হরিদেবপুরে চলছে কালীপটকা ফাটানো। নিজস্ব চিত্র
কালীপুজো ও দীপাবলির পরে অনেক রোগীই কানে শোনার সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। এই তো এক জনকে দেখলাম যাঁর কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে শব্দবাজির কারণে। স্থায়ী বধিরতার শিকার হয়েও আসছেন অনেকে। কারণ, কানের কাছে খুব জোরে শব্দবাজি ফাটলে ‘ব্লাস্ট ইনজুরি’ হতে পারে। এমনকি, কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। কানের ভিতরে শ্রবণে সাহায্যকারী যে ছোট-ছোট হাড় রয়েছে, তারও ক্ষতি করে শব্দবাজি। অনেকের ক্ষেত্রে আবার দেখছি, হয়তো ধারাবাহিক ভাবে বেশ কয়েক দিন ধরে শব্দের তাণ্ডব সহ্য করতে হয়েছে। তার ফলে এখন কানের মধ্যে শুধুই ভোঁ-ভোঁ আওয়াজ শুনছেন তিনি। এর পাশাপাশি, মানসিক সমস্যাও শুরু হয়ে যায়। হাইপার টেনশন, হৃদ্রোগ, বুক ধড়ফড়— বাদ যায় না এসবও। এ ছাড়া পশুপাখিদের উপরে এর ক্ষতিকর প্রভাবের দিকটি তো রয়েইছে। কালীপুজো-দীপাবলির ক’টা দিন তো পশুপাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই পাল্টে যায়!
শব্দবাজি আদতে আমাদের দু’ভাবে ক্ষতি করে থাকে। প্রথমত, শ্রবণযন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দ্বিতীয়ত, শব্দবাজির ধোঁয়া থেকে নাক ও গলা জ্বালা হতে পারে। এ ছাড়া শ্বাসকষ্টের ব্যাপার তো রয়েছেই। তবে খোলা জায়গায় শব্দবাজি ফাটানো হলে তার কুপ্রভাব তুলনামূলক ভাবে কম হয়। কিন্তু কলকাতায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কোনও সরু রাস্তায় বা গলির মধ্যে ক্রমাগত শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ওই শব্দতরঙ্গ আশপাশের বাড়ির দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে সজোরে কানের উপর এসে পড়ে। তাতে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও বয়স্কদের।
তবে এ বার পুলিশ-প্রশাসনের তরফে শব্দবাজিবিরোধী প্রচার করা হলেও তা শেষ পর্যন্ত সেভাবে সফল হয়নি। বাজি ফেটে দু’জনের প্রাণহানি হয়েছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পুলিশ-প্রশাসনকে যেমন সক্রিয় হতে হবে, তেমনই যাঁরা বাজি কিনছেন, তাঁদেরও আরও অনেক সতর্ক হতে হবে। শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বাজি বিক্রিতে কড়াকড়ির পাশাপাশি, শব্দবাজি উৎপাদনের জায়গাতেও নিয়ন্ত্রণ দরকার।
শব্দবাজির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা না গেলে কিন্তু এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এমনিতেই কলকাতায় দূষণ আগের থেকে অনেক বেড়েছে। ফলে নিজেদের জন্য তো বটেই, আগামী প্রজন্মের জন্যেও কিন্তু শব্দবাজি ফাটানোর ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy