মুখরোচক এবং স্বাস্থ্যকর। তাই স্ন্যাকস হিসেবে ছোলা খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরাও। কিন্তু সেখানেও ধন্দ। কোন ধরনের ছোলা বেশি উপকারী? জলে ভেজানো ছোলা না কি শুকনো খোলায় ভেজে নেওয়া ছোলা? ভাজা ও ভেজানো নিয়ে ধোঁয়াশা কাটিয়ে ফেলার আগে জেনে নিতে হবে কোন ধরনের ছোলার উপকারিতা কেমন।
ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিকর বলেই দাবি করেন পুষ্টিবিদেরা। কেউ মুচমুচে স্ন্যাকস হিসেবে ভেজে খেতে ভালবাসেন, কেউ বা রাতভর ভিজিয়ে রেখে সকালে খালিপেটে ছোলা মুখে পুরে নেন। প্রতিটি ধরনের ছোলারই নিজস্ব উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু পুষ্টির নিরিখে উপকারিতার পার্থক্য, অথবা কোনটি রোজের জন্য ভাল, কার জন্য কোনটি উপযুক্ত ইত্যাদি জেনে নেওয়া দরকার।
ভাজা ছোলার উপকারিতা:
ভরপুর প্রোটিন: শরীরচর্চার পরে দুপুরের খাবার বা স্ন্যাকস হিসেবে খেলে পেশি আরও মজবুত হয়।
দীর্ঘমেয়াদি: ফ্রিজ ছাড়াই সপ্তাহের পর সপ্তাহ সংরক্ষণ করা যায়।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: ফাইবারের পরিমাণ বেশি বলে পেট ভর্তি থাকে অনেক ক্ষণ। আর এর ফলে খিদের মুখে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়। তাতেই নিয়ন্ত্রণে থাকে ওজন।
শক্তির উৎস: দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি পায় ভাজা ছোলা খেলে।

প্রোটিন-সমৃদ্ধ মুচমুচে খাবার খেতে চাইলে ভাজা ছোলা উপযুক্ত। ছবি: সংগৃহীত।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: জটিল কার্বোহাইড্রেটগুলি ধীরে ধীরে শক্তি দিতে থাকে শরীরে, এর ফলে চট করে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে না।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে পরিপূর্ণ: ভেজে নেওয়ার ফলে কিছু অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
ভেজানো ছোলার উপকারিতা:
হজমে সাহায্য করে: ভেজানো ছোলা শরীরের হজমপ্রক্রিয়াকে উন্নত করে। গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভরপুর পুষ্টিগুণ: ভেজানো ছোলায় অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ থাকে। ফলে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বড় অবদান রয়েছে।

ভেজানোর ফলে ছোলায় থাকা এনজ়াইমগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ছবি: সংগৃহীত।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: ভেজানো ছোলায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা কম থাকে। ফলে ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য ছোলা উপযুক্ত।
অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে: সারা রাত ভেজানো হয় বলে শরীরে পুষ্টির শোষণ বেশি ভাল হয়। ভাল ব্যাক্টেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ভিটামিন সি এবং জ়িঙ্কের মাত্রা বেশি থাকে ভেজানো ছোলায়। তাই এই ছোলা খেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
হৃদরোগের জন্য উপকারী: প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং কম ফ্যাট থাকে বলে ভেজানো ছোলা খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমতে সাহায্য করে।
ভাজা ছোলা ও ভেজানো ছোলার তুলনামূলক আলোচনা
ভাজা ছোলা প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম মতো প্রয়োজনীয় খনিজে ভরপুর। এতে আর্দ্র ভাব কম বলে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি। শুকনো খোলায় ভাজা হলেও সেই প্রক্রিয়ার ফলে কিছু পরিমাণ ভিটামিন বেরিয়ে যায় ছোলা থেকে। কিন্তু ভাজা ছোলার মেয়াদ বেড়ে যায় এই প্রক্রিয়াতেই।
অন্য দিকে, ভেজানো ছোলায় ভিটামিনের পরিমাণ বেশি। পাশাপাশি এটি হজমে সাহায্য করে। ভেজানোর ফলে এতে থাকা এনজ়াইমগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে শরীরে পুষ্টির শোষণ বৃদ্ধি পায়। অন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য ভেজানো ছোলা উপযুক্ত। ভাজা ছোলার থেকে ভেজানো ছোলায় ক্যালোরির পরিমাণ কম।
ফলে, ভেজানো ছোলা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপকারিতার পরীক্ষায় কিছুটা বেশি নম্বর নিয়ে এগিয়ে রয়েছে। কারণ, এটি সহজে হজম করা যায়। সেই সঙ্গে বেশি ভিটামিন রয়েছে এতে। শরীরে পুষ্টি উপাদান শোষণ বেশি হয়। তবে, যাঁরা প্রোটিন-সমৃদ্ধ স্ন্যাকস চান, তাঁদের জন্য ভাজা ছোলাই উপযুক্ত। দুই ধরনের ছোলাতেই প্রচুর উপকারিতা। ডায়েটে দু’'টিই যোগ করা যায়। পুষ্টি এবং শক্তিবৃদ্ধির মধ্যে যখন আপনার যেটি প্রয়োজন, তখন সেটি বেছে নিলেই হল।