বৃষ্টি ও অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা আবহাওয়ায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফাইল চিত্র।
প্রতি বছরই বৈশাখের মাঝামাঝি প্রবল গরমে আমাদের ঘেমেনেয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয়। করোনার বছরে গরমের বদলে মে মাসেও মেঘ-বৃষ্টি আর ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া। এতে আমরা বেশ খুশি। কিন্তু জানেন কি, একইসঙ্গে খুশি কোভিড-১৯ ভাইরাসরাও? তাই বাজারে দোকানে ভিড় বাড়ালে এবং দূরত্ব রক্ষার নিয়ম না মানলে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল, বললেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুকুমার মুখোপাধ্যায়।
সুনিশ্চিত প্রমাণ না থাকলেও দেখা গিয়েছে, ইউরোপ আমেরিকার যে সব অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম সেখানে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রকোপ তুলনামূলক ভাবে খুব বেশি। অন্য দিকে কড়া রোদ্দুর আর বেশি আপেক্ষিক আদ্রতায় কোভিড-১৯ ভাইরাস কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রকোপ কিছুটা কমে বলে মনে করেন সুকুমার মুখোপাধায়। তবে এসবই এখনও গবেষণার পর্যায়ে, অপেক্ষাকৃত নতুন ভাইরাসটির চরিত্র সম্পর্কে নানান তথ্য জানতে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে চলেছেন।
কলকাতা, হাওড়া-সহ বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে বৃষ্টি ও অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা আবহাওয়ায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সুকুমারবাবু। একই সঙ্গে আশা প্রকাশ করলেন যে বাজার দোকানে ভিড়ের কারণে যদি হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয় তাহলে ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে আমরাই এগিয়ে থাকব।
আরও পড়ুন: রেমডেসিভির কী? আর কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে এই ওষুধ
জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়িয়ে তুলে করোনা ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে মেঘলা আবহাওয়ায়। ফাইল চিত্র।
গরমের সময় নিম্নচাপের বৃষ্টিতে পরিবেশ ঠান্ডা হলে ভাইরাল সর্দি জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়, বললেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিষয়ক চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার।বিশেষ করে বাচ্চা ও বয়স্কদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। কোভিড-১৯ নতুন হলেও ভাইরাস তো। তাই এর ব্যতিক্রম হবে না। এ ছাড়া কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রকোপ কমাতে অনেক বেশি পরীক্ষা করা জরুরি বলে মনে করেন দীপঙ্করবাবু। সরকারি তরফে রেড জোন, অরেঞ্জ জোন বা গ্রিন জোন বলে কিছু জায়গাকে চিহ্নিত করে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এর ফল মারাত্মক হতে পারে বলে দীপঙ্করবাবু আশঙ্কা করছেন। তাঁর মতে,যে কোনও জোন ঘোষণা করার আগে সেই অঞ্চলের নিদেনপক্ষে ২৫ শতাংশ মানুষের কোভিড ১৯ পরীক্ষা করা আবশ্যক। শুধুমাত্র নিম্নচাপের বৃষ্টির কারণে কম গরমের জন্য নয়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হাসপাতাল ও ব্যাঙ্ক থেকেও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি প্রবল। কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের চিকিৎসার জন্য এয়ার কন্ডিশন আবশ্যক নয়। বরং যে সব হাসপাতালে সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশন আছে সেখানে কোনও মতেই করোনার চিকিৎসা হওয়া উচিত নয়। এর থেকে অন্য রোগীরা তো বটেই চিকিৎসা সহায়ক কর্মীদের মধ্যেও সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে।
দীপঙ্কর সরকারের অভিমত, শপিং মল বন্ধ হলেও ব্যাঙ্ক খোলা আছে। সেখানে যে অ্যাসিম্পটোম্যাটিক কোভিড রোগী যাচ্ছেন না তা জোর দিয়ে বলা যায় না। এই ব্যাপারেও সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কোভিড-১৯ ভাইরাসকে সক্রিয় রাখে, এর অর্থ ঠান্ডায় এই ভাইরাস বেশি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তুলনামূলক ভাবে প্যাচপ্যাচে গরম আর তীব্র রোদ্দুর হয়তো বা ভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: স্বাদ মিলবে, পাওয়া যাবে পুষ্টিগুণও, বিকেলের জলখাবারে রাখুন এ সব পদ
তবে সবার আগে পর্যাপ্ত পরীক্ষা করে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া জেনে নিতে হবে। সব থেকে ভাল হয়, আরোগ্য সেতু অ্যাপের সাহায্যে জেনে নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি থেকে গিয়ে স্যাম্পেল কালেকশন করে আনলে। তাহলেই একমাত্র কোভিড-১৯ আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য,বৃষ্টি হোক বা রোদ উঠুক, কোভিড-১৯-এর মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে শুধুমাত্র লকডাউন করে বসে থাকলে হবে না, প্রচুর টেস্ট করানো দরকার। তা যতদিন না হচ্ছে ততদিন গৃহবন্দি থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy