Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Health

Covid: করোনা রোগীর খোঁজ নিচ্ছেন? যিনি দেখাশোনা করছেন, তাঁরও নিচ্ছেন তো?

বাড়িতে করোনা রোগীর দেখাশোনা করছেন যিনি, তাঁর খোঁজ নিতে অনেকেই ভুলে যান। অথচ তাঁর মানসিক চাপও কোনও অংশে কম নয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত

পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২১ ১৬:২১
Share: Save:

বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা দু’জনেই করোনা আক্রান্ত। মেয়ে একা তাঁদের দেখাশোনা করছেন। কখনও গরম জল, কখনও রান্না আবার কখনও অক্সিজেনের মাত্রা মাপার কথা মনে করিয়ে দেওয়া— সারা দিনে এক মুহূর্তও বিশ্রাম নেই মেয়ের। অথচ আত্মীয়েরা ফোন করে কেউ একবারও জানতে চাইছেন না তিনি কেমন আছেন, তাঁর কোনও সাহায্যের প্রয়োজন আছে কি না।

যাঁরা করোনারোগীর দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের শারীরিক পরিশ্রম যেমন, মানসিক চাপ ততটাই। রোগীকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব তাঁদের উপরই। ঠিক সময়ে পাল্স রেট, অক্সিজেনের মাত্রা মাপা হচ্ছে কিনা, ওষুধ পড়ছে কি না, পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন কিনা, গলা ব্যাথা বা কাশির জন্য গরম জল করা, যাবতীয় কর্তব্য কেয়ারগিভারের। তার পরে বাড়তি কাজ, ঘরের প্রত্যেকটা জিনিস স্যানিটাইজ করা, ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভ্‌স, রোগীর ব্যবহার করা কাগজের প্লেটের মতো আবর্জনা আলাদা করে স্যানিটাইজ করে ঠিক জায়গায় ফেলা। তাই শারীরিক পরিশ্রমের অন্ত নেই। মাথায় রাখতে হবে, কেয়ারগিভারও ঘরবন্দি। তাঁর উপায় নেই বাড়ির বাইরে গিয়ে বাজারহাট করার। তাই জরুরি জিনিস হাতের কাছে জোগাড় করার দায়িত্বও তাঁর ঘাড়ে পড়ে। তার উপরে যদি তাঁর পেশাগত ব্যস্ততা থাকে, তা হলে সব মিলিয়ে শরীর-মন দুইয়ের উপরেও অত্যন্ত চাপ সৃষ্টি হয় এই সময়।

অথচ আত্মীয়-পরিজনেরা ফোন করে কোভিড রোগীর খোঁজ নিয়ে দায়িত্ব সেরে ফেলেন। কিছু জরুরি জিনিস পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা না করে কয়েকটি নম্বর ফরওয়ার্ড করেই তাঁরা দায়িত্ব ঝেরে ফেলেন। কিন্তু তাতে কোনও রকম সাহায্য হয় না। একজন কোভিডরোগীর বাড়িতে ফোন করলে কী করণীয়, তা বুঝে নেওয়া আবশ্যিক।

১। কোভিডরোগীকে নিয়ে সকলেরই দুশ্চিন্তা বেশি। কিন্তু যিনি দেখভাল করছেন, ফোন করে তিনি কেমন আছেন জানতে চান।

২। নিয়মিত ফোন করে খোঁজ নিন। কেয়ারগিভারের কী কী দায়িত্ব, সেটা মনে করানোর প্রয়োজন নেই। সেগুলো তিনি ভালই জানেন। তাঁর সঙ্গে এমনি গল্প করুন। তাঁর কিছু বলার থাকলে শুনুন।

৩। কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে তাঁকে শুধু ফোন নম্বর ফরওয়ার্ড করবেন না। কিছু নম্বরে আপনি ফোন করে যোগাযোগ করিয়ে দিতে সাহায্য করুন।

৪। বা়ড়িতে রান্না করা খাবার বা অন্য জরুরি জিনিস পাঠাচ্ছেন? খুবই ভাল। কিন্তু কিছু পাঠানোর আগে জানতে চান, কোন জিনিসটা তাঁদের প্রয়োজন। অহেতুক অপ্রয়োজনীয় জিনিস পাঠিয়ে বিড়ম্বনা বাড়াবেন না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

যিনি রোগীর দেখাশোনা করেন, তাঁদের শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি মনের উপরে যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি হয়। যাকে বলা হয় ‘কেয়ারগিভার্স বার্ডেন’। মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে জানালেন, যে কোনও মানুষেরই বাড়ির লোক যখন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকেন, তখন তাঁর জীবনও নানা ভাবে ওলোট-পালোট হয়ে যায়। হয়তো কোভিডের মতো অসুখের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। কারণ অনেক সময়েই দেখা যায়, যিনি কেয়ারগিভার, তাঁর নিজেরও কিছু মৃদু উপসর্গ রয়েছে। তা-ও যিনি বেশি অসুস্থ, তাঁকে দেখতে হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে মানসিক চাপ বেশি পড়ে কারণ রোগীর দেখাশোনা করার পাশাপাশি একটা সামাজিক স্টিগমার সঙ্গে তাঁকে সারাক্ষণ লড়তে হয়। অনেকেই হয়তো খোঁজ নিতে ফোন করছেন, কিন্তু তাঁদের মনের আসল ভয়, কত দিন আগে এই মানুষটার সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়েছিল। নানা রকম দুশ্চিন্তা নিয়ে যখন কারও দেখাশোনা করতে হয়, তখন অনেক বেশি ক্লান্ত লাগে। পাশাপাশি কাউকে সে ভাবে পাশে না পাওয়ার অসহায়তাও ঘিরে ধরে। তাই কেয়ারগিভারেরও নিজের যত্ন নেওয়ার জন্য কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে।

১। যদি ক্লান্ত লাগে, তা হলে সেটা নিয়ে অপরাধবোধে ভুগবেন না। মনে রাখতে হবে, প্রিয়তম মানুষের দেখাশোনা করতে গিয়েও হাঁপিয়ে উঠতে পারেন। কেন সেই কাজে ক্লান্তি আসছে, সেটা নিয়ে কোনও খারাপ লাগার জায়গা তৈরি না হতে দেওয়াই ভাল।

২। শরীর-মন ক্লান্ত লাগলে, কিছুটা সময় কেয়ারগিভারের ভূমিকা থেকে বিরতি নিয়ে নিজের মতো সময় কাটানোই যায়। তাতে অপরাধবোধে ভোগার কোনও কারণ নেই।

৩। মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার জন্য একেক জন একেক রকম উপায় বার করে নেন। এই ‘কোপিং স্ট্র্যাটেজি’ যা-ই হোক, সেটা নিয়ে নিজেকে দোষারোপ করার প্রয়োজন নেই।

৪। যিনি কেয়ারগিভার, তাঁকেও নিভৃতবাসে থাকতে হচ্ছে। তাই সে সময়ে যেন ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে ফোনে অন্তত যোগাযোগ থাকে। একটু কথা বলা, একটু গল্প করা, নিজের মনের ভাল লাগা-না লাগার কথা জানানো— এগুলো সবই মন ভাল থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

৫। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা এমনই যে, অনেক সময় দেখা যায় বা়ড়িতে দু’জন অসুস্থ হলে কেয়ারগিভারের ভূমিকা মেয়েদেরই পালন করতে হচ্ছে। ছেলেরা হয়তো সহজে বাড়ির কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারছেন। তাই এই লিঙ্গ বৈষম্যের বাড়তি চাপও পড়ছে যিনি দেখাশোনা করছেন তাঁর উপরে।

৬। যে কেয়ারগিভারদের অফিসের কাজ সামলে রোগীর দেখাশোনা করতে হচ্ছে, তাঁদের ক্ষেত্রে একটু বাড়তি পরিকল্পনার প্রয়োজন। সকাল ১১টায় একটা মিটিং থাকলে শেষ মুহূর্তে কোনও রকমে মিটিংয়ে ঢুকে গেলে চলবে না। কেয়ারগিভারের ভূমিকা থেকে একটা ছোট্ট বিরতি নিয়ে তাঁকে কাজের জগতে প্রবেশ করার মতো মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োজনে সহকর্মীদের সাহায্য নিতে হবে। কোনও সময়ে যদি কাজে উপস্থিত না থাকতে পারেন, তা হলে যেন তাঁরা সামলে দেন, সেই বোঝাপড়ার প্রয়োজন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy