Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ফের মৃত্যু এনসেফ্যালাইটিসে, মোকাবিলায় নাজেহাল রাজ্য

এনসেফ্যালাইটিসের মোকাবিলা করতে নেমে নাজেহাল প্রশাসন। সোমবার সারা দিন শিলিগুড়িতে কোনও শুয়োর ধরা পড়েনি। আর জলবাহিত জীবাণু নিয়ে প্রচারে নেমে খাস শিলিগুড়িতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সেই সঙ্গে এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে।

কোলে করেই রোগিণীকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছেন আত্মীয়রা।

কোলে করেই রোগিণীকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছেন আত্মীয়রা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:২০
Share: Save:

এনসেফ্যালাইটিসের মোকাবিলা করতে নেমে নাজেহাল প্রশাসন। সোমবার সারা দিন শিলিগুড়িতে কোনও শুয়োর ধরা পড়েনি। আর জলবাহিত জীবাণু নিয়ে প্রচারে নেমে খাস শিলিগুড়িতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সেই সঙ্গে এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ দিন সকালে শিলিগুড়িতে সচেতনতা বৃদ্ধির অভিযানে নামেন মন্ত্রী গৌতমবাবু। তাতে সামিল হন বিভিন্ন সরকারি দফতরের লোকজন। পুরসভার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রকাশনগর এলাকায় গিয়ে মন্ত্রী ব্লিচিং ছড়ানোর কাজের তদারকি করার সময় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। মন্ত্রী তখন এ সবের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরকে দায়ী করেন। এমনকী “কাউন্সিলরকে প্রশ্ন করুন, প্রয়োজনে তাঁকে ঘিরে জানতে চান” বলেও মন্তব্য করেন গৌতমবাবু। ওই এলাকার কাউন্সিলর সিপিএমের নেত্রী রাগিণী সিংহ। তিনি বিকেলে ভক্তিনগর থানায় গিয়ে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই ধরনের মন্তব্য করে জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। রাগিণীদেবী বলেন, “একজন মন্ত্রী এ ধরনের কথা বলছেন ভাবাই যায় না।” মন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, জনপ্রতিনিধির কাছে মানুষকে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, এর মধ্যে কোনও ভুল নেই।

সেই সঙ্গে এ দিনও বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এবং দফতরের শীর্ষ কর্তাদের অপসারণ দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি জানান, অনেকদিন ধরেই তাঁরা দাবি করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া। তিনি বলেন, “প্রতিমন্ত্রী হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী যাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তিনি যে ভাবে চলছেন, তাতে অস্বাস্থ্যকর ঘটনা ঘটেই চলেছে। এঁকে দিয়ে হবে না। অপসারণ চাই।” প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দাবি, মেডিক্যাল কলেজে যাঁরা লড়াই চালাচ্ছিলেন, তাঁদের উপরে কোপ মারা হচ্ছে। আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা কমিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছে।

আর এক চিকিৎসক-নেতা, কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া অবশ্য সরকারের প্রতি তুলনায় নরম মনোভাব দেখিয়েছেন। তাঁর কথায়, মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে মাথা ঠান্ডা করে সরকার কাজ করুক। সকলেরই উচিত সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা। একই সঙ্গে তিনি এ দিন বলেছেন, “ডাক্তারদের উপরে অহেতুক হম্বিতম্বি করে তাঁদের চাপে ফেলবেন না।”

ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং তথ্যমন্ত্রীও। প্রতিটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিয়মিত স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট পাঠান। তথ্য দফতরও নিয়মিত খবর পাঠায়। এর পরেও কী করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি এই ঘটনা জানতেন না! বিমানবাবুর প্রশ্ন, “লাল সতর্কতা জারি করে কী হবে? জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ির হাসপাতালে তো রক্ত পরীক্ষার কিটই ছিল না!” মন্ত্রী গৌতমবাবুর পাল্টা দাবি, ৩৪ বছরে কোনও জেলা হাসপাতালে এই কিটের ব্যবস্থা করার কথা বামেরাই বা ভাবেননি কেন?

উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিসে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেছেন এসইউসি-র নেতারা। সোমবার নবান্নে এসইউসি-র বিধায়ক তরুণ নস্করের নেতৃত্বে চারজনের এক প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করে এই দাবি করেন। চন্দ্রিমাদেবী অবশ্য বলেন, “পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। আমরা সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছি। রাজনীতি করার জন্য ওরা এতদিন পরে এসেছেন। আমরা সব কিছুই নজরে রেখেছি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE