কবির কল্পনায় প্রেয়সীর হাসিতে মুক্তো ঝরে, আধুনিক বিবেচনায় ঝকঝকে হাসি আত্মবিশ্বাসের পরিচায়ক, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অসমান দাঁত সুন্দর হাসির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। ফলত আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, দাঁত যদি এবড়োখেবড়ো হয়, তা হলে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার থেকে জন্মায় ক্যাভিটি। তা হলে অসমান দাঁত ঠিক করার উপায় কী? পথ দেখাচ্ছে অর্থোডন্টিক চিকিৎসা।
অর্থোডন্টিক চিকিৎসা কাকে বলে?
দাঁতের চিকিৎসায়, অসমান দাঁত ও চোয়ালের গঠনকে সমান করার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা হয় যে বিভাগে, তাকে বলা হয় অর্থোডন্টিক চিকিৎসা। দাঁতের চিকিৎসার এই ক্ষেত্র বেশ জনপ্রিয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা আরও উন্নত হয়ে উঠেছে।
কী ধরনের সমস্যা দেখা যায়?
* এক বা একাধিক উঁচু দাঁত।
* একাধিক দাঁত একে অপরের উপরে উঠে যাওয়া।
* দাঁতের মধ্যে অত্যন্ত বেশি ফাঁক।
* অসমান চোয়াল ও দাঁত, বিশেষ করে যে সমস্ত বাচ্চাদের মুখে আঙুল দেওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
ব্রেসিংয়ে সমস্যার সমাধান
অর্থোডন্টিক চিকিৎসার প্রাথমিক ধাপ হল ব্রেসিং। উপরের ও নীচের চোয়ালের দাঁতের সারিতে একাধিক মেটাল বা সেরামিক তার ও ক্লিপ লাগিয়ে দাঁত ও চোয়ালের গঠন ঠিক করার পদ্ধতিকে বলা হয় ব্রেসিং। সাধারণত, অসমান দাঁতের আনুষঙ্গিক সমস্যা কামড়ের হেরফের। ফলে অসমান দাঁত থাকলে, অনেকেই ঠিক ভাবে খাবার চিবোতে পারেন না। ব্রেসিং পদ্ধতি সুন্দর হাসির সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যারও সমাধান করে।
কত ধরনের ডেন্টাল ব্রেস?
সাধারণত পাঁচ ধরনের ব্রেস ব্যবহার করা হয় অসমান দাঁতের চিকিৎসায়। দাঁত ও চোয়ালের গঠন অনুসারে তৈরি হয় প্রত্যেকের ব্রেস। গোটা ব্রেসিং পদ্ধতি সম্পন্ন হতে তিন থেকে চারটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগে।
* প্রচলিত মেটাল ব্রেস: এই ধরনের ব্রেসের সঙ্গে মোটামুটি সকলেই পরিচিত। অন্যান্য ব্রেসের তুলনায় এটির দাম বেশ কম। উচ্চমানের স্টেনলেস স্টিলের তার ও ব্র্যাকেট বা ক্লিপের সাহায্যে এই ব্রেস দাঁত সমান করতে সাহায্য করে। তবে, এই ব্রেস ব্যবহারের অন্যতম অসুবিধে হল, কথা বলা বা হাসার সময়ে মুখ খুললেই তা খুব সহজে চোখে পড়ে।
* সেরামিক ব্রেস: মেটাল ব্রেসের পরিবর্তে অনেকেই সেরামিক ব্রেস ব্যবহার করেন। এতে তারটি স্টিলের হলেও ক্লিপটি হয় দাঁতের রঙের। ফলে সহজে বোঝা যায় না যে, দাঁতে ক্লিপ পরানো রয়েছে। কিন্তু ওরাল হাইজিন মেনে না চললে এই ব্রেস হলুদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
* লিঙ্গুয়াল ব্রেস: মেটাল ব্রেসের রকমফের বলা যায় লিঙ্গুয়াল ব্রেসকে। দাঁতের সামনের দিকের পরিবর্তে এটি বসানো হয় দাঁতের লিঙ্গুয়াল সাইড বা পিছন দিকে। এটির খরচ বেশি। এটি পরিষ্কার করাও বেশ ঝক্কির কাজ।
* অ্যালাইনার: এই পদ্ধতিতে মূলত স্বচ্ছ প্লাস্টিকের অ্যালাইনার ব্যবহার করা হয়। এই অ্যালাইনারগুলি অন্যান্য ব্রেসের মতো স্থায়ী নয়। সহজেই খুলে ফেলা যায়। ফলে ২-৩ সপ্তাহ অন্তর এগুলোকে বদলাতে হয়। এগুলি ব্যবহার করা সবচেয়ে সহজ। তবে দাঁতের জটিল সমস্যায় খুব একটা কাজে দেয় না। এটিও বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।
* সেলফ লাইগেটিং ব্রেস: প্রচলিত ব্রেসগুলি ইলাস্টিকের সাহায্যে তার ও ব্র্যাকেটগুলিকে দাঁতের উপরে বিন্যস্ত রাখা হয়। কিন্তু এই ব্রেসে কোনও রকম ইলাস্টিক ব্যবহার করা হয় না। স্লাইড মেকানিজ়মের সাহায্যে পুরো ব্রেসটি সুবিন্যস্ত থাকে।
চিকিৎসার সময়সীমা
দাঁত ও চোয়াল কতটা অসমান তার উপরে নির্ভর করে ঠিক কত সময় লাগবে। তবে সাধারণত দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে গঠন স্বাভাবিক হয়ে যায়। চিকিৎসার পরে স্থায়ী ব্রেসের জায়গায় একটি অস্থায়ী ব্রেস দেওয়া হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় এটিকে রিটেনার বলে। ছ’মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত এটি ব্যবহার করা যায়। সাধারণত যে কোনও বয়সেই দাঁতে ব্রেসিং করানো যায়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে দুধের দাঁত পড়ে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হয়।
খরচ কেমন?
ডেন্টাল ব্রেসের খরচ কেমন তা নির্ভর করে কী ধরনের ব্রেস ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কোথায় করানো হচ্ছে তার উপরে। অর্থোডন্ট্রি দাঁতের চিকিৎসার অন্যতম স্পেশালাইজেশনের জায়গা। সুতরাং চিকিৎসকের অভিজ্ঞতার উপরেও খরচ নির্ভর করে। সাধারণত, ৬০ থেকে ৮০০০০-এর মধ্যে মেটাল ব্রেসের খরচ। সেরামিক ব্রেসের খরচ গড়ে এক লাখ। লিঙ্গুয়াল ব্রেসের খরচ দেড় লক্ষ। এ ছাড়া অ্যালাইনারের দাম শুরু হচ্ছে ৫০০০০ থেকে।
চিকিৎসা চলাকালীন সতর্কতা
ব্রেস বসানোর পরে কয়েকদিন মুখের ভিতরে সামান্য ছড়ে যেতে পারে, ফলে জ্বালা ভাব বা অস্বস্তি হতে পারে। তবে কয়েক দিন পরে তা ঠিক হয়ে যায়। ব্রেস বসানোর পরে মুখের ভিতরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
কী করবেন?
* খাওয়ার পরে প্রতিবার ব্রাশ করতেই হবে। আর তা করতে হবে বিশেষ ধরনের অর্থোডন্টিক ব্রাশ ও ফ্লোরাইড টুথ পেস্ট দিয়ে। এ ছাড়া রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ফ্লোরাইড মাউথওয়াশও ব্যবহার করতে হবে।
* যদি আপনি খেলাধুলো করেন, তবে অবশ্যই মাউথ গার্ড ব্যবহার করবেন।
* কম চিনি আছে, এমন খাবার
ও পানীয় গ্রহণ করলে ভাল হয়।
* নিয়মিত চেক আপ জরুরি।
কী করবেন না?
* ক্যারামেল বা চিউইং গাম জাতীয় আঠালো খাবার একেবারে এড়িয়ে চলতে হবে।
* শক্ত খাবার বা যে খাবার খুব চিবিয়ে খেতে হয়, তা এই সময় না খাওয়াই ভাল। মাছের কাঁটা, মাংসের হাড় চিবিয়ে খেতে যাবেন না।
* দাঁত দিয়ে নখ কাটবেন না।
* দাঁত দিয়ে কোনও কিছু জোরে টেনে ছিঁড়তে যাবেন না।
* নিয়মিত ফ্লস করতে ভুলবেন না।
ছোটখাটো এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলেই দাঁত সুন্দর থাকবে।
শ্রেয়া ঠাকুর
তথ্য: ডা. পারমিতা গঙ্গোপাধ্যায়
ডা. অশোক সুরানা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy