘটনার শুরু ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়ো থেকে। সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, মন্দিরের দেওয়ালে লাগানো হাতির মূর্তির গা বেয়ে গড়িয়ে পড়া জল খাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করছেন ভক্তেরা। কেউ হাতে ধরে সেই জল খাচ্ছেন। কেউ আবার কাপে ভরে চুমুক দিচ্ছেন। ভিডিয়োর দৃশ্যটি বৃন্দাবনের বাঁকে বিহারী মন্দিরের বলে দাবি। ভিডিয়োয় শোনা যাচ্ছে যাঁরা জল খাচ্ছেন তাঁদের উদ্দেশে কেউ বলছেন, ‘‘ওই জল খাবেন না। ওটা চরণামৃত নয়। মন্দিরের পুজারিরা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ওটা এসির জল।’’ কিন্তু তার পরও কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। পাত্র হাতে মন্দিরের হাতির মুখের নীচের হুড়োহুড়িতে বিন্দুমাত্র বিক্ষেপ লক্ষ করা যায় না। তাঁরা কাপে ‘এসির জল’ ভরেই চলেন এবং খেয়েও চলেন। কেউ কেউ ছিটিয়ে নেন মাথায়।
বৃন্দাবনের ওই মন্দিরের ওই ভিডিয়ো নিয়েই সমাজমাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঢেউ। ভিডিয়োটি যেমন অজস্র বার নানা মন্তব্য-সহ শেয়ার করা হয়েছে, তেমনই ভিডিয়োর নীচে জমা হয়েছে হাজার হাজার মন্তব্যের ভিড়। কেউ লিখেছেন, ‘‘এঁদের অবিলম্বে শিক্ষিত করা দরকার। চরণামৃত ভেবে এসির জল কী করে খেতে পারেন!’’ কেউ আবার লিখেছেন, ‘‘সবাই করছে বলেই করতে হবে। এদের এমনই কুসংস্কার যে, কোনও কাজ করার আগে নিজের যুক্তি, বুদ্ধিকে এক বারও কাজে লাগাবে না। ভারতীয়েরা কি এতটাই অশিক্ষিত!’’
লিভার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সংস্থা ‘দ্য লিভার ডক’-ও ভিডিয়োটি শেয়ার করে লিখেছে, ‘‘দয়া করে এসির জল খাবেন না। এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমে প্রচুর ছত্রাক বাসা বেঁধে থাকে। তার মধ্যে কিছু ছত্রাক অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর মধ্যে লেজিওনেয়ার্সের মতো কিছু ভয়ানক ব্যাক্টেরিয়াও রয়েছে। যা শরীরে প্রবেশ করলে মস্তিষ্ক সঞ্চালনে সমস্যা হতে পারে। এমনকি, স্নায়ুপেশিরও ক্ষতি করতে পারে।’’
তবে কেউ কেউ ওই কুসংস্কারে উস্কানি দেওয়ার দায় চাপিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষের উপরেও। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘কুসংস্কারের মাত্রা দেখলে অবাক হতে হয়। আরও অদ্ভুত বিষয় হল, কথাটা মন্দিরের পূজারিরা শুধু মুখে না বলে একটি লিখিত নোটিস তো ওখানে লাগিয়ে দিতে পারতেন। সেটা না করে মন্দির কর্তৃপক্ষও বিষয়টিতে উস্কানি দিচ্ছেন না কি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy