করোনা গ্রুপের কোভিড-১৯ নিয়েই আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিশ্বে। ছবি: শাটারস্টক।
চিনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস কী?
সুকুমার মুখোপাধ্যায়: করোনা প্রজাতির নানা ধরনের ভাইরাস আগেও জ্বর-সহ বিভিন্ন অসুখ সৃষ্টি করেছে। মূলত প্রাণীর শরীর থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। নভেল করোনাভাইরাসকে ২০১৯-এর ডিসেম্বরে প্রথম চিহ্নিত করা হয়। ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’, ‘করোনাভাইরাস-২’, বা ‘সার্স কোভ-২’ নামেও একে চিহ্নিত করা হচ্ছে। শ্বাসনালী ও ফুসফুসের পৌঁছে নিউমোনিয়া-সহ বিভিন্ন জটিল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আর এই রোগজীবাণু বাতাসবাহিত হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অমিতাভ নন্দী: আমি আরও একটা কথা বলতে চাই, ‘করোনাভাইরাস’ না বলে এই জীবাণুঘটিত অসুখকে ‘কোভিড-১৯’ বলা উচিত। এটি করোনা গ্রুপের একটি বিশেষ ভাইরাস।
এই রোগের উপসর্গ কী কী?
সুকুমার মুখোপাধ্যায়: শ্বাসের মাধ্যমে বাতাসবাহিত হয়ে শরীরে প্রবেশ করে বলে গলা ব্যথা ও সর্দির মাধ্যমে এই অসুখের সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সঙ্গে জ্বর তো থাকেই। অন্যান্য ভাইরাল ফিভারের মত কিছু কিছু উপসর্গও থাকতে পারে। মাথা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও সামগ্রিক ভাবে দুর্বল বোধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
আরও পড়ুন: এই সব ভুল ধারণা না ভাঙলে আপনি করোনার মোকাবিলা করতেই পারবেন না
অমিতাভ নন্দী: আর পাঁচটা ভাইরাল জ্বরের মতোই এর উপসর্গ দেখা যায়। তবে এই কোভিড-১৯ ভাইরাসকে আমরা মোটে আড়াই-তিন মাস চিনেছি। তাই স্থানকালপাত্র ভেদে যে অন্যান্য কোনও রোগ লক্ষণ থাকবে না, সে কথাও এখনই জোর দিয়ে বলার সময় আসেনি।
জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই কি ডাক্তার দেখানো উচিত?
সুকুমার মুখোপাধ্যায়: এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার। সাধারণ ভাইরাল ফিভার মানেই কিন্তু কোভিড-১৯ নয়। তবে আমার মতে যে কোনও অসুখ হলেই সেল্ফ মেডিকেশন না করে অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া ভাল। যদি কেউ বিদেশ থেকে ফেরেন বা এই অসুখ ছড়িয়ে পড়েছে এমন জায়গায় থাকেন তবে অবশ্যই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে নিজেকে আইসোলেট করে রাখা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অমিতাভ নন্দী: যে কোনও সংক্রামক অসুখে সাধারণ পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা উচিত। মুখে ভাল করে চাপা দিয়ে হাঁচি-কাশি, ভাল করে হাতে-মুখে সাবান দেওয়া, খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যাঁদের বারে বারে সংক্রমণ হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের কোনও ঝুঁকি না নিয়ে জ্বর-সর্দি হলে অবিলম্বে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
এই ভাইরাস কি এক জন মানুষের থেকে আর এক জনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে?
অমিতাভ নন্দী: হ্যাঁ, হাঁচি, কাশি, লালা বা সর্দির মাধ্যমে এই কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। বেশির ভাগ করোনা গ্রুপের ভাইরাসই এ ভাবে ছড়ায়। তবে যেহেতু এই নতুন ভাইরাসটিকে সবেমাত্র চিহ্নিত করা হয়েছে, এর নানান খুঁটিনাটি সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু জানা বাকি আছে।
আরও পড়ুন: কী ভাবে হাত-পা ধুলে করোনাভাইরাস থেকে অনেকটা দূরে থাকা যাবে?
মাস্ক ব্য়বহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই মুহুর্তে কত জন মানুষের এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে?
সুকুমার মুখোপাধ্যায়: প্রতি দিনই রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশ্বে এই পর্যন্ত ৯৫ হাজার ৪৯৬ জন আক্রান্ত। ৩ হাজার ২৮৬ মারা গেছেন, ৫৩ হাজার ৬৮৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো হলেও এই রোগ এত মারাত্মক হয়ে উঠছে কেন? আর বিশেষজ্ঞরা এত ভয়ই বা পাচ্ছেন কেন?
সুকুমার মুখোপাধ্যায়: কোভিড-১৯ নামের এই ভাইরাস শ্বাসনালী থেকে সোজা ফুসফুসের পৌঁছে গিয়ে মারাত্মক ধরণের নিউমোনিয়ার সৃষ্টি করে বলে এই জ্বর বিশেষজ্ঞদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। নিউমোনিয়ার পাশাপাশি আরও শারীরিক জটিলতা ডেকে আনতে পারে এই ভাইরাস। সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে মৃত্যুর হার ১ শতাংশেরও কম। অন্যদিকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর হার প্রায় ৩ শতাংশ।
অমিতাভ নন্দী: নতুন এই কোভিড-১৯ ভাইরাস কী ভাবে ও কতটা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে সে বিষয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনও বিশ বাঁও জলে। বিশেষ করে যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে কম, তাঁদের সংক্রমণ হলে তার গতিপ্রকৃতি বুঝে ওঠার আগেই রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে উঠতে পারে। সেই জন্যই বিশেষজ্ঞদের এত দুশ্চিন্তা।
কী ভাবে ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস? দেখে নিন।
নানা রকম করোনাভাইরাসের কথা শোনা যাচ্ছে, সেগুলো কী?
সুকুমার মুখোপাধ্যায়: ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’ বা ‘সার্স’, ‘মিডল ইস্টার্ন রেসপিরেটরি সিনড্রোম’ বা ‘মার্স’ এসবই হল করোনাভাইরাসের অন্যান্য প্রজাতি। এগুলি কোভিড-১৯ ভাইরাসের থেকেও বেশি ক্ষতিকর। অন্যান্য করোনাভাইরাস তুলনামূলক ভাবে কম ভোগায়।
অমিতাভ নন্দী: হ্যাঁ, প্রায় সাত-আট ধরনের করোনা গ্রুপের ভাইরাস আছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের চরিত্রের সঙ্গে এদের খুব একটা মিল নেই। নতুন এই ভাইরাস সম্পর্কে আরও অনেক গবেষণা দরকার। তাই সাবধানতা মেনে চলা উচিত।
অসুখটা কি সত্যিই পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে?
সুকুমার মুখোপাধ্যায়: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই ভাইরাল অসুখটিকে এখনও ‘প্যানডেমিক’ বা পৃথিবীব্যপী আতঙ্কের কারণ বলা যায় না। অনেক দেশে বেশ কিছু মানুষ এই রোগের শিকার ঠিকই কিন্তু পৃথিবী জুড়ে ছড়ায়নি। আতঙ্কিত না হলেও সাবধান হওয়া অবশ্যই উচিত। যে কোনও ভাইরাল অসুখ হলে যে সাধারণ নিয়ম মেনে চলা দরকার কোভিড-১৯ হলে সেই একই পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা দরকার। রোগ নিয়ে সতর্ক থাকুন কিন্তু আতঙ্কিত হবেন না।
সাক্ষাৎকার: সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy