Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
covid-19

করোনা আটকাতে এই সব নিয়ম পালন করছেন তো? নইলে বিপদের ঝুঁকি থাকছে

কঠোর নিয়মবিধি মেনেই করোনাকে ঠেকিয়ে রাখতে হবে। ছবি: শাটারস্টক।

কঠোর নিয়মবিধি মেনেই করোনাকে ঠেকিয়ে রাখতে হবে। ছবি: শাটারস্টক।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২০ ১৪:০৩
Share: Save:

লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে মানেই এই নয় যে কোভিড-১৯ ভাইরাস আমাদের বিদায় জানিয়ে ফিরে যাচ্ছে। রোদ, গরম, নিম্নচাপ বা ভ্যাপসা আবহাওয়া ভাইরাসকে বাড়তে দেয় না বলে অনেকে অনেক তত্ত্ব খাড়া করলেও আদতে এ সব তত্ত্ব ভিত্তিহীন বলেই দাবি ভায়রোলজিস্টদের। বিশেষ করে গোষ্ঠি সংক্রমণ শুরু হলে কিছু বাড়তি সুরক্ষা না নিলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা প্রতি পদে। তাই এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু নিয়মকে অভ্যাসে পরিণত করে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

বাজার, দোকান বা অফিস থেকে ফিরে পোশাক বদলান

লকডাউনের দিনে অনেক মানুষই কোভিড-১৯ এড়াতে দিন তিন-চারেকে এক বার বাজার করেন। অনেককে আবার নিয়ম করে অফিসেও যেতে হচ্ছে। সাবধানতা হিসেবে বাজার করে বা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে পোশাক ছেড়ে সম্পূর্ণ ভাবে স্নান সেরে ফেলার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

মোহালির ইসার (আইআইএসইআর)-এর হিউম্যান প্যাথোজেনিক ভাইরাসের সংক্রমণজনিত অসুখের গবেষক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘হাত -মুখ সাবান দিয়ে পরিষ্কার করার পাশাপাশি পোশাক পরিবর্তন করাও বাধ্যতামূলক ভাবে মেনে চলা উচিত। কারণ, এরোসোল অর্থাৎ বাতাসে ভাসমান কণা জামাকাপড়ে লেগে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার একটা ঝুঁকি থেকেই যায়।’’ যদিও কোভিড-১৯ ভাইরাস মশা মাছির মত উড়ে বেড়ায় না কিন্তু এরোডায়ানামিক্সের তত্ত্ব অনুযায়ী, এরোসলে কিছু ক্ষণ ( কম বেশি ৩০ মিনিট) ভাসমান অবস্থায় থাকে এই অতিমারি সৃষ্টিকারী ভাইরাস। তাই ভিড় জায়গায় গেলে বা দীর্ঘ ক্ষণ বাড়ির বাইরে থাকলে পোশাক পরিবর্তন করা বাধ্যতামূলক বলে মনে করেন ইন্দ্রনীলবাবু।

আরও পড়়ুন: লকডাউনে চিকিৎসক অমিল, হাতের কাছে মজুত রাখুন এ সব

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস জানালেন বাড়ির পাশের দোকানে কিছু কিনতে গেলে বা নিজের গাড়ি চালিয়ে কাজের জায়গায় গেলে, ফেরার পর পোশাক বাথরুমে আলাদা ভাবে রেখে দেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয় বার পরে তারপর কেচে নিলে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু যদি বাজার-দোকানে খুব ভিড় থাকে, কিংবা বাড়িতে বয়স্ক বা ক্রনিক অসুখে ভুগছেন এমন কেউ থাকেন তবে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে বাড়ি ফিরেই সাবান দিয়ে জামাকাপড় কেচে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

শরীরের বাইরে ভাইরাস কত ক্ষণ সক্রিয় থাকতে পারে?

‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা গিয়েছে, যে সহায়ক পরিবেশ পেলে নভেল করোনাভাইরাস মানুষের শরীরের বাইরে ৩ দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। বিশেষ করে ধাতুর তৈরি জিনিসে তিন দিন ও প্লাস্টিক এবং কাডবোর্ডে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত এদের সক্রিয় থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সুতি বা পোশাকের অন্যান্য কৃত্রিম তন্তুতে নভেল করোনাভাইরাসের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে এখনও সবটা জানা যায়নি। তবে করোনাভাইরাসের সমগোত্রীয় সার্স রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের নিয়ে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে, এটি কাগজ ও কাপড়ের উপর সর্বাধিক পাঁচ মিনিটের বেশি সক্রিয় থাকতে পারে না।

কোনও পার্সেল এলে স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে নিয়ে রোদ্দুরে বা আলাদা জায়গায় রেখে দিন।

অনলাইনের পার্সেল থেকেও সাবধান থাকতে হবে

অনেকেই লকডাউনের দিনে অনলাইনে দরকারি জিনিস আনাচ্ছেন। যে হারে আমাদের দেশে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে এই ব্যাপারেও কিছু সাবধানতা মেনে চলা উচিত। যদিও পার্সেল থেকে অসুখ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা এখনও পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি, কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন এই আরএনএ ভাইরাসটির চরিত্র সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি না, তাই সচেতন থাকাই একমাত্র পথ। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এর সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে এই এই ভাইরাস কার্ডবোর্ডে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। তাই বাড়িতে কোনও পার্সেল এলে স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে নিয়ে রোদ্দুরে বা আলাদা জায়গায় রেখে দিন। পরের দিন প্যাকেট খুললে ভাইরাসের সক্রিয়তা চলে যাবে বলে মনে করেন নভেল করোনার গবেষক ইন্দ্রনীলবাবু।

আরও পড়়ুন: লকডাউনে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন, তরতাজা মন তৈরি করবেন কী করে?

লন্ড্রিতে কাপড় কাচতে দেওয়া কতটা নিরাপদ?

লকডাউনের কারণে গৃহসহায়িকা নেই বলে অনেকে লন্ড্রিতে কাপড় কাচতে দিচ্ছেন। এর থেকেও কি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে? ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এরোসল বিজ্ঞানী লিনসে মার জানিয়েছেন, সাধারণত ডিটারজেন্ট দিয়ে পোশাক কাচা হয় ও গরম বাতাস দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া হয়। করোনাভাইরাস সাবান দিলেই ধ্বংস হয়ে যায়। তাই লন্ড্রিতে কাচলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ভয় থাকার কথা নয়। একই কথা বললেন অরিন্দমবাবুও। লন্ড্রি থেকে কাচিয়ে আনা পোশাক রোদে রেখে ব্যবহার করতে পরামর্শ দিলেন ইন্দ্রনীলবাবুও। তবে বাড়িতে কোনও বয়স্ক মানুষ, যাদের কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে এমন কোনও মানুষ থাকলে বা ক্যানসারের কেমোথেরাপি চলছে এমন কোনও সদস্য থাকলে বাইরে কাচতে দেবেন না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এটা বাড়তি সতর্কতা।

বাড়ির বাইরে বেশি ক্ষণের জন্য গেলে মাস্কের সঙ্গে শাওয়ার ক্যাপ বা টুপি পরুন।

চুল বা গোঁফ-দাড়ি থেকে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি কতটা?

নভেল করোনাভাইরাসের ছোঁয়াচ বাঁচাতে বাইরে থেকে ফিরে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে নেওয়া কি খুব প্রয়োজন, অথবা গোঁফ-দাড়িতে কি ভাইরাস সক্রিয় থাকে? এ রকম নানান প্রশ্ন অনেকের মনেই জমে আছে। বাড়ির বাইরে বেশি ক্ষণের জন্য গেলে মাস্কের সঙ্গে শাওয়ার ক্যাপ বা টুপি পরে থাকতে পারলে ভাল হয়। বিশেষ করে যাঁদের পথে ঘোরাঘুরি করে কাজ করতে হয় তাঁদের জন্যে ফেস শিল্ড ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। সাধারণ ভাবে সোসাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে চললে চুল বা দাড়ি থেকে ভাইরাস ছড়ানোর কথা নয়। কোনও কোভিড-১৯ আক্রান্ত যদি আপনার মাথার কাছে হেঁচে বা কেশে দেন তা হলে ঝুঁকি একটা থাকেই। কিন্তু রোজ বাইরে যেতে হলে যে চুল বা দাড়ি-গোঁফ থেকে ভাইরাস ছড়াবে এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই।

‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি’-র ‘স্কুল অব মেডিসিন’-এর অ্যান্ড্রু জানওয়াস্কি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, সচরাচর চুল বা দাড়ি মারফত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে না। চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসও এই বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ দেখছেন না।

অন্য বিষয়গুলি:

Covid-19 Coronavirus Lockdown Infection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy