দাঁতের চিকিৎসায় অবহেলা নয় কোনওমতেই। ফাইল ছবি।
কোভিডের আতঙ্ক এমন-যে মুখ ও দাঁতের বড় সমস্যাতেও টুকটাক ওষুধ, মাউথওয়াশ, গরম সেঁক, লবঙ্গ-তেল ইত্যাদির সাহায্যে দিন কাটাচ্ছেন মানুষ। কারণ একটাই, ভাইরাস ঢোকে নাক-মুখ দিয়ে, আর সেই মুখেই যদি যন্ত্রপাতি দিয়ে খোঁচাখুঁচি হয়, ডাক্তার-নার্স ঝুঁকে থাকেন মুখের উপর, ভাইরাস ঢোকার আশঙ্কা তো প্রতিপদে!
ওরাল ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জেন শিবালিক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘'সে ভয় একেবারেই নেই। ডাক্তার-নার্স, সবাই আজকাল দুটো করে মাস্ক ও ফেস শিল্ড পরে কাজ করেন। কারণ চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর মুখে জল স্প্রে করতে হয় অনেক সময়ই। সেই জল লালার সঙ্গে মিশে অ্যারোসল তৈরি করে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রোগীর যদি করোনা থাকে, ডাক্তার-নার্সের বিপদ, কিন্তু বিপরীত দিকটির সম্ভাবনা নেই। যন্ত্রপাতিও জীবাণুমুক্ত করা হয় যথানিয়মে। কাজেই কোভিডের ভয় তত নেই। কিন্তু যে রোগ চেপে রাখছেন, তা থেকে বিপদ হতে পারে। কাজেই ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলুন। কীভাবে চলতে হবে, তিনি বলে দেবেন। কখন অপেক্ষা করা যাবে আর কখন যাবে না, তা-ও জানিয়ে দেবেন তিনি।’'
রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টে দেরি করবেন না। ফাইল ছবি।
ফোনে তাৎক্ষণিক সমাধান
• খুব দাঁত ব্যথা হলে প্যারাসিটামল ৬৫০ খান। ক্লোরহেক্সিডিন মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন দিনে দু-বার।
• রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করার পর দাঁতে যে ক্রাউন বসানো হয়, তা ঢিলে হয়ে গেলে খুলে ফেরার চেষ্টা করুন। না হলে গলায় চলে যেতে পারে। ওই দাঁতে খাবার চেবাবেন না।
• নকল দাঁত ঢিলে হয়ে গেলে খুলে ক্লোরহেক্সিডিন মাউথওয়াশে ডুবিয়ে রাখুন। না হলে খোঁচা লেগে গাল কাটতে পারে। এরকম ক্ষত থেকেই পরে ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ে।
• যাঁরা ব্র্যাকেট পরেন, বেশ কিছুদিন ডাক্তার না দেখালে তাঁদেরও গাল-মাড়ি কাটে। তখন মেডিক্যাল ওয়্যাক্স লাগিয়ে অবস্থা সামলাতে হয়।
• মুখে ঘা হলে বিড়ি-সিগারেট-গুটখা-মৌড়ির-সুপুরি, ঝাল, মশলা খাওয়া বন্ধ করুন।
• মুখের ভেতরের পুরনো সেলাইয়ে ব্যথা হলে ক্লোরহেক্সিডিন মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন দিনে দু-বার। অ্যান্টিসেপটিক মলম লাগান ডাক্তারের কথামতো।
• মাড়ি ফুলে গেলেও ক্লোরহেক্সিডিন মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন দিনে।
• এরপর সময়মতো ডাক্তার দেখিয়ে নিন। না হলে বিপদ হতে পারে।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে দাঁতের চিকিৎসায় অবহেলা? শহরের পরিষেবা নিয়ে কী বলছেন চিকিৎসকরা
দেরির বিপদ
• দাঁতে সংক্রমণের ব্যথা মাউথওয়াশ ও ওষুধে কমে গেলেও চিকিৎসা করান। না হলে পরে সেই দাঁত তুলে ফেলতে হতে পারে। ক্ষতি হতে পারে দু-পাশের দাঁতেও। রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট হয়েছে যে দাঁতে, তার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
• মুখে ঘা হলে দিনের পর দিন ভিটামিন খেয়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে বিপদ আছে। বিশেষ করে যাঁদের তামাক বা অন্য কিছু চেবানোর অভ্যাস আছে। দাঁতের খোঁচায় মুখে ঘা হলেও এক ব্যাপার। ডাক্তারের কাছে গিয়ে দাঁতটা ঘষিয়ে নিন।
• মাড়ি ফুলে ব্যথা হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। ব্যথা কমে গেলেও রোগের কারণ খুঁজে চিকিৎসা করতে হবে।
আরও পড়ুন: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই ভুল করতে বাধ্য করে, এই অসুখে ভুগেছিলেন মাইকেল জ্যাকসনও
আপৎকালীন সমস্যা
• দাঁত থেকে সমানে রক্ত পড়লে রক্ত বন্ধ করার ওষুধ খেয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান। চেম্বার খোলা না পেলে হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে যেতে হতে পারে।
• দাঁতের নীচের পাটিতে সংক্রমণের রেশে সেদিকের গলা ফুলতে শুরু করলে প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে। দ্রুত ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জেনের শরণাপন্ন হন।
• আঘাত লেগে দাঁত ভাঙলে ভাঙা দাঁত ঠান্ডা দুধে ডুবিয়ে খুব তাড়াতাড়ি সার্জেনের কাছে গেলে দাঁত আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন:‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?
চোয়াল, নাক, চোখের তলার হাড় ভাঙলে দ্রুত অপারেশন করে না নিলে ভাঙা হাড় বাঁকা হয়ে জুড়তে পারে। আবার না-ও জুড়তে পারে। ফলে মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে জীবনের মতো। কখনও মেনিনজাইটিস (মস্তিষ্কের পর্দায় সংক্রমণ) হতে পারে। চোখের তলায় ভাঙা হাড় সময়মতো ঠিক না করলে ‘ডাবল ভিশন’ হয় অনেক সময়। ফলে সমস্যা হওয়ামাত্র ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জেনের পরামর্শ নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy