কংজাংটিভাইটিসের মতো এই উপসর্গকে বিজ্ঞানীরা ডাকছেন ‘পিঙ্ক আই’ নামে। ছবি: শাটারস্টক।
করোনা সংক্রমণের নিত্যনতুন উপসর্গের কথা সামনে আসছে। এ বার গবেষকদের দাবি, সে হানা দিতে পারে চোখেও। এতে চোখে ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ ঘটে চোখ লালচে হয়ে যাচ্ছে। কনজাংটিভাইটিসের মতো এই উপসর্গকে বিজ্ঞানীরা ডাকছেন ‘পিঙ্ক আই’ নামে।
‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধ অনুসারে, চিনের বিভিন্ন হাসপাতালে অনুসন্ধান চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন এক হাজার নিরানব্বই জন জটিল কোভিড রোগীর মধ্যে পিঙ্ক আই হয়েছে কেবল ৯ জনের। ‘দ্য জার্নাল অব দ্য আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অপথ্যালমোলজি’-তে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মোট কোভিড আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ১-৩ শতাংশের এই সমস্যা হয়। তবে গবেষকদেকর মতে, জ্বর, গলাব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট কিচ্ছু নেই, স্রেফ পিঙ্ক আই আছে— এমন হলে তা ততটা ভয়ের নয়। কিন্তু করোনা উপসর্গগুলির মধ্যে যে কোনও একটি বা দু’টি উপসর্গ থাকলে ও সঙ্গে পিঙ্ক আই থাকলে তা চিন্তার।
পিঙ্ক আই কী?
চোখে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ হয়ে যে কনজাংটিভাইটিস হয়, তাকেই বলে পিঙ্ক আই। চোখ ফুলে লাল হয়ে ওঠে। অন্যান্য উপসর্গ হিসেবে থাকে, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, চোখে নোংরা জমা, চোখ দিয়ে জল পড়া, চোখ কড়কড় করা, চোখ ও মাথায় যন্ত্রণা হওয়া। কেউ কেউ অস্পষ্ট দেখেন। কারও চোখের সামনে ঘুরে বেরায় কালো কালো বিন্দু।
আরও পড়ুন: প্রাণঘাতীও হতে পারে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, বলছেন বিজ্ঞানীরা
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিত চৌধুরী জানিয়েছেন, “এখন যে মরসুম, তাতে কনজাংটিভাইটিস প্রচুর হবে। অ্যালার্জি থেকেও হবে। তবে তাতে চোখ তেমন লাল হয় না বলে তাকে পিঙ্ক আই-এর মধ্যে ফেলা যায় না। যদিও মারাত্মক চুলকানি থাকে বলে চোখ রগড়ে রগড়ে অনেকে লাল করে ফেলেন। পিঙ্ক আই ছোঁয়াচেও বটে। তবে শুধু পিঙ্ক আই থাকলে কোভিডের উপসর্গ নয়। সঙ্গে জ্বর-জারি, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি়র কোনও একটি বা দু’টি না থাকলে চিন্তা করার মতো কিছু নেই।”
পিঙ্ক আইয়ের চিকিৎসা
সাধারন পিঙ্ক আই দু’-এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। কখনও আর একটু বেশি সময় লাগে। তবে সুমিতবাবুর মতে, “গত তিন-চার মাস ধরে যে ধরনের রোগ আসছে, তা সপ্তাহ তিনেকের আগে সারছে না। কিছু ওষুধপত্র দিতে হচ্ছে। কখনও লুব্রিকেটিং ড্রপ। কখনও অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ। কখনও বা অ্যান্টিভাইরাল মলম। তবে কোভিড রোগীরও পিঙ্ক আই হলে রোগের অন্যান্য চিকিৎসা হলেই এই সমস্যাও সেরে যায়। প্রয়োজন মতো একটু-আধটু ড্রপ দিতে হয়। এর জন্য চোখের কোনও স্থায়ী ক্ষতি হয় না।”
কোভিড-১৯-এর নিত্যনতুন উপসর্গ নিয়ে চিন্তিত গবেষকরা।
চোখ ও কোভিডের সম্পর্ক
কোভিডের সঙ্গে চোখের সম্পর্কটা একটু ঘোরালো। এ বিষয়ে প্রথম খবর পাওয়া যায় যখন পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ ওয়াং গুয়ানফা-র কোভিড ধরা পড়ে। পিকিংয়ের এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, চোখে সুরক্ষা চশমা না পরে কোভিড রোগীর চিকিৎসা করার জন্যই তিনি সংক্রামিত হয়েছেন বলে তাঁর ধারণা। কারণ অন্য কোনও উপসর্গ হওয়ার আগেই আক্রান্ত হয় তাঁর চোখ। বাঁ চোখে কড়কড়ে ভাব, লাল হয়ে ফুলে ওঠা ইত্যাদি হয়। প্রায় তার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় জ্বর, শ্বাসকষ্ট শুকনো কাশি। মার্কিনি মেডিসিন ও প্যাথোলজির অধ্যাপক জন ইভান্স প্যাটারসন জানান, ‘‘এ রকম হওয়া অসম্ভব নয় মোটেই। কোডিভ রোগীর হাঁচি-কাশির ড্রপলেট নাকে-মুখে ঢুকলে যেমন রোগ হতে পারে, হতে পারে সরাসরি চোখে ঢুকলেও।’’ নিউ ইয়র্কের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ স্টিফেন থমাস জানান, ‘‘হাতে যদি জীবাণু লেগে থাকে, সেই হাত চোখে লাগলে বিপদের আশঙ্কা অবশ্যই আছে। কাজেই হাত না ধুয়ে চোখে হাত দেবেন না। ও সুরক্ষা-চশমা না পরে ধারেকাছে যাবেন না কোভিড রোগীর।’’
আরও পড়ুন: হাতে-পায়ে র্যাশ, চুলকানি? সাবধান, করোনা নয় তো?
করোনা রোগীর চোখের জল কি সংক্রামক?
করোনা রোগীর যদি চোখে সংক্রমণ হয়, তাঁর চোখের জলে জীবাণু থাকতে পারে। ১১ জন কোভিড রোগী, যাঁদের পিঙ্ক আই হয়েছে, তাঁদের চোখের জল পরীক্ষা করে দেখা গেছে মাত্র দু-জনের চোখে জলে আছে জীবাণু। অর্থাৎ ১০০ জনের পিঙ্ক আই হলে তা থেকে ১৮ জন রোগ ছড়াতে পারবেন।
কিছু বিশেষ সাবধানতা
• বার বার হাত ধোওয়ার কোনও বিকল্প নেই।
• হাত না ধুয়ে নাকে-মুখে তো নয়ই, চোখেও হাত দেওয়া যাবে না। হাত ধুয়ে চোখে-মুখে হাত দিলে ফের হত ধুয়ে নিন।
• যাঁরা দিন-রাত মোবাইল বা কম্পিউটারে সময় কাটান, তাঁদের চোখের জল কমে গিয়ে দেখা দেয় ড্রাই আই সিনড্রোম। অন্যান্য উপসর্গের পাশাপাশি চোখে অস্বস্তি হয়, চোখ চুলকায়। এই সমস্যা সামলাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
• চোখে ড্রপ দেওয়ার আগে মনে করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
• কন্ট্যাক্ট লেন্স পরলে করোনার আশঙ্কা বাড়ে বলে জানা যায়নি। তবে দেখা গিয়েছে যে যাঁরা কন্ট্যাক্ট লেন্স পরেন তাঁরা আর পাঁচ জনের তুলনায় চোখে হাত দেন বেশি। কাজেই আপাতত চশমা পরে থাকাই ভাল, এতে চোখ একটু বেশি নিরাপদ থাকবে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy